শিল্প ও সংস্কৃতি | The Abima Times 24 News https://theabimatimes24news.com Mon, 13 Feb 2023 15:07:09 +0000 en-US hourly 1 https://wordpress.org/?v=6.7 আ.চিক শিল্পী সালাসের চিৎকার, ‘ইউরেকা!’ ‘ইউ‌রেকা!’ https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%86-%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa%e0%a7%80-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a7%8e%e0%a6%95/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%2586-%25e0%25a6%259a%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%25b6%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25b2%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25aa%25e0%25a7%2580-%25e0%25a6%25b8%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b2%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b8%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%259a%25e0%25a6%25bf%25e0%25a7%258e%25e0%25a6%2595 Sat, 11 Feb 2023 23:48:53 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=4431 The post আ.চিক শিল্পী সালাসের চিৎকার, ‘ইউরেকা!’ ‘ইউ‌রেকা!’ appeared first on The Abima Times 24 News.

আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: কালাচাঁদপুরের আনাচে-কানাচে একা দাঁ‌ড়িয়ে। নীরবে হা‌রিয়ে যাওয়া কতক্ষণ যে, সে সময়ের ইয়ত্তা নেই। ভবের পাগল কে এই ভাবুক? ফুল-ফল, গাছপালা, লতাপাতার মতোই সজীব; মনকে প্রকৃ‌তির অবয়ব করতেই যার সাধনা? গারো শিল্পী সালাস মান‌খি‌নের কথা! একাধা‌রে যি‌নি চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং রেরে ব্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য (দামা)।  ফুল-ফল, গাছপালা, লতাপাতার মতোই সজীব; মনকে প্রকৃ‌তির […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post আ.চিক শিল্পী সালাসের চিৎকার, ‘ইউরেকা!’ ‘ইউ‌রেকা!’ appeared first on The Abima Times 24 News.

আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: কালাচাঁদপুরের আনাচে-কানাচে একা দাঁ‌ড়িয়ে। নীরবে হা‌রিয়ে যাওয়া কতক্ষণ যে, সে সময়ের ইয়ত্তা নেই। ভবের পাগল কে এই ভাবুক? ফুল-ফল, গাছপালা, লতাপাতার মতোই সজীব; মনকে প্রকৃ‌তির অবয়ব করতেই যার সাধনা? গারো শিল্পী সালাস মান‌খি‌নের কথা! একাধা‌রে যি‌নি চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং রেরে ব্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য (দামা)।  ফুল-ফল, গাছপালা, লতাপাতার মতোই সজীব; মনকে প্রকৃ‌তির অবয়ব করতেই যার নির‌বচ্ছিন্ন সাধনা। ‌প্রকৃ‌তি ও জীব‌বৈ‌চিত্রের প্রেমিক প্রকৃ‌তি নিয়ে খেলায় বিভোর সালাস দুঃখ-কষ্টের বেদুইন জীবনকে আ‌লিঙ্গন ক‌রলেও একবারও ভাবেন‌নি তি‌নি কখনও বিয়ে করবেন। কিন্তু যে প্রকৃ‌তি‌কে ভালোবেসে সালাস হয়েছে বেদুইন শিল্পী সেই প্রকৃ‌তিই যেনো তাঁর চিত্রশিল্পে, ক্যা‌রিক্যাচা‌রে, ভাস্ক‌র্যে বারবার সং‌কেত পা‌ঠাতো পং‌দেবী‌র। মাথায় দ‌•‌মি, কখনো খোঁপায় পং গুঁজা চিত্রশিল্পের সেই রূপসী ললনাই আজ যেনো মূর্ত বাস্তব! সালাস কোনো স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই যেনো বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের মতো শিল্পীর চিৎকার ‘ইউ‌রেকা! ইউ‌রেকা! ইউ‌রেকা!’ স‌লিড, প‌রিষ্কার বাক্যে বিশ্বাসী শিল্পীর জীবনে ইউরেকাই ইউরেকাই হয়ে এলো।

শিল্পী সালাস মান‌খিন ও ইউরেকা রখোর পূণ্য বিবাহ অনুষ্ঠান

১০‌ফেব্রুয়া‌রি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে এক শুভ লগ্নে সম্পন্ন হলো শিল্পী সালাস মান‌খিন ও ইউরেকা রখোর পূণ্য বিবাহ অনুষ্ঠান। কনের বা‌ড়ি‌তে অ‌ভি‌ষেক ঘটলো রখো প‌রিবারের অ‌ভিভাবক এবং তত্ত্বাবধায়কের। ‌‌মেননেং নদীর অববা‌হিকায় ছোট্ট গ্রাম সংড়া। ময়মন‌সিং‌হের হালুয়া‌ঘা‌ট উপজেলাধীন যে গ্রামের পটে ইউরেকা রখোর শৈশব‌চিত্র। সালাস টাঙ্গাইল মধুপুরের আমলীতলা গ্রামের সন্তান।

সালেস মানখিন

আ.চিক শিল্পী সালাস মান‌খিন

বিয়ের দিন সমতল গারোদের ঐ‌তিহ্যবাহী পোশাকে সুস‌জ্জিত ছি‌লেন এই আ•‌চিক শিল্পী। কনের পোশাকে ছিল আগাগোড়া ঐ‌তিহ্যের ছাপ। কনের পোশাক তৈ‌রি করেছেন আরেক কা‌রিগর সু‌দিনা রেমা।

 শিল্পী সালাস মান‌খিনের চিত্র কর্ম ও ভাস্কর্য

বিয়ের মঞ্চ থেকে শুরু ক‌রে বিয়ের তোরণ, বেদী সর্বত্র ছিল ঐ‌তিহ্যের গাঢ় প্রকাশ। দীশন অন্তু রি‌ছিল, পরাগ রি‌ছিল, লিয়াং রি‌ছিল, বিমল বেঞ্জা‌মিন নক‌রেক, ওয়া‌রি নকরেক, পীলান্ত রখো, সু‌বিট রখো (গুরুত্বপূর্ণ সাবেক ছাত্রনেতা)সহ অনেক আ•‌চিক খ্যা‌তিমানদের মিলন‌ মেলা হয়ে ওঠে সালাসের হাতে গাগুঁরি পং ধরার এই প‌বিত্র দিনে।

বর্তমা‌নে সালাস কাজ করছেন ময়মন‌সিং‌হের গারো মিউ‌জিয়াম ‘আমা আ•‌চিক রাসং’-এর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে। তি‌নি ইম‌ধ্যে সম্পন্ন করেছেন রোমান ক্যাথ‌লিক ময়মন‌সিংহ ধর্মপ্রদেশের শিশু যীশুসহ মা মারীয়ার ভাস্কর্য।

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
4431
শেরপুর জেলার বারোমারীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব আয়োজন https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a7%87/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%25b6%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25aa%25e0%25a7%2581%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%259c%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b2%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%25ac%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%258b%25e0%25a6%25ae%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%2580%25e0%25a6%25a4%25e0%25a7%2587 Thu, 08 Dec 2022 22:57:56 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=4309 The post শেরপুর জেলার বারোমারীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব আয়োজন appeared first on The Abima Times 24 News.

বাপন নেংমিঞ্জা, শেরপুর: শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার গারো অধ্যুষিত এলাকা বারোমারীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বারোমারী ওয়ানগালা ২০২২’। গারোদের প্রাচীন ও কৃষি প্রধান নবান্ন উৎসবটি বারোমারীতে উদযাপিত হবে শনিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখে । বারোমারী এলাকার ডালুকোনা গ্রামের পসেন টিলা নামক স্থানে প্রথমবারের মত মধ্য পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। এই ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post শেরপুর জেলার বারোমারীতে ‘ওয়ানগালা’ উৎসব আয়োজন appeared first on The Abima Times 24 News.

বাপন নেংমিঞ্জা, শেরপুর: শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার গারো অধ্যুষিত এলাকা বারোমারীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘বারোমারী ওয়ানগালা ২০২২’। গারোদের প্রাচীন ও কৃষি প্রধান নবান্ন উৎসবটি বারোমারীতে উদযাপিত হবে শনিবার ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ইং তারিখে । বারোমারী এলাকার ডালুকোনা গ্রামের পসেন টিলা নামক স্থানে প্রথমবারের মত মধ্য পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। এই ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জানিয়েছেন গারোদের বিশেষ ব্যাক্তিত্ব কবি, সাহিত্যিক ও গীতিকার মতেন্দ্র মানখিন।

উল্লেখ্য যে, এই এলাকায় বেশ কিছু বছর ধরেই গ্রামভিক্তিক গারোদের এই আদি উৎসব পালিত হয়ে আসলেও এবার নালিতাবাড়ী থানার বেশ কিছু গ্রাম একত্রিত হয়ে উদযাপন করতে যাচ্ছে এই অন্যতম উৎসবটি। গারো পাহাড় বেষ্টিত এই অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গারোদের নানা ধরণের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি। তবে বিভিন্ন কারনে গারোদের অনেক পুরনো ইতিহাস ঐতিহ্য বর্তমানে কালের বিবর্তনে বিলীন প্রায়। এরই প্রেক্ষিতে এই অঞ্চলের গারো জনতার একত্রিত হয়ে সংস্কৃতি রক্ষায় এই উৎসব বিশেষ ভুমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন বারোমারী ওয়ানগালা উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক বাপন নেংমিঞ্জা।

দিনব্যাপী নানা ধরণের গারোদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, আমুয়া, ওয়ানগালা নৃত্য, সেরেজিং, আজিয়া, অতিথি প্রোগ্রাম ও নকমা সঙা অনুষ্ঠানগুলো হওয়ার কথা রয়েছে।

 

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
4309
ঝিনাইগাতীর গজনীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%9d%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%259d%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%2587%25e0%25a6%2597%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25a4%25e0%25a7%2580%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%2597%25e0%25a6%259c%25e0%25a6%25a8%25e0%25a7%2580%25e0%25a6%25a4%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%2595%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25b7%25e0%25a7%2581%25e0%25a6%25a6%25e0%25a7%258d Fri, 06 May 2022 21:39:01 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=3765 The post ঝিনাইগাতীর গজনীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন appeared first on The Abima Times 24 News.

আ.বিমা টাইমস, শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীতে অবস্থিত গজনী অবকাশ কেন্দ্রের গজনী গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন করা হয় । আজ ৬ মে ২০২২, শুক্রবার বিকাল তিনটায় এই কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস । এছাড়াও উদ্বোধনের সময়ে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলার জেলা প্রশাসক মমিনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post ঝিনাইগাতীর গজনীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন appeared first on The Abima Times 24 News.

আ.বিমা টাইমস, শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীতে অবস্থিত গজনী অবকাশ কেন্দ্রের গজনী গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন করা হয় । আজ ৬ মে ২০২২, শুক্রবার বিকাল তিনটায় এই কালচারাল সেন্টার উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস ।

এছাড়াও উদ্বোধনের সময়ে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলার জেলা প্রশাসক মমিনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুক্তাদিরুল আহমেদ, ঝিনাইগাতী উপজেলার ইউএনও ফারুক মাসুদ ও আরও অন্যান্য স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

এ সময় উদ্বোধক বলেন বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির আদলে এই কালচারাল সেন্টারকেও একসময় সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং এখানে গারো আদিবাসী সহ অন্যান্য কোচ, বানাই, হাজং আদিবাসী সহ সকলেই তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে পারবে।

তবে এই কালচারাল সেন্টার স্থাপনের প্রেক্ষিতে এলাকার আদিবাসীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য যে বিভিন্ন মাধ্যমে এই কালচারাল সেন্টার স্থাপনের উদ্দেশ্যকে মূলত ঐ স্থানে বহুদিন ধরে স্থাপিত গজনী অবকাশ কেন্দ্র বা পর্যটনের একটি অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যার কারণে আদিবাসী তথা ঐ এলাকায় বসবাসরত গারো আদিবাসীদের কাছে উক্ত কালচারাল একাডেমী স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক এলাকাবাসী অভিমত জানিয়েছেন। সীমান্তবর্তী জেলার শেরপুরের গজনীতে স্থাপিত এই ‘কালচারাল সেন্টার’ বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমীর আদলে পরিচালিত বা সম্প্রসারিত হবে কিনা এই ব্যাপারে এখনো তেমন কোন সুস্পষ্ট তথ্য পায় নি এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে সরকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনায় একটি রয়েছে। যেটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, পরিচর্যা, উন্নয়ন ও চর্চা এবং লালনের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে সংকৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহকুমার দুর্গাপুর থানাধীন বিরিশিরিতে এ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

 

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
3765
গারোদের সাংস্কৃতিক দিক – কার্তিক ঘাগ্রা https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%95/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%2597%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%258b%25e0%25a6%25a6%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%25b8%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%2582%25e0%25a6%25b8%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%2595%25e0%25a7%2583%25e0%25a6%25a4%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%25a6%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%2595 Tue, 22 Mar 2022 16:32:29 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=3718 The post গারোদের সাংস্কৃতিক দিক – কার্তিক ঘাগ্রা appeared first on The Abima Times 24 News.

খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর গারোরা নিজেদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে উদাসীন হলেও, নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি ধরে না রাখার চেষ্টা করলেও, কিংবা আদি সাংসারেক গারোদের মতো নিজেদের কৃষ্টি প্রথা পার্বণ সংস্কৃতি চর্চা ও সমৃদ্ধিতে নিরঙ্কুশ মনোযোগী না হলেও সেই ‘মিৎদে মান্দেনি চাসংও’ বা ‘দেবতাদের যুগ’ হতেই গারো সমাজে নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলমান এবং এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post গারোদের সাংস্কৃতিক দিক – কার্তিক ঘাগ্রা appeared first on The Abima Times 24 News.

খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর গারোরা নিজেদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়ে উদাসীন হলেও, নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি ধরে না রাখার চেষ্টা করলেও, কিংবা আদি সাংসারেক গারোদের মতো নিজেদের কৃষ্টি প্রথা পার্বণ সংস্কৃতি চর্চা ও সমৃদ্ধিতে নিরঙ্কুশ মনোযোগী না হলেও সেই ‘মিৎদে মান্দেনি চাসংও’ বা ‘দেবতাদের যুগ’ হতেই গারো সমাজে নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চলমান এবং এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীদের থেকে গারোদের পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে পরিচিত ও মর্যাদা দিয়ে এসেছে। সমাজের অভ্যন্তরে মূল্যবোধ তৈরি ও গতি দিয়ে এসেছে। সমাজকে ও সমাজের মানুষকে আলোকিত ও বিকশিত করে এসেছে। আর এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডগুলো কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদে সবই জুম চাষ ও কৃষিকে উপজীব্য করে। এর কোনটা নতুন জুম জমি নির্বাচনকে নিয়ে, কোনটা জুম জমির কেটে ফেলা জঙ্গল শুকিয়ে পুড়িয়ে চ‚ড়ান্তভাবে চাষের উপযোগী করে তোলাকে কেন্দ্র করে, কোনটা বীজ রোপনের সময়কে উদ্দিষ্ট করে, কোনটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ পোকা-মাকড় ও জীব- জন্তু থেকে ফসলকে রক্ষা করায় দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে, কোনটা ফসল কর্তনকে উদ্দেশ্য করে, কোনটা ফসল কাটা শেষ ও ঘরে তোলার আগে, কোনটা ফসল ঘরে তোলার পর দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্যকে কেন্দ্র করে। আর এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডগুলো হলো-

দেন বিলসিয়া- বছরের শুরুতে উৎকৃষ্ট ও উপযুক্ত জুম জমি নির্বাচন এ উৎসবের উদ্দেশ্য। গারোদের বিশ্বাস এ জমির মালিক আছে। আর এ মালিক হচ্ছে দেবতা। এ কারণে জুম জমি নির্বাচনের আগে গারোরা মিৎদে বা দেবতার অনুমতি চেয়ে নেয়। গৃহ’ চাষের আগে নির্বাচিত জুম জমির কিছু অংশ পরিস্কার করে সেই পরিস্কার অংশে মিৎদের ভোগের উদ্দেশ্যে কলাপাতায় কিছু খাবার ও চু ঢেলে রেখে আসে। গারোরা এটাকে ‘চুগারিয়া’ এবং জমির কিছু অংশ পরিস্কার করে কিছু আগাছা খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে আসাকে ‘সাম সেপবা’ বলে। গারোদের বিশ্বাস মিৎদে রাতে গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে এসে গৃহ’কে দেখা দেবে, অনুমতি দেবে। যদি অনুমতি দেয় তবে নির্বাচিত জুম জমি চাষের উপযুক্ত, আর যদি না দেয় তবে নির্বাচিত জুম জমি চাষের উপযুক্ত নয় ধরে নেয়া হবে এবং সে জমি বাদ দিয়ে অন্য আরেকটি জমি পুনরায় একইভাবে যে পর্যন্ত-না গৃহ’ স্বপ্নে অনুমতি না-পায় জমি পরিস্কার করা চলতে থাকবে। এভাবে কোন কিছুকে উদ্দিষ্ট করে স্বপ্ন দেখাকে গারোরা ‘জুমাং সিয়া’ বলে আর সাধারণ কোন স্বপ্ন দেখাকে ‘জুমাং নিকগা’ বলে। এভাবে জমি নির্বাচন গালমাকজা বা মার্চ-এপ্রিলের প্রথম দিকে শেষ হলে ‘নকমা’র বাড়িতে বেদী নির্মাণ ও পাঁঠা বলি দেয়ার মাধ্যমে ‘দেন বিলসিয়া’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন নকমার গৃহে সবাই একত্রিত হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। এটি গারোদের বছরের প্রথম উৎসব।

আগালমাকা- নির্বাচিত জুম জমির কেটে ফেলা জঙ্গল শুকোলে তাতে আগুন ধরিয়ে চূড়ান্তভাবে জমি পরিস্কার ও চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। আগুনে পোড়ানোর এ কাজ মেবাকজা বা এপ্রিলের শেষ ও মে’র প্রথম দিকে করা হয় এবং এর পরই ‘আগালমাকা’ উৎসব শুরু হয়। উৎসবের দিন সকালে গ্রামের প্রতিটি পরিবার নিজ ক্ষেতে গিয়ে ডিম ও নকমা মোরগ উৎসর্গ করে। এর পর প্রথমে ব্যক্তিগত ও পরে সবাই মিলে ফসলের ও বীজের মিৎদে বা দেবী মেয়ানমা রংকিমমেমার উদ্দেশ্যে ‘আমুয়া ক্রিৎদা’ বা ‘পুজো’ দেয়। বিকেলে নকমার গৃহে গ্রামবাসীরা একত্র হয়ে পানাহার করে। বয়স্করা দিনে ও অল্প বয়সীরা রাতে প্রতিটা বাড়িতে নেচে-গেয়ে কয়েকদিন ধরে আনন্দ উৎসব করে।

আসিরকা- বিগত বছরের নির্বাচিত জুম জমিতে ধান বীজ রোপনের আগে এ উৎসব পালন করা হয়। সময়টা জাগ্রোজা বা মে-জুন। এ উৎসবের আগে গ্রামবাসীরা সবাই মিলে গরু ক্রয় করে। উৎসবের দিন এ গরু জবাই করে প্রতিটা পরিবারের জন্য মাংস ভাগ করে বিতরণ করে দেয়া হয়। পরের দিন গ্রামবাসীরা সকলে নিজ জমিতে গিয়ে ‘মিৎদে সালজং’ -এর উদ্দেশ্যে ডিম উৎসর্গ করে। রীতি অনুযায়ী এ দু’দিন গারোদের জমিতে কাজ করা নিষেধ। পরের দিন হতে সবাই নিজ জমিতে রোপন কাজ শুরু করে দেয়।

রংচুগাল্লা- গারোদের বিশ্বাস দেবতারা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে, পোকা-মাকড় ও জীব-জন্তু থেকে চাষকৃত জুম জমির ফসলাদি রক্ষা করেন। আর এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দেবতাদের তুষ্ট করতে, ফসল ঘরে তোলার আগে, দেবতাদের উদ্দেশ্যে ‘অননি চিননে’ বা ভোগ দিয়ে গারোরা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ উৎসব ধান কাটার সাথে সাথে হয়। ধান কাটার পূর্বে জমির কিছু অংশ পরিস্কার করে সেই পরিস্কার জায়গায় চিড়া, গুড়, লেবু ইত্যাদি দেবতার উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে পালন করা শুরু হয়। এ উৎসবের আরেকটি বিশেষত দিক হলো এ উৎসবের মধ্য দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য উৎকৃষ্ট বীজ নির্ণয় ও সংগ্রহ করা হয়। পুরাণ কথানুযায়ী রংচুগাল্লা উৎসব না হওয়া পর্যন্ত গারোরা কেউ দূরে বেড়াতে যায় না, নতুন আত্মীয়তা গড়ে তোলে না, বিচার-সালিশ করে না, আনন্দ-ফুর্তি করে না। এ উৎসব জামেদকজা বা আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়।

জামেগাপ্পা আহাওয়া- এ উৎসব পালনের আগে নকমা তারিখ নির্ধারণ করে গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেয়। উৎসবের দিন সকালে প্রত্যেকে নিজ ক্ষেতে গিয়ে মাছ উৎসর্গ করে এবং যে সরু চোকা বাঁশের সাহায্যে ধান ও অন্যান্য ফসলের বীজ রোপন করা হয়েছিল সেটা ‘বোরাং’ -এর কাছে জড়ো করে রাখে। ধান কাটার শেষ পর্যায়ে কয়েক গুচ্ছ ধানের শীষ জড়ো করা বাঁশের কাছে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা শেষ করা হয়। এ গুচ্ছ ধান গৃহ’ যখন বহন করে নিজ ঘরে নিয়ে যায় তখন যুবকেরা ‘আহাওয়া’ ধ্বনিতে গৃহ’কে অনুসরণ করে। এর পর পরবর্তী জুম চাষের মৌসুম পর্যন্ত তারা আহাওয়া শব্দ করতে থাকে এবং ফের নতুন মৌসুমে জুম জমির জঙ্গল কাটা শুরু হলে সাথে সাথে আহাওয়া শব্দ করা বন্ধ করে দেয়। এ উৎসব ধান কাটা শেষ হলে মেপাংজার প্রথম দিকে বা সেপ্টেম্বর মাসে হয়। এ উৎসবের আগে দামা ও ক্রাম বাজানো নিষেধ। গারোদের বিশ্বাস দামা ও ক্রামের শব্দে ধান গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়। এ উৎসবের আগে আতপ চাউলের ভাত খাওয়াও নিষেধ।

ওয়ানগালা- রীতি অনুযায়ী জামেগাপ্পা আহাওয়া উৎসব পালনের এক মাস পর ওয়ানগালা পালন করতে হয়। গারোদের বিশ্বাস ও পুরাণ কথানুযায়ী- ধান ও অন্যান্য ফসলাদির বীজ প্রাপ্তি, জমি নির্বাচন, রোপন ও এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন পার্বণ, ফসল উত্তোলন, কৃতজ্ঞতা ও নৈবেদ্য তাৎপর্যে এটি গারোদের প্রধান উৎসব। বলা হয়, এটি নতুন ধান ও ফসলাদি পাওয়ার পর নৈবেদ্য ও নবান্ন উৎসব। এ উৎসব রোগালা, চাচাত সওয়া, ক্রাম গগাতা বা জল ওয়াৎদা এ তিন পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। পুরাণ কথানুযায়ী পূর্বে গারোরা জুম চাষ করতে জানত না। জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের বন আলু ও ফল সংগ্রহ করে খেত। মিৎদে সালজং এ দুর্দশা দেখে ‘আয়সে’ নাম্মী এক গারো বিধবা মহিলার জন্য ‘মিমা মিসি’ বা ধানের বীজ দেয়। শর্ত দেয় প্রতি বছর এ ধান চাষ করে চাউল বানিয়ে খাওয়ার আগে আমাকে স্মরণ করে, অননি চিননে বা ভোগ দিয়ে, তারপর খাবে। সে থেকে গারোরা নতুন ধান, সাক-সবজি, ফল-ফলান্তি আগে মিৎদে সালজংকে ভোগ দেওয়ার সাথে বীজের মা মেয়ানমা রংকিমেমাকেও ভোগ দিয়ে তারপর খায়। আর স্মরণ করে এ ভোগ দেয়া উৎসবটি ‘ওয়ানগালা’ নামে পরিচিত। এ উৎসবের আরেকটি অন্যতম দিক হলো এ সময়েই গারো যুবক-যুবতীরা নিজেদের পছন্দানুযায়ী সঙ্গী নির্বাচনে ব্যস্ত হয়, অভিভাবকেরাও নিজেদের সন্তানদের জন্য পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে মনোযোগী হয়। ‘মিগং’ নামের এক ধরণের গাছ, এ গাছের ফুল ফোটা শুরু হলে এ উৎসব পালন করতে হয়। এ ফুল অক্টোবর মাসে ফোটে এবং অবশ্যই পূর্ণিমা রাতে ওয়ানগালা করতে হয়।

নক নাপবা- নক মানে ঘর, আর নাপবা মানে প্রবেশ। এ নক বা ঘর ইচ্ছে করলেই গারোরা যখন-তখন যেখানে-সেখানে তৈরি করতে পারে না। মিৎদের অনুমতি চেয়ে নিতে হয়। যে জায়গায় ঘর তৈরি করবে সে জায়গা পরিস্কার করে কলা পাতায় মিৎদেকে ভোগ দিয়ে ঘর তৈরি করার বাসনা জানাতে হয়। মিৎদে যদি অনুমতি দেয় তবে রাতে গভীর ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখা দিয়ে অনুমতি দেবে। যদি না দেয় তবে সে জায়গা ত্যাগ করে অন্যত্র একইভাবে মিৎদের উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে ঘর তৈরি করার বাসনা জানাবে। এভাবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত মিৎদের উদ্দেশ্যে ভোগ দিয়ে বাসনা জানাবে। অনুমতি দিলে ঘর তৈরি করার আয়োজন করবে। এ ঘর তৈরি করার বাঁশ কাঠও গারোরা মিৎদের অনুমতি না নিয়ে কাটে না। এভাবে নতুন ঘর তৈরি করার পরও গারোরা সরাসরি নতুন ঘরে বসবাস শুরু করতে পারে না। কামাল বা পুরোহিত গয়রা মিৎদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর উৎসর্গ করার পর বসবাস শুরু করতে পারে। আর এসব আনুষ্ঠানিকতার পর সন্ধ্যায় একসাথে খাওয়া-দাওয়া করে ‘নক নাপবা’ বা ‘ঘর উৎসর্গ’ শেষ হয়। এটি মূলত একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মিমাংকাম- মানুষ মরে গেলে সৎকার পরবর্তী যে আনুষ্ঠানিকতা তাই মিমাংকাম। মিমাংকাম শব্দের ‘মিমাং’ মানে আত্মা, ‘কাম’ মানে কাজ। মানে আত্মার কাজ, শ্রাদ্ধের কাজ। গারোদের বিশ্বাস মানুষ মারা গেলে তার আত্মা ‘মিমাং’ হয়ে যায় এবং এ মিমাং কোনদিন মরে না, পুনর্জন্ম নেয়। তাদের বিশ্বাস জীবদ্দশায় ব্যক্তি ভাল কাজ করলে পুনর্জন্মে সে মানুষ হয়ে জন্ম নেয় এবং পৃথিবীতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে; খারাপ কাজ করলে কুকুর, বিড়াল, গরু ইত্যাদি হয়ে জন্ম নেয় আর মানুষের ঘরে কাজ করে আগের জন্মের ঋণ, দেনা, চুরি ইত্যাদির দায় পরিশোধ বা প্রায়শ্চিত করে। এ কারণে গারোরা গৃহপালিত পশু-পাখিদের প্রহার করে না, অত্যাচার করে না। মনে করে, এরাও একসময় মানুষ ছিল।

পূর্বে মানুষ মারা গেলে গারোরা সাথে সাথে গরু মহিষ মারত, এখন গাছ কাটে। এটি করার উদ্দেশ্য হলো- মৃত ব্যক্তির আত্মা যাতে নিঃসঙ্গ না হয়, একাকী যাতে মিমাং আসং চিৎমাং-এ না যায়, সঙ্গী-সাথী হিসেবে গরু মহিষের বা গাছের আত্মা যাতে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে সঙ্গ দেয়, একসাথে মিমাং আসং বা আত্মার দেশ চিৎমাং-এ যায়।

প্রথানুসারে গারো সমাজে বিবাহিত পুরুষ মারা গেলে মিমাংকামের গুরুত্ব অনেক। বিবাহিত মহিলা বা অবিবাহিত যুবক-যুবতী মারা গেলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। বিবাহিত পুরুষ স্ত্রীর মাচং চাৎচি বা মাহারির লোক নয়, সে অন্য মাহারির। শুধুমাত্র সংসার করার জন্য সে স্ত্রীর পরিবারে এসেছিল। মারা যাওয়ার পর সে আর স্ত্রীর গৃহে থাকতে পারে না। তার আমা মানক চ্রারা মিমাংকামের মাধ্যমে তার আত্মাকে মায়ের বা মানকের বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর এ অনুষ্ঠানটিই মিমাংকাম। মিমাংকামের দিন মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দেশ্যে যে ‘দেল্লাং নকথিপ’ বা ‘আত্মার ঘর’ তৈরি করা হয় তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর শিমুল গাছের ফুল যখন লাল হয়ে ফুটবে, চাঁদ যেদিন পূর্ণিমা হবে, সেদিন মিমাংকাম হবে। এ মিমাংকামও একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

 

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
3718
জিকপাংমা ও নকনা-নক্রম – কার্তিক ঘাগ্রা https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%ae%e0%a6%be-%e0%a6%93-%e0%a6%a8%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%a8%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%259c%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595%25e0%25a6%25aa%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%2582%25e0%25a6%25ae%25e0%25a6%25be-%25e0%25a6%2593-%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%2595%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%25be-%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%2595%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25ae-%25e0%25a6%2595%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0 Wed, 16 Feb 2022 17:57:54 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=3652 The post জিকপাংমা ও নকনা-নক্রম – কার্তিক ঘাগ্রা appeared first on The Abima Times 24 News.

এ বিষয় নিয়ে লেখার কোন প্রয়োজন আছে এরকম মনে না হলেও দিব্যি লিখতে বসে গেছি। শুরুও করছি। কেন লিখছি, লিখতে শুরু করেছি, এর কোন সুস্পষ্ট হেতু আমার জানা নাই। আর এ বিষয় যে আমার চেতন ও অবচেতনে এসে যাচ্ছে এমনও না। প্রকৃতপক্ষে এটা এক মামুলি বিষয়ই- আমার কাছে, আমাদের কাছে, এবং সবার কাছে। জিকপাংমা এ […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post জিকপাংমা ও নকনা-নক্রম – কার্তিক ঘাগ্রা appeared first on The Abima Times 24 News.

এ বিষয় নিয়ে লেখার কোন প্রয়োজন আছে এরকম মনে না হলেও দিব্যি লিখতে বসে গেছি। শুরুও করছি। কেন লিখছি, লিখতে শুরু করেছি, এর কোন সুস্পষ্ট হেতু আমার জানা নাই। আর এ বিষয় যে আমার চেতন ও অবচেতনে এসে যাচ্ছে এমনও না। প্রকৃতপক্ষে এটা এক মামুলি বিষয়ই- আমার কাছে, আমাদের কাছে, এবং সবার কাছে।

জিকপাংমা এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর এটা নিয়ে লেখার কোন অভিপ্রায় আমার ভেতরে ছিল না।

এ তো সবারই জানা কথা, ইতোপূর্বে পাণিগ্রহণ না করা কোন যুবক-যুবতী বা পুরুষ-মহিলা যখন সংসার শুরু করে, সে নকনা কন্যাই হোক কিংবা আগাতি-সে-ই সেই সংসারের জিকপাংমা হয়। এ জিকপাংমাই ওই সংসারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়। এটাই যুগে যুগে, কালে কালে, বংশ পরম্পরায় গারোদের পালনীয় বেওয়াল, পালনীয় রীতি। এখানে সুনির্দিষ্ট অর্থে ‘বেওয়াল’মানে গারোদের পালনীয় সমাজ ব্যবস্থা, আচার-অনুষ্ঠান, রীতি, প্রথা, শাসন-অনুশাসন ও জীবনাচার। এবং নকনা’র এক ও অদ্বিতীয় উৎস এ জিকপাংমাই।

গারো সমাজে এ ‘জিক’বা ‘স্ত্রী’হয় তিন ধরনের। এক জিকপাংমা (প্রথম স্ত্রী)। দুই জিকগিদি (দ্বিতীয় স্ত্রী)— ইনি জিকপাংমা থাকা অবস্থায় বা না-থাকা অবস্থায় মৃত্যুর পর জিকগিদি হয়ে আসতে পারে (জিকগিদিও প্রথম জিকগিদি, দ্বিতীয় জিকগিদি এভাবে আরও হতে পারে )। তিন জিকব্রিং—ইনি লোক মুখে চাউর থাকে, সে তো বা অমোক তো অমোকের জিকব্রিং। কিন্তু কেউ তাকে তার জিক বা স্ত্রী হিসেবে স্বিকৃতি দেবে না, স্বীকার করবে না। কিংবা জিকব্রিং নিজেও স্বীকার বা অন্যদের বলবে না আমি অমোকের জিক। বললে চরিত্রের কলুষতা ও কলঙ্কের কালিমা প্রকাশ্য হয়। ঘৃণ্য ও অস্পৃশ্য হতে হয়। বাস্তবিকও তার সাথে পুরুষের যে সম্পর্ক সেটা গোপনের, লোকচক্ষুর অন্তরালের। সমাজ ও পরিবারের অজ্ঞাতে হয়। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে এর কোন স্বীকৃতি নেই।

জিকব্রিং শব্দটি ব্যবচ্ছেদ করলেও এরকম হয় ‘জিক’মানে স্ত্রী, ‘ব্রিং’মানে জঙ্গল। মানে এ সম্পর্ক লোকসমাজের ভেতরের মধ্যের নয়, বাইরের।

লেখাটিকে আরও সুস্পষ্ট করতে গারোদের বেওয়ালে জামাই দু’ধরনের হয়- এক) নক্রম, দুই) চাওয়ারি; এটিও বলা প্রয়োজন। আর এ জামাই সে ‘নক্রম’ই হোক, কিংবা ‘চাওয়ারি’তাকে তার স্ত্রীর গৃহে আসতে হয়, থাকতে হয়, বসবাস করতে হয়। আর এ ‘নক্রম’ও ‘চাওয়ারি’র মধ্যে রয়েছে অধিকার, ক্ষমতাকাঠামো ও সামাজিক মর্যাদাগত পার্থক্য। এখানে ‘নক্রম’হলো কোন পরিবারের ‘নকনা’মনোনীতা কন্যার জামাই, আর ‘চাওয়ারি’হলো নকনা ব্যতীত অন্যান্য ‘আগাতি’কন্যা সন্তানদের জামাই। বেওয়াল অনুযায়ী নকনা-নক্রম পিতা-মাতার সাথে একই পরিবারভুক্ত হয়ে সংসার জীবন করে কিন্তু আগাতি ও চাওয়ারিদের কিছুদিন পিতা-মাতার সংসারে থেকে আলাদা ঘর সংসার করতে হয়।

আর বংশ গণনায় গারোরা পুরুষ বা পিতার দিক থেকে করে না মাতার দিক থেকে করে। পরিবারের সন্তান-সন্তুটিরা বংশধরেরা মাতার চাৎচি মাহারি বা পদবী গ্রহণ করে পরিচিত হয়। এর কোনরূপ ব্যতয় গারো সমাজে অচিন্ত্যনীয়। সেরকম হলে গারোরা সেটাকে পাপ কর্মের চেয়েও ঘৃণীত ও তিরস্কৃত জ্ঞান করে। সর্বাবস্থায় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাত্র-পাত্রি করে।

আর মেয়ে সে নকনাই হোক, কিংবা আগাতি প্রথম স্ত্রী গারো সমাজে ‘জিকপাংমা’ হিসেবে পরিচিত হয়। আর এ জিকপাংমাই ওই পরিবারের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়। আর ওই পরিবারের সমস্ত সম্পত্তির উত্তরসূরী উত্তরাধিকারিণী হয়- পরিবারে যদি একাধিক কন্যা সন্তান থাকে তবে নকনা মনোনীতা কন্যা সন্তান, আর একমাত্র কন্যা সন্তান থাকলে সেই উত্তরাধিকারিণী হয়। আর যদি কোন কন্যা সন্তানই না থাকে তবে চ্রা-চাৎচিদের অনুমতিক্রমে জিকপাংমা নিজের পছন্দানুযায়ী নিজের সহোদরা ও আপন নিকটতম বোনদের যেকোন কন্যা সন্তানকে কন্যা ও কন্যার মা-বাবার সম্মতিক্রমে নকনা মনোনীতা করতে পারে। এও যদি সম্ভব না হয়, বা, বোনদেরও যদি কন্যা সন্তান না থাকে তবে একই মাহারির দূর সম্পর্কের বোনদের কন্যা সন্তানদের নকনা হিসেবে মনোনীতা করবে। এক্ষেত্রে এ নকনা মনোনীতা কন্যা নিজের আপন মা-বাবা, ভাই-বোনদের রাগ-অনুরাগ বিযুক্ত থেকে ও তাদের প্রতি দায় রহিত থেকে এ পরিবারের সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হয় এবং সেই এ জিকপাংমা ও তার স্বামীকে আমৃত্যু লালন-পালন করবে, এ পরিবারের ভাই বা চ্রাদের বিপদ-আপদের বৈধ জামিনদার হবে। গারোরা এভাবে নকনা মনোনয়ন করাকে ‘নকনা সৎদে রাবা’বলে। এখানে ‘সৎদে’মানে কাটা, আর ‘রাবা’মানে আনা। ‘সৎদে রাবা’মানে ‘কেটে আনা’। তবে একাধিক স্ত্রী থাকলে, জিকগিদি যদি একই মাহারির হয় এবং এ জিকগিদির যদি কন্যা সন্তান থাকে তবে সে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর নকনা’র অধিকার লাভ করবে। এ ব্যতিরেকে ওই পরিবারে জিকগিদি ও জিকগিদির সন্তানদের সম্পত্তি প্রাপ্তির কোন অধিকার নেই। যদি নকনা তাদের দেয় তবে তারা সেটা নিয়েই সন্তোষ্ট থাকবে।

এ জিকপাংমা (জিক + পাং + আমা) শব্দের ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায় ‘জিক’ মানে স্ত্রী, ‘পাং’মানে গাছ, ‘আমা’ মানে মাতা। অর্থাৎ কোন গারো পরিবারে জিকপাংমা হলো ওই পরিবারের মূল বা শেকড়। এটাই গারো সমাজের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অলঙ্গনীয় মান্য রীতি।

বেওয়াল অনুযায়ী পারিবারের নকনা কন্যা সন্তানদের জন্য নক্রম কারা হয়, হতে পারে, বাস্তবে এ মৌলিক ও যৌক্তিক সুন্দর রীতি এখন সর্বাংশে মানা না হলেও বেওয়াল অনুযায়ী পুরুষের বা ওই পরিবারের কর্তার ওপর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি তত্ত্বাবধানের যে দায়িত্ব অর্পিত থাকে তা যুগ-যুগান্তরে পুরুষানুক্রমে কর্তার বা পিতার চাৎচি মাহারি বা পিতার বংশের ওপরই যাতে বর্তায়, যাতে অন্য মাহারির পুরুষের তত্ত্বাবধানে চলে না যায়, এ কারণে কর্তার বা পিতার আপন ও নিকটতম ভাগ্নেয়, না থাকলে দূর সম্পর্কের (একই মাহারির) ভাগ্নেয়কে নকনার নক্রম করে আনা হয়। দূর সম্পর্কের ভাগ্নেয়কে নক্রম করে আনাকে গারোরা ‘নক্রম সৎদে রাবা’বলে। একইভাবে আগাতি কন্যা সন্তানদের জন্যও প্রথমে পিতার চাৎচি মাহারির ভাগ্নেয়দের চাওয়ারি হিসেবে দেখা হয়, না হলে অন্য চাৎচি মাহারি থেকে দেখা হয়। আগাতি কন্যা সন্তানদের পিতার চাৎচি মাহারিকেই বিয়ে করতে হবে, বা, পিতা-মাতা পছন্দ করা পাত্রকেই বিয়ে করতে হবে এ বাধ্যবাধকতা নেই।

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
3652
জনিক নকরেক চিতানলে দেহ পুড়ে রেখে গেছে সাংসারেক ধর্মের অগণিত ছাই https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%a8%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%95-%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b9-%e0%a6%aa%e0%a7%81/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%259c%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%2595%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%259a%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25a4%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25a8%25e0%25a6%25b2%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%25a6%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b9-%25e0%25a6%25aa%25e0%25a7%2581 Mon, 15 Nov 2021 14:18:37 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=3475 The post জনিক নকরেক চিতানলে দেহ পুড়ে রেখে গেছে সাংসারেক ধর্মের অগণিত ছাই appeared first on The Abima Times 24 News.

বয়সের ভারে ন্যূজ জনিক নকরেক। ঘরের ভেতর বাপাশ হেলে শুয়েছিলেন। গারোহাব দলটি শুয়ে থাকা মানুষটির পাশে বসে কয়েকবার ডাকা হলো। অনেক ডাকা-ডাকিতে একটু বোধয় নড়ে উঠলেন; আবার পাশ ফিরিয়ে ফের শুয়ে গেলেন। কিন্ত কোন কথা বললেন না তিনি। কথা বলার উচ্ছে থাকলেও তিনি কথা বলার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন; তা কেইবা জানতো! যে মানুষটি উদার […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post জনিক নকরেক চিতানলে দেহ পুড়ে রেখে গেছে সাংসারেক ধর্মের অগণিত ছাই appeared first on The Abima Times 24 News.

বয়সের ভারে ন্যূজ জনিক নকরেক। ঘরের ভেতর বাপাশ হেলে শুয়েছিলেন। গারোহাব দলটি শুয়ে থাকা মানুষটির পাশে বসে কয়েকবার ডাকা হলো। অনেক ডাকা-ডাকিতে একটু বোধয় নড়ে উঠলেন; আবার পাশ ফিরিয়ে ফের শুয়ে গেলেন। কিন্ত কোন কথা বললেন না তিনি। কথা বলার উচ্ছে থাকলেও তিনি কথা বলার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন; তা কেইবা জানতো! যে মানুষটি উদার মনে সকলের তরে আজীবন জ্ঞান বিলিয়েছেন, আজ কেন জনিকের অঝোর ধারায় এতো অভিমান!

অনলাইন সংবাদ, গারোদের চালচিত্র পরিবেশনে নতুন মুখ আ.বিমা টাইমস নিউজ পোর্টাল। মিডিয়া পরিবারটির দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল গারোদের অতীত ধর্মাচার, এদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি এবং বর্তমান সময়ে গারোদের জীবন-যাপন, ইতিহাস ও বিভিন্ন শিক্ষনীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে ডকুমেন্টরি আকারে শর্ট ফিল্ম তৈরি করে ভার্চ্যুয়াল আর্কাভে সংরক্ষণ করা। যাতে করে নতুন গারো প্রজন্মরা দেখতে পারে। গারোদের খুটিনাটি বিষয় দেখতে পারে, শিখতে ও জানতে পারে। আদি শেকড়গুলো খোঁজে পেতে পারে। নতুন চেতনায় আবার উদ্বুদ্ধ হতে পারে।

পরিকল্পনানুযায়ী আ.বিমা টাইমস ২৪ নিউজ পোর্টালের সিস্টার কনসার্ন ‘গারোহাব’ পরিবারের একটি দল গারোদের বিশেষ ভিডিও ফোটেজ, সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও সংরক্ষণের নিমিত্তে মধুপুরের মাটিতে পা রাখে বৃহস্পতিবার। দলটির উদ্দেশ্য ছিল মধুপুর আ.বিমায় সাংসারেক ধর্মের ধারক বাহক খামাল জনিক নকরেক, খামাল দীনেশ নকরেকসহ অতীতের ইকোপার্ক আন্দোলন, এবং চলমান আন্দোলন সংগ্রামের সাহসী তরুণ শহীদ পীরেন স্নাল, উৎপল নকরেকসহ সেসময়ের স্মৃতিকথা, এসব কিংবদন্তিদের গল্প তুলে আনা। পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী দলটি শুক্রবার পা রাখে জনিক নকরেকের জীর্ণ মাটির ঘরে। গভীর প্রত্যাশা ছিল স্থির চিত্র, সাংসারেক নিয়ে অনেক গল্পগুজব, জমপেশ আড্ডা হবে। ভিডিও চিত্র ধারণের মধ্য দিয়ে তার পেছন গল্প শুনা হবে, শুনা হবে সাংসারেক ধর্মে পূজার সাসাৎ সোয়া ধোঁয়ার সঙ্গে মন্ত্রধ্বনি।

সাংসারেক খামাল জনিক নকরেক এর শেষকৃত্যানুষ্ঠান, মিল্লাম স্ফী হাতে জীবিত খামাল দীনেশ নকরেক

বয়সের ভারে ন্যূজ জনিক নকরেক। ঘরের ভেতর বাপাশ হেলে শুয়েছিলেন। গারোহাব দলটি শুয়ে থাকা মানুষটির পাশে বসে কয়েকবার ডাকা হলো। অনেক ডাকা-ডাকিতে একটু বোধয় নড়ে উঠলেন; আবার পাশ ফিরিয়ে ফের শুয়ে গেলেন। কিন্ত কোন কথা বললেন না তিনি। কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও তিনি কথা বলার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন; তা কেইবা জানতো! যে মানুষটি উদার মনে সকলের তরে আজীবন জ্ঞান বিলিয়েছেন, আজ কেন জনিকের অঝোর ধারায় এতো অভিমান!

গারো সাংসারেক ধর্মের প্রাসঙ্গিক কিছু ইতিহাস ও ভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ- গারোরা মূলত ভারতের মেঘালয়  ও বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় বসবাস করে। ভারতের মেঘালয় ছাড়াও আসামের কামরূপ, গোয়ালপাড়া ও কারবি আংলং জেলায় এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ছাড়াও টাঙ্গাইল, সিলেট, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকাও গাজীপুর জেলায় গারোরা বাস করে। তবে ঠিক কবে নাগাদ থেকে বাংলাদেশে এই গারো আদিবাসীরা বসবাস শুরু করেছিল তা অনেকেরই এখনো অজানা।

সাংসারেক খামাল জনিক নকরেক এর শেষকৃত্যানুষ্ঠান

গারোরা ভাষা অনুযায়ী বোডো মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনেক গারোই নিজেদেরকে মান্দি বলে পরিচয় দেন। গারোদের ভাষায় ‘মান্দি’ শব্দের অর্থ হল ‘মানুষ’।  গারোদের সমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত। তাদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম ‘ওয়ানগালা’; যাতে দেবতা মিসি আর সালজং এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করা হয়। উল্লেখ্য ওয়ানগালা না হওয়া পর্যন্ত মান্দিরা নতুন উৎপাদিত ফসলাদি খেত না। আশ্বিন মাসে একেক গ্রামের মানুষদের সামর্থ্যানুযায়ী সাত দিন কিংবা তিনদিন ধরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। অতীতে গারোরা সবাই তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করত। তাদের আদি ধর্মের নাম ‌’সাংসারেক’। ১৮৬২ সালে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে ৯৯ ভাগের বেশি গারোরা এখন খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণের পর থেকে তাদের সামাজিক নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠানে বেশ পরিবর্তন এসেছে।

গারো সাংসারেক ধর্মের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। এছাড়াও অন্যান্য দেবতারা হলেন- মিসি সালজং, সুসমি, গয়ড়া প্রমুখ। গারোদের এই সাংসারেক ধর্ম কবে, কোথায় এবং কিভাবে শুরু হয়েছিল তা এখনো অজানা। ত্যাঞ্চলে খিয়াংরা কবে, কোথায়, কখন এবং কিভাবে জীবন যাত্রা শুরু করেছিল তা অনেকের অজানা । তবে এটা সত্যি যে, এই সংখ্যালঘূ খিয়াংরাও অন্যান্য আদিবাসীদের সাথে সহবস্থানে থেকে যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে । অন্যান্য আদিবাসীদের সাথে সাথে খিয়াংরাও এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল বলে অনেকেই অভিমত পোষণ করেছেন । কারণ খিয়াংদের প্রাত্যহিক জীবনের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক রীতিনীতি ও পূজা পার্বণ ইত্যাদি বিষয়গুলো অন্যান্য আদিবাসীদের সাথে অনেকটা সামঞ্জস্য রয়েছে । এক সময় ছিল যখন তারা নিজেদের বৈদ্যান্তিক শক্তি দ্বারা মন্দ দেব-দেবীদের নিয়ন্ত্রণ ও পূজা-অর্চণা করতো। আর তাদের নিজস্ব কবিরাজি বিদ্যা দিয়ে পাহাড়ি গাছ-গাছালি দ্বারা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিতো । এই সকল বিদ্যা তারা পুরুষানুক্রমে রপ্ত করতো । কালের আবর্তে মিশ্র সংস্কৃতির আবহের কারণে তাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য বৈদ্যান্তিব বিদ্যা এবং কবিরাজ শান্ত্র চিরতরে হারিয়ে গেছে । তাছাড়া ধর্মীয় অনুশাসনের ফলে এবং শিক্ষার অভাবে সংরক্ষিত না থাকার কারণে অনেক ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানাদি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে । ঠিক তদ্রুপ খিয়াংদের বিভিন্ন পূজা-পার্বন ও হারিয়ে যেতে বসেছে । তাছাড়া সমাজের তাদের নিজস্ব আইন কানুন দ্বারা সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করত । এছাড়াও অন্যান্য আদিবাসীদের বিভিন্ন পূজা সম্পর্কেও তাদের ভাল জ্ঞান বা ধারণা ছিল । যে কেউ ইচ্ছা করলে বিভিন্ন দেবতা-দেবীর কাছে পূজা দিতে পারতো না । এই বিষয়ে দক্ষ লোকেরাই এ সকল পূজা দিতে পারতো । কোন গ্রামে যদি খিয়াংদের মধ্যে পূজা দেবার মত অভিজ্ঞ লোক না থাকত, তাহলে অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের এনে সেই পূজার কাজ সম্পন্ন করতে হতো । এভাবে একে অপরের সহায়তায় পূজার কাজ সম্পন্ন করা হত বলে অন্য আদিবাসীদের পূজার সাথে অনেকটা সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। ঠিক তদ্রুপ কোন আদিবাসীর গ্রামে যদি পূজা দেবার মত কোন দক্ষ লোক না থাকত, তাহলে খিয়াং সম্প্রদায়ের দক্ষ লোককে নিয়ে গিয়ে পূজার কাজ সম্পন্ন করতে হত । অতীতে খিয়াংদের পূজার কাজে বা বৈদ্যান্তিক ধ্যাণ ধারনার বিদ্যায় যথেষ্ট সুনাম ছিল । অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাদের বৈদ্যান্তিক বিদ্যার পারদর্শিতার জন্য বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করত বলে জানা যায়। অনেকের ধারণা মতে খিয়াংরা প্রাকৃতির পূজারী ছিল। তারা প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস বা শক্তিকে পূজা করতো । এখনো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী খিয়াংরা বিভিন্ন দেব-দেবীর কাছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পূজা দিয়ে থাকে ।

কে এই সকল পূজা দিতে পারে? যিনি সাধারণত বিশেষভাবে পূজা দেবার কাজে অভিজ্ঞ সেই লোকই পূজা দিতে পারত । এই পূজা দেবার কাজে অভিজ্ঞ লোককে খিয়াং ভাষায় বলা হয় ‘æনাত সারা’ । এর বাংলা অর্থ ভূতের শিক্ষক । এই নাত সারাকে কিছুটা হলেও মন্ত্র-তন্ত্র বিদ্যা জানতে হয়। নতুবা পূজা দিতে গিয়ে সেই ভুত বা দেবতাকে দমিয়ে রাখতে না পারলে হিতে বিপরিত হবার সম্ভাবনা থাকে বলে নিজেদের আত্ম রক্ষা মূলক মন্ত্র-তন্ত্র বিদ্যা অর্জন করতে হয় ।

রোদের আদি ধর্ম মতে তাদের কোনো সদস্য মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে রাং-থ্রাম বাজিয়ে মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা হয়। শোক সংবাদ শুনে আত্মীয়স্বজনরা ছুটে আসে। মৃত ব্যক্তিটি যদি পুরুষ হয়, তাহলে মৃত্যু সংবাদ প্রথম পাঠাতে হয় মৃতের মাতৃগোষ্ঠীর কাছে। মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় গারো পুরুষদের সাধারণত স্ত্রীর বাড়িতে চলে যেতে হয়। মৃত্যুর সংবাদ শুনে মা-বাবা তড়িঘড়ি চলে আসতে পারেন না। আর্থিক অবস্থাভেদে মা-বাবাকে ষাঁড় বা গরু, ছাগল, শূকর, মোরগ-মুরগি ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় মৃতের বাড়িতে। সাংসারেক গারো সদস্যের মৃত্যুর পর তার মায়ের গোত্রের মেয়েরা এসে মৃতকে স্নান করায়। মৃত ব্যক্তি ধনী হলে সে ক্ষেত্রে চু বা গারো মদ দিয়ে তার মরদেহ স্নান করানোর নিয়ম রয়েছে। আবার গরিব হলে জল দ্বারা স্নান করানো হয়।

সাংসারেক রীতিনুসারে গারো সাংসারেক বিশ্বাসী শেষকৃত্যানুষ্ঠান- সাংসারেক গারোরা জন্মান্তরে বিশ্বাসী। হিমাংশু মজুমদার তার ভারতের আদিবাসী গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মৃত্যু সম্পর্কে গারোদের বিশ্বাস; শরীরের মাঝে আত্মা বাস করে। মৃত্যুর ফলে আত্মা শরীর ছেড়ে মাংরু এবং মাংরাম নামক স্থানে চলে যায়। মাংরু এবং মাংরাম হল আত্মার ভালো-মন্দের বিচারের স্থান। যতদিন না পুনর্জন্ম হয় ততদিন আত্মা সেখানে স্থায়ী হয় বলে তাদের বিশ্বাস। তাদের মতে মৃত্যুর কারণ অনুযায়ী আত্মার পরিণতি ঘটে। যেমন কেউ ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে সে গোবরে পোকারূপে পুনর্জন্ম নেয়। আবার বাঘ বা হাতির আক্রমণে নিহত হলে বা মারা গেলে সে জন্তুরূপে জন্ম নেয়। কখনও আর মানুষরূপে পুনর্জন্ম নিতে পারে না।

অন্যদিকে সুভাষ জেংচাম তার ‘বাংলাদেশের গারো সম্প্রদায়’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, গারোদের (সাংসারেক গারোদের) বিশ্বাস জন্মান্তর গ্রহণের প্রস্তুতি পর্বে বিদেহী আত্মা সাময়িকভাবে চিকমাং পাহাড়ে অবস্থান করে। এ চিকমাং পাহাড়টি গারো পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। যা বাংলাদেশের কলমাকান্দা দুর্গাপুর এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। সড়কপথে ভ্রমণ করলে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা পথে শ্যামগঞ্জ থেকে শুরু করে নেত্রকোনা ঠাকুরাকোনা থেকেও উত্তর দিগন্ত বরাবর তাকালে চিকমাং পাহাড় চূড়াটি দেখা যায়।

মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে গারোদের ভিন্ন ভিন্ন গোত্রে ভিন্ন ভিন্ন রীতি প্রচলিত। কোনো কোনো গোত্রে মরদেহ আগুনে পোড়ানো হয়। আবার কোনো গোত্রে মাটিতে সমাহিত করা হয়। অবশ্য মাটিতে পুঁতে রাখার রীতি শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন কেউ যদি কলেরা, বসন্ত, কুষ্ঠ, কালাজ্বরের কবলে পড়ে মারা যায়, তাদের মরদেহ মাটিতে পুঁতে দেয়া হয় বা সমাধিস্থ করা হয়। সময় তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র মরদেহের সঙ্গে দেয়া হয়। বার্ধক্যজনিত কারণে কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যু হলে সে ক্ষেত্রে মরদেহ কাঠের বেদিতে দাহ করার রীতি রয়েছে। তারা সদলবলে শোভাযাত্রা করে মরদেহ গাংচি বা খাটিয়ায় করে দাহ করার জন্য শ্মশানে নিয়ে যায়। দাহ স্থানে প্রথমে চার কোণে চারটি খুঁটি পুঁতে তার ওপর বড় বড় কাঠ সজ্জিত করা হয়। এ ক্ষেত্রেও মৃতের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র শবদাহের সময় সঙ্গে দেয়া হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস মৃতের আত্মাকে বিভ্রান্ত করার জন্য পরপারে অপদেবতা ওঁৎ পেতে থাকে। তখন মৃতের ব্যবহার্য ওই সব তৈজষপত্র বা অন্যান্য জিনিসপত্র ওই অপদেবতাকে দিয়ে মৃতের আত্মা নির্বিঘ্নে তার গন্তব্যে চলে যেতে পারে। মৃতদেহকে কাঠের ওপর রেখে তারপর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত দাহ কাজে মাদার বা পারিজাত গাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দাহ করা মরদেহের অদগ্ধ হাড় ও চিতার ছাই একটি পাত্রে পুরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। মৃতের সঙ্গে দেয়া জিনিসপত্র অদগ্ধ অবস্থায় থাকলে মৃতদেহ দাহকারী স্বজনেরা সেগুলো নিয়ে যেতে পারে। অতঃপর সে স্থানে ছোট ত্রিকোণাকৃতির একটি ছোট ঘর তৈরি করে খড় দিয়ে ছেয়ে রাখা হয়। সে ঘরকে বলা হয় দেল্লাং। গারোদের বৃহৎ বার্ষিক অনুষ্ঠান ওয়ানগাল্লা। কোনো কোনো গোত্রের রীতি অনুযায়ী ওই ওয়ানগাল্লা বা চুগান পালনের সময় ওসব দেল্লাং বা খ্রমগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়। এভাবে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মৃতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়।

খামাল জনিক নকরেক এর চিতানল

সাংসারেক রীতি অনুযায়ী কোনো গারো সদস্য মারা গেলে সেখানে রাং থ্রাম বাজিয়ে শোক সংবাদ প্রচার করা হতো, এখন সে স্থান দখল করেছে খ্রিস্ট রীতির ঘণ্টাধ্বনি। ধর্মান্তরিত কোনো গারো সদস্য মারা গেলে মৃত্যু সংবাদ এখনও প্রথমে তার মাতৃগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো হয়। মৃত্যু সংবাদ শুনে এখনও সীমান্তের ওপারে তথা মেঘালয়ে ধর্মান্তরিত গারোদের আত্মীয়স্বজনরা মৃতের বাড়িতে যাওয়ার সময় গরু-ছাগল-শূকর-হাস-মুরগি ইত্যাদি নিয়ে যায়। ওসব পশু-পাখি মেরে সেগুলোর মাংস দিয়ে মৃতের বাড়িতে ভোজনানুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু এপারে অর্থাৎ বাংলাদেশে খ্রিস্টান গারোরা অবশ্য মৃত্যু সংবাদ শুনে ছুটে আসে। যথারীতি খ্রিস্ট নিয়মে মৃতকে কবর দেয়া হয়। তবে মৃতের বাড়িতে কোনো ভোজনানুষ্ঠান হয় না। মৃত্যুর কিছুদিন পর অনুষ্ঠানটি করা হয়, সে সময় আত্মীয়স্বজনরা তাদের সামর্থ্যানুযায়ী গরু-ছাগল-শূকর-হাস-মুরগি ইত্যাদি নিয়ে এসে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ধর্মান্তরিত গারোরা এখন ওয়ানগালা অনুষ্ঠান করে শুধু অতীত ঐতিহ্য রক্ষার জন্য, ধর্ম বিশ্বাসের কারণে নয়। গারোদের শেষকৃত্য এখন না পুরোপুরি খ্রিস্ট ধর্ম রীতিতে, না আদি সাংসারেক রীতিতে হচ্ছে। বরং বলা যায় উভয় রীতির গ্রহণযোগ্য এক সমন্বিত নিয়মে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ধর্মান্তরিত গারোদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।

সাংসারেক ধর্ম বা বিশ্বাস আসলে কী- খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করার আগে গারোদের আদি ধর্ম ছিল সাংসারেক এটি দ্রুব সত্য কথা। আজ থেকে প্রায় দেড় বা দু’শো বছর পূ্র্বে গারোরা প্রায় সবাই নিজেদের আদি ধর্ম সাংসারেক পালন করতো। অর্থাৎ গারোরা নৃ-গোষ্ঠী সর্বপ্রাণবাদী। গারোদের আদি ধর্ম Animistic। এহেন Animistic বলতে উপকারী ও অনিষ্টকারী বহু উপদেবতায় বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে ঘিরেই গারো নৃ-গোষ্ঠীর জীবনে অসংখ্য কৃত্য বা Ritual বিদ্যমান। তাদের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ মিথ (Myth) বা পুরাণ।

মোদ্দা কথা, গারোদের আদি ধর্ম বহু-দেবতা ভিত্তিক। বিশ্বসৃষ্টির ইতিহাস, মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস, পৃথিবীর জন্ম ও মানুষের বসবাসসংক্রান্ত পুরাণ কাহিনী। এমন কী নৃত্য-গীত-বাদ্যেরও স্বতন্ত্র দেবতা ও পুরাণ বিদ্যমান। অন্য অনেক আদিম জাতির মতোই গারো নৃ-গোষ্ঠী সূর্যপূজাকে সর্বোচ্চ কৃত্য বা Ritual গণ্য করে। এই ধর্মে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, বজ্র, বৃষ্টি প্রভৃতির পূজার বিধান রয়েছে।  কিন্তু এর পাশাপাশি গারোরা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বরাবর বিশ্বাস করে এসেছে। তিনি যে এই পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা এ বিশ্বাস গারোদের মধ্যে ছিল। গারোরা একইসঙ্গে মানবদেহে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী এবং সেই আত্মা যে অবিনশ্বর এটাও তারা বিশ্বাস করে। তারাও হিন্দুদের মতো জন্মান্তর বাদে বিশ্বাসী। গারোদের প্রথাগত বিশ্বাস ও সংস্কার সর্বস্ব একটি অনানুষ্ঠানিক কৃষিভিত্তিক ধর্মোৎসব রয়েছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, ফসল সংরক্ষণ, রোগশোক, মহামারী, ভূত-প্রেত-রাক্ষস ইত্যাদি অদৃশ্য অপশক্তির অমঙ্গল থেকে বাঁচার জন্য তারা বারো মাসে তেরো কিংবা ততোধিক ব্রত ও পর্ব-পার্বণ পালন করে।

এই সাংসারেক গারো নৃ-গোষ্ঠী সর্বপ্রাণবাদী। তবে, অন্যান্য ধর্মের মত এ সাংসারেক ধর্মের কোন প্রমানপত্র বা ধর্মগ্রন্থ নেই। আদিমকাল থেকে এই ধর্ম মুখে মুখে এবং ধর্মাচার পালনের মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত যৎসামান্য টিকে রয়েছে। উল্লেখ্য, গারোদের আদিধর্ম সাংসারেক ধর্মের সাংসারেক ধর্মে প্রায় ৭০০০ দেবতা, উপদেবতা রয়েছে। সাংসারেক ধর্ম অনুযায়ী তারা আকাশ, বাতাস, সুর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্রের পূজা করে, বাস্তুভিটার পূজা করে, ফসলের ভাণ্ডারের পূজা করে, ঘরের খুঁটির পূজা করে। এমনিভাবে সব কিছুতেই তারা প্রাণের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে তাদের দৈনন্দিন ক্রিয়া-কর্ম, উৎপাদন ও জীবন-সংগ্রাম পরিচালিত করে। কিন্ত কালের বিবর্তনে গত পঞ্চাশ থেকে আশি দশকে মধ্যে প্রায় শতভাগ গারোরা খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়। এক কথায় বলা যায়, সাংসারেক অনুসারী এখন প্রায় শূণ্যকোঠায়।

গারোদের আদি ধর্মে বিশ্বাস তথা সাংসারেক সদস্যের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। ১৮৬৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, রোববার মি. ব্রনসন নামক জনৈক শ্বেতাঙ্গ ব্যাপটিস্ট মিশনারি আসামের গৌহাটির অদূরে সুখেশ্বর ঘাট নামক স্থানে উমেদ ও রামখে নামে দুজন গারো যুবককে প্রথম খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করেন। সেই থেকে গারোরা খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রভাবে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে। এখনও সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অতি অল্প সংখ্যক আদি ধর্ম বিশ্বাসী গারো বা সাংসারেক যারা আজও আদি রীতি মেনে চলছে, তা একদিন শূন্যের কোঠায় পৌঁছবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ধর্মান্তরিত গারোরা তাদের আদি সামাজিক নিয়মাচারের বৃত্ত থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

গারোহাব টিমকে জনিক নকরেক এর ছোট মেয়ে বিজন্তি মৃ এই শিকড়তুল্য মানুষের গল্প শুনিয়েছেন। আধুনিক সভ্যতায় নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজেদের আদি শেকড়, সাংসারেক ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রাখার রোমাঞ্চকর গল্প শুনে বিমোহিত। এরপর জনিক নকরেকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গারোহাব টিম পথ ধরলো বেদুরিয়া গ্রামের পথে। মাত্র আধা কিলো পথ পেরিয়ে যাবার আগেই ফোন এলো গারো তরুণ নেতা অলিকের ফোন। ফোনে বলছে, জনিক আচ্চু আর নেই। অতপর নির্বাক গারোহাব টিম! বিশ্বাস হচ্ছিল না যার বাড়ীতে মাত্র ১০টা মিনিট আগে গারোহাব টিম তার পাশেই ছিল, যে মানুষটার জন্য সেই উঠোনে কিছুক্ষণ আগে অবস্থান করেছিল আর সেই মানুষটা ছেড়ে চলে গেলো পরপারে। হয়তোবা গারোহাব টিমই ছিলো জনিক নকরেকের শেষ দর্শনার্থী; যার চলে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে তার সাক্ষাতে গিয়েছিলেন। নিজের ভেতর তীব্র জ্বালা অনুভব করছিলাম এই ভেবে যে; তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আরও বহু আগে কেন এলাম না ! পরক্ষণে নিজের অপরাধী মন বলে, হয়তো এই প্রবীণ সাংসারেক যাজকের শেষ বিদায় জানাতেই এসেছিলাম!

গারো খামাল জনিক নকরেক ছিলেন গারোদের আদি সাংসারেক ধর্মের ধারক ও বাহক। জনিক নরেকের মতোন সকল গারো এলাকাতেও সাংসারেক ধর্মের খামাল, মাদ্দক ছিল। কিন্তু খুদ মধুপুর আ.বিমা শালবনের খামাল জনিক নকরেক ছিলেন অন্যতম। তিনি প্রতি বছর ওয়ানগালাসহ গারোদের সাংসারেক ধর্মের সব ধরণের পূর্জা পার্বন আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন। গারোদের শতাধিক দেব দেবীর নাম তিনি বলতে পারতেন এবং বাড়িতে সকল দেবদেবীর নাম সংরক্ষণ করতেন। তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গারোদের ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে খামালের দায়িত্ব পালন করেছেন। গারো অঞ্চলের প্রায় শতভাগ এলাকায় গারোদের আদি সংসারেক ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হলেও তিনি তার পরিবারে একাই আদি বিশ্বাসকে আমৃত্যু লালন ও ধারণ করে পালন করেছেন। এই গারো সমাজ, সংস্কৃতি ও আদি ধর্ম লালন, ধারণ ও সংরক্ষণকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক ও গবেষকগণ গবেষণা বিষয় করে অনেক বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি নিজে আদি গারো সাংসারেক ধর্মকে যক্ষের ধনের মতোন লালন ও ধারণ করে গেছেন শতবছর।

জনিক নকরেক গারো জনগোষ্ঠীর শুধুমাত্র সাংসারেক খামাল হিসেবে নয়; তিনি সাংসারেক ধর্মের কিংবদন্তি, এবং স্বাক্ষী হয়ে থাকবেন। গারোদের বিশ্বাস; শরীরের মাঝে আত্মা বাস করে। মৃত্যুর ফলে আত্মা শরীর ছেড়ে মাংরু এবং মাংরাম নামক স্থানে চলে যায়। মাংরু এবং মাংরাম হল আত্মার ভালো-মন্দের বিচারের স্থান। যতদিন না পুনর্জন্ম হয় ততদিন আত্মা সেখানে স্থায়ী হয় বলে তাদের বিশ্বাস। তাদের মতে মৃত্যুর কারণ অনুযায়ী আত্মার পরিণতি ঘটে। আমার বিশ্বাস জনিক নকরেক এর দেহের মৃত্যু হয়েছে কেবল; কিন্ত তার রেখে যাওয়া সাংসারেক ধর্মের সুসমাচার নতুন প্রজন্মের কাছে পৌচ্ছুবে, পৌচ্ছুবে-ই আজ অথবা কাল। (তথ্য ‍সূত্র: দ্যা বিউটি অব গারোজ, অপ্রকাশিতব্য)

লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভপেজ ডেভেলপার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার, ব্লগার এবং
সাহিত্য কর্মী  lchiran76@gmail.com

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
3475
গারোদের পারিবারিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%ae%e0%a7%82%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ac/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%2597%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%258b%25e0%25a6%25a6%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%25aa%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25ac%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%25ae%25e0%25a7%2582%25e0%25a6%25b2%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25af%25e0%25a6%25ac Tue, 14 Sep 2021 11:35:48 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=3227 The post গারোদের পারিবারিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার appeared first on The Abima Times 24 News.

অন্যান্য জাতির পরিবারের চেয়ে গারোদের পারিবারিক মূল্যবোধ কোন অংশেই কম নয়, বরং বলা যায় ক্ষেত্র বিশেষ অনেক উপরে। গারো পরিবারে পুরুষ বা গৃহকর্তা কর্তৃক কোন স্ত্রী বা সন্তানদের নিগৃহীত হতে হয় না। তেমনই, স্বামীরা স্ত্রীর পরিবারে বা শ্বশুরবাড়িতে জামাই হিসাবে আসলেও তার স্ত্রীর দ্বারা অপমানিত, তুচ্ছ্ব-তাচ্ছ্বিলের শিকার হতে হয় না। পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ যেমন শ্বশুর […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post গারোদের পারিবারিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার appeared first on The Abima Times 24 News.

অন্যান্য জাতির পরিবারের চেয়ে গারোদের পারিবারিক মূল্যবোধ কোন অংশেই কম নয়, বরং বলা যায় ক্ষেত্র বিশেষ অনেক উপরে। গারো পরিবারে পুরুষ বা গৃহকর্তা কর্তৃক কোন স্ত্রী বা সন্তানদের নিগৃহীত হতে হয় না। তেমনই, স্বামীরা স্ত্রীর পরিবারে বা শ্বশুরবাড়িতে জামাই হিসাবে আসলেও তার স্ত্রীর দ্বারা অপমানিত, তুচ্ছ্ব-তাচ্ছ্বিলের শিকার হতে হয় না। পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ যেমন শ্বশুর শাশুড়ি, নানা-নানি, চ্রাদের এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু সন্তানদের অধিকার থাকে সর্বাগ্রে। প্রবীণদের প্রতি সম্মানবোধ আমরণ সেবা যত্ন আন্তরিকতার সাথে পালন করে থাকে। ছোটদের প্রতি আদর, স্নেহ ভালোবাসা, সেবা শুশ্রুষা হতে কাউকেই বঞ্চিত হতে হয় না; এমনকি সৎ ছেলে-মেয়ে, নিকটাত্মীয় বা নিজ গোত্রের কোন অনাথ সন্তানদেরকেও বিনা বাক্যে সন্তানের মতো লালন-পালন করে থাকে। বলা যায়, একারণে গারোদের পরিভাষায় ভিক্ষুক, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা বলে কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না।

পুরুষরা মাঠে কাজ করবে বা উপার্জন করবে, আর নারীরা ঘরের কাজকর্ম সামলাবে- প্রচলিত এমন রীতি বা সংস্কার প্রায় সমাজের অন্যতম উদাহারণ; কিন্তু গারোদের পারিবারিক রীতি এমন নয়। পারিবারিক সম্পত্তির একচ্ছত্র অধিকারী না হয়েও গারো পুরুষদের পারিবারিক দায়িত্ব পালন অন্যান্য সমাজের পুরুষদের তুলনায় আরোও বেশি উদার এবং আন্তরিক। পারিবারিক অন্যান্য জাতির পরিবারের মতো গারো সমাজেও পরিবারের কর্তা থাকেন পিতা বা শ্বশুর। কর্তা হিসাবে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভালো-মন্দের দায়িত্ব এবং সহায় সম্পত্তির রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব পুরুষের উপর ন্যাস্ত থাকে। আর চ্রা হিসাবেও নিজ গোষ্ঠীর সকলের উপরে এবং তাদের সম্পদের উপরে সিদ্ধান্ত বা মতামত আদান-প্রদানের ক্ষমতা থাকে প্রতিটি গারো পুরুষের। অন্যদিকে স্ত্রী/শাশুড়িকে গৃহকর্তৃর ভূমিকা পালন করতে হয়। সাংসারিক কর্মে পুরুষের পাশাপাশি সকল নারীই অবলীলায় মনোনিবেশ যেমন করতে পারে; তেমনই নিজ গোষ্ঠীর ভেতরে আমা-মানক হিসাবে অন্যান্য পরিবারেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

গারোরা পুরুষ নারী নির্বিশেষে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। অন্যদিকে পরিবারের সকল ছেলে সন্তান চ্রা-পান্থে হিসাবে গোষ্ঠির সবার কাছে সম্মানিত হয়ে থাকে। পরিবারের মেয়ে সন্তানদের বড় ও ছোট ভাই এবং সব ক’টি মামার সমন্বয়ে এই চ্রা-পান্থে দল গঠিত। এই চ্রাগণ নিজ গোষ্ঠীতে পারিবারিক বিষয় এবং সম্পত্তি রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। কোন পরিবার বা গোষ্ঠির সমস্যা, বিবাদ, অমিল, মতানৈক্য ইত্যাদি নিরসনের দায়িত্ব এই চ্রাদের উপর। এককথায় বলা যায়- ধর্মীয়, সামাজিক এবং প্রথাগত আইন সংক্রান্ত যেকোন সমস্যায় পরিবারের মেয়েদের পক্ষাবলম্বন করা এবং তাদের স্বার্থরক্ষা করা এই দলের দায়িত্ব। আবার, যেকোন বিপদাপদ অথবা সমস্যাকালে পরিবারের প্রতিটি ছেলে সন্তানের পাশে দাঁড়ানো এবং এর যে কোন সমস্যা মোকাবেলা করার দায়িত্ব ফা-গাছিদের উপর। পরিবারের ছেলে সন্তানদের বড় বোন এবং ছোট বোন ও তাদের স্বামীরা, মাসীমারা ও মেসোমশাইরা এই দলের অন্তর্ভূক্ত।

পরিবার পরিচালনায় গারো পুরুষের পূর্ণ স্বাধীনতা বা অধিকার থাকলেও পরিবারের সমূহ সম্পত্তি এবং ছেলে-মেয়েদের উপর একচ্ছত্র অধিকার থাকে মা/শাশুড়ির কাছে। সন্তানদের লালন-পালন, শাসন, ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব এবং পরিবারের প্রয়োজনে জমি-জমা বা অন্যান্য সম্পত্তির ক্রয় বিক্রয়ের অধিকার পুরুষ/পিতার হাতে থাকে। তবে, যে কারণেই হোক সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা ভাগবাটোয়ারার প্রয়োজন হলে স্ত্রী/শাশুড়ি এবং চ্রা-মানকদের মতামতের ভিত্তিতে করাটাও স্বামী/পিতাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। কোন কারণে পুরুষ/স্বামী স্ত্রীর পরিবার ছেড়ে বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের ফলে অন্যত্র চলে গেলেও গেলেও কোন পুরুষ সম্পত্তি বা ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে যেতে পারেন না। মূলত, গারো সমাজে বা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের অধিকার নিশ্চিত করাকে গারোরা প্রাধান্য দিয়ে থাকে; অন্যথায় গারো সমাজের ভেতরেই স্ব-স্বগোষ্ঠিতে আলাপ-আলোচনা বা সালিশ বিচারের মাধ্যমে অধিকার ফিরে পাওয়ার সুযোগ পেতে পারে।

পারিবারিক বা সাধারণ শিষ্টাচার-

  • পারিবারিকভাবে বয়োজ্যাষ্ঠ সকলেই শ্রদ্ধার পাত্র, তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদান করা উচিত।
  • বয়োজ্যাষ্ঠদের উপস্থিতিতে দৃষ্টিকটু আচরণ করা যাবে না; এমনকি ছোটদের উপস্থিতিতেও এসব করা যাবে না।
  • গৃহাভ্যন্তরে কোন পুরুষ উপবিষ্ট থাকলে কোন মহিলা ঘরের দরজায় প্রকাশ্য স্থানে দাঁড়াবে না। বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে যদি কোন মহিলাকে ঘরের ভেতরে বাইরে যাতায়ত করতে হয় তবে সে উত্তমরূপে নিজের পশ্চাদ্দেশ কাপড় দিয়ে ঢেকে যেতে হবে।
  • গুরুজনদের উপস্থতিতিতে বা বাড়িতে কেউ শিস দিবে না। এমনকি কারোর সাথে হাস্যরস, ঠাট্টা পরিহাস, বা অশ্রাব্য কটুভাষা ব্যবহার করবে না।
  • মেয়েরা বিশেষভাবে অবিবাহিত মহিলারা তাদের কাকা, মামা, বড় ভাইদের পরিধেয় বস্ত্র স্পর্শ করবে না।
  • কোন মুরুব্বী শ্রেণীর লোক যদি বাড়ির ভেতর বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন অথবা বাইরেও যদি বসে থাকেন, তাদের সামনে দিয়ে বা ডিঙ্গিয়ে কোন মেয়ে/মহিলা হাঁটবে না।
  • কোন পুরুষ কোন মহিলার ব্যবহৃত বস্ত্র ব্যবহার করবে না। মহিলারাও কোন পুরুষের পরিধেয় বস্ত্র ব্যবহার করবে না।
  • কোন অভিভাবক বা বয়োজ্যাষ্ঠ নবদম্পতি, বা ছেলে-মেয়ের রুমে বিনা কারণে বা সামান্য প্রয়োজনে প্রবেশ করবে না। এমনকি তাদের অনুপস্থিতিতেও না। তবে, প্রয়োজনে আগাম বার্তা বা সংকেত দিয়ে প্রবেশ করতে পারে।
  • কোন পুরুষ তার স্ত্রীর বড় বোন, শাশুড়ি সম্পর্কের কারোর সাথে ঠাট্টা বা হাস্যরস করবে না। মহিলারাও শ্যালিকা, বৌদি এবং বান্ধবী ছাড়া কারোর সাথে ঠাট্টা মশকরা করবে না।
  • কোন পুরুষ মানকদের সাথে বা তাদের উপস্থিতিতেও অশোভন কথাবার্তা বা ঠাট্টা করবে না।
  • কোন বিবাহিতা মহিলা শশুর সম্পর্কীয় এবং ভাশুর সম্পর্কীয় কারোর সাথে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলবে না।
  • কোন মেয়ে বা মহিলা যুবকদের ঘরে প্রবেশ করবে না। তবে বিশেষ প্রয়োজনের পেছনের দরজা দিয়ে প্রবীণা মহিলারাই অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন।
  • কোন পরিবারে অতিথি আসলে তাকে বিনয়ের সাথে খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া গৃহকর্তা/গৃহকর্তীর কর্তব্য।
  • কোন গৃহিণী তার স্বামীকে, বাইরের কোন পুরুষকে হাড়ির তলদেশের পোড়াভাত বা তরকারি পরিবেশন করবে না।
  • কাউকে কোন জীবজন্তুর বাচ্চা বলে গালি দেওয়া যাবে না। প্রকৃতপক্ষে এই গালিটা চলে যায় তার পিতা-মাতার উপর।
  • ক্রোধবশত বয়োজ্যষ্ঠদের গায়ে হাত তোলা যাবে না; এমনকি তাঁদের উদ্দেশে হাত বা আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলা যাবে না।
  • কেউ যতোই খারাপ ব্যবহার করুক না কেন, কারো অমঙ্গল কামনা বা অভিশাপ দেওয়া যাবে না।

এতদসত্ত্বেও আধুনিক শিক্ষা, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, জীবিকার ক্রমবিকাশ, বৃহত্তর সমাজের সামাজিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ইত্যাদির প্রভাবে গারো সমাজের পরিবারেও কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তনের ভালো মন্দ উভয় দিকই হয়তো আছে। কিন্তু গারোদের আদি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যাবে সামাজিক এই অসম বিবর্তনে ভালোর তুলনায় মন্দের অনুপ্রবেশও কম নয়। তথ্য সূত্র: গারো সংস্কৃতির মাধুর্য  (The Beauty of Garo’s)

লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভপেজ ডেভেলপার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার, ব্লগার এবং
সাহিত্য কর্মী  lchiran76@gmail.com

 

 

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
3227
বেশ্যা শব্দটির মানে কী – তসলিমা নাসরিন https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%b6%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a7%80-%e0%a6%a4%e0%a6%b8/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%25ac%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b6%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25af%25e0%25a6%25be-%25e0%25a6%25b6%25e0%25a6%25ac%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25a6%25e0%25a6%259f%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%25ae%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25a8%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%2595%25e0%25a7%2580-%25e0%25a6%25a4%25e0%25a6%25b8 Thu, 05 Aug 2021 09:51:40 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=2930 The post বেশ্যা শব্দটির মানে কী – তসলিমা নাসরিন appeared first on The Abima Times 24 News.

কোনও মেয়ে বেশ্যা হয় না, পুরুষেরা তাদের বেশ্যা বানায়। তাই সভ্য মানুষেরা এই মেয়েদের ‘প্রস্টিটিউট’ বলে না, বলে ‘প্রস্টিটিউটেড উইমেন” । জনপ্রিয় সাহিত্যক এবং নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এর বেশ্যা শব্দটির ব্যাখ্যা যেকোন সাংস্কৃতিকমনা এবং প্রগতিশীল চিন্তকের মনে ধরবে। তাঁর চিন্তা শক্তির প্রখরতা, লেখনী আমাদের ঝিমানো সমাজ, সমাজ ব্যবস্থাকে, চেতনায় ভাঁজ পড়া মনুষ্যত্ব নাড়িয়ে দেয়। […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post বেশ্যা শব্দটির মানে কী – তসলিমা নাসরিন appeared first on The Abima Times 24 News.

কোনও মেয়ে বেশ্যা হয় না, পুরুষেরা তাদের বেশ্যা বানায়। তাই সভ্য মানুষেরা এই মেয়েদের ‘প্রস্টিটিউট’ বলে না, বলে ‘প্রস্টিটিউটেড উইমেন” ।

জনপ্রিয় সাহিত্যক এবং নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এর বেশ্যা শব্দটির ব্যাখ্যা যেকোন সাংস্কৃতিকমনা এবং প্রগতিশীল চিন্তকের মনে ধরবে। তাঁর চিন্তা শক্তির প্রখরতা, লেখনী আমাদের ঝিমানো সমাজ, সমাজ ব্যবস্থাকে, চেতনায় ভাঁজ পড়া মনুষ্যত্ব নাড়িয়ে দেয়। যেমনটি তিনি এক ফেবু স্ট্যাটাসে আজ লিখেছেন।

তিনি সেখানে লিখেছেন, দরিদ্র নিপীড়িত মেয়ে, পুরুষ দ্বারা প্রতারিত হয়ে সমাজ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে, নানা জাতের নানা বয়সের নানা মেজাজের অচেনা অজানা পুরুষদের কাছে দেহ বিক্রি করে দু’পয়সা রোজগার করতে যারা বাধ্য হয়, তাদেরই বেশ্যা বলা হয়।

কোনও মেয়ে বেশ্যা হয় না, পুরুষেরা তাদের বেশ্যা বানায়। তাই সভ্য মানুষেরা এই মেয়েদের ‘প্রস্টিটিউট’ বলে না, বলে ‘প্রস্টিটিউটেড উইমেন’।

এই সংজ্ঞাটি শোনার পর এক পাল নারীপুরুষ খেঁকিয়ে উঠে বলবে কলেজ ছাত্রীরা বাড়তি টাকার জন্য দেহ বিক্রি করে। আমি জানি সে কথা, কিন্তু সংজ্ঞাটি লক্ষ কোটি মেয়ের কথা ভেবে তৈরি করা, তুলনায় অতি সামান্য মেয়ের কথা ভেবে নয়।

তসলিমা নাসরিন

বাংলাদেশের পুরুষেরা আশির দশক থেকে লক্ষ্য করেছি, এই সংজ্ঞার বাইরে গিয়ে মেয়েদের বেশ্যা বলে। আমি যখন পুরুষতন্ত্রের সমালোচনা করে লেখা শুরু করেছি, আমাকে পাল পাল পুরুষেরা ‘বেশ্যা’ বলে গালি দিয়েছে। শুধু ধর্মান্ধ অশিক্ষিত মৌলবাদিরা নয়। শিক্ষিত শ্রেণী যাদের বলি, তারাও। এখন প্রশ্ন হলো, আমি কি দেহ ব্যবসা করে টাকা উপার্জন করতাম? না, আমি ছিলাম ঢাকা শহরের স্বনামধন্য দুটো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল — মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিক্যালের সম্মানিত ডাক্তার। আমি ছিলাম জনপ্রিয় সাহিত্যিক। আমার কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস ছিল বেস্ট সেলার লিস্টে। প্রকাশকেরা আমাকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা অগ্রীম রয়্যালটি দিত। আমি যদি মেয়ে না হয়ে পুরুষ হতাম, তাহলে বেশ্যা বলে গালি দেওয়া পুরুষেরা আমাকে নমো নমো করতো। তসবিহ হাতে নিয়ে যেমন আল্লাহ নাম জপে, তেমন জপতো আমার নাম।

বেশ্যার সংজ্ঞায় না পড়লেও আমাকে বেশ্যা বলে কেন ডাকা হয়েছে অথবা আজও কেন হয়? আমি যে পুরুষদের সঙ্গে শুয়েছি, তাদের কাছ থেকে কি কানাকড়ি নিয়েছি? না, বরং তাদের পেছনে আমার যথেষ্ট টাকা খরচ হয়েছে। তাহলে ওই পুরুষদের বেশ্যা বলে না ডেকে আমাকে কেন ডাকা হয়? ডাকা হয় কারণ আমি আমার বইগুলোতে সত্য কথা বলেছি, কাউকে তোয়াক্কা না করে বলেছি, কারণ আমি সত্যবাদী এবং সাহসী। আমার এই সততা, সাহস এবং আত্মসম্মানবোধ তাদের সহ্য হয় না বলে বেশ্যা বলে গালি দেয়।

বাংলাদেশে বেশ্যা বলে যে মেয়েদের না ডাকা হয়, তাদের সম্পর্কে আমার উচ্চ ধারণা নেই। বেশ্যা বলা হলে আমি বুঝে যাই এই মেয়েগুলো নষ্ট পচা সমাজে সাহসী স্বনির্ভর আত্মসম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে চলা মেয়ে। যাদের ভালো মেয়ে বলে ডাকা হয়, তাদের সম্পর্কে আমার ধারণা, এরা পচা পুরুষতন্ত্রের ধারক এবং বাহক, এরাও প্রগতির বিরুদ্ধে, এদের মস্তিস্কে কিছু নেই, এদের চরিত্র বলেও কিছু নেই।

 

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
2930
হারিয়ে যেতে বসেছে গারোদের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম বাদ্যযন্ত্র নাগ্রা https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%9b%e0%a7%87-%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a6%e0%a7%87/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%25b9%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25bf%25e0%25a7%259f%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%25af%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25a4%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%25ac%25e0%25a6%25b8%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%259b%25e0%25a7%2587-%25e0%25a6%2597%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%258b%25e0%25a6%25a6%25e0%25a7%2587 Tue, 03 Aug 2021 23:41:03 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=2919 The post হারিয়ে যেতে বসেছে গারোদের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম বাদ্যযন্ত্র নাগ্রা appeared first on The Abima Times 24 News.

ওয়েলসন নকরেক, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: বিশ্বের প্রায় সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠি নৃত্যগীত প্রিয়। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় যেকোন উৎসব-অনুষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রসহকারে তারা একক বা সমবেত নৃত্যগীতি পরিবেশন করে। বাংলাদেশেও আদিবাসী জনগোষ্ঠিসমূহও তাদের এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রবাহমান রেখেছে। গারোরা জন্ম থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত অর্থাৎ সকল অনুষ্ঠানই দামা, রাং, ক্রাম, আদুরি, চেংচাপ এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ছাড়া চলে […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post হারিয়ে যেতে বসেছে গারোদের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম বাদ্যযন্ত্র নাগ্রা appeared first on The Abima Times 24 News.

ওয়েলসন নকরেক, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: বিশ্বের প্রায় সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠি নৃত্যগীত প্রিয়। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় যেকোন উৎসব-অনুষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রসহকারে তারা একক বা সমবেত নৃত্যগীতি পরিবেশন করে।

বাংলাদেশেও আদিবাসী জনগোষ্ঠিসমূহও তাদের এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রবাহমান রেখেছে। গারোরা জন্ম থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত অর্থাৎ সকল অনুষ্ঠানই দামা, রাং, ক্রাম, আদুরি, চেংচাপ এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ ছাড়া চলে নি। বিশেষ করে পুজা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবে এগুলোর ব্যবহার হয়ে থাকে আবশ্যকীয় এবং উদ্দেশ্যমূলক। তাই সাংসারেক খামালগণ বলেন, আমাদের গারোদের বাদযন্ত্রগুলোর আওয়াজ হচ্ছে একেকটা ডাক, আহ্বান এবং প্রচার। গারোদের এসব বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ বা সুরেরও ভিন্নতা রয়েছে। এই ভিন্ন ভিন্ন আওয়াজগুলো শুনেই দূরের মানুষ বুঝে যেতো বাদ্যযন্ত্র বাজানোর উদ্দেশ্য অর্থাৎ ঘটমান প্রকৃত ঘটনা।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে অতীতে প্রায়শই অবস্থাসম্পন্ন বাড়িতে নাগ্রার দ্রিম দ্রিম আওয়াজ শোনা গেলেও এখন কোনো বাড়িতেই এই সুর আর প্রতিধ্বনিত হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মধুপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামে নাগ্রা থাকলেও এখন খুব কমই বাজানো হয়। বেদুরিয়া, জয়নাগাছা, পীরগাছা, সাইনামারি, হাগুরাগুড়ি, গায়রা গ্রামের ১-২টা বাড়িতে নাগ্রা থাকলেও সেগুলো প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।

Nagra 2021

গারোদের ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র নাগ্রা, ছবি: ওয়েলসন নকরেক

গারোদের ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের উপকরণ নিতান্তই সাধারণ এবং এর গঠন প্রণালীও সহজ-সরল। কাঠ, বাঁশ, মাটি, লোহা, পিতল, লাউয়ের খোল, বেল বা নারিকেলের মালা, সুতা, তার, শিং, শঙ্খ, নল, পাতা, প্রভৃতি স্থানীয় উপাদান দিয়ে বাদ্যযন্ত্র তৈরী করা হয়।

নাগ্রা (Nagra) বাদ্যযন্ত্রটি গারোদের অন্যতম প্রধান বাদ্যযন্ত্র। গারো সমাজে নাগ্রার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগ্রা আসলে এক ধরনের ঢোল বিশেষ। নাগ্রা মাটির হাড়ি দিয়ে তৈরি হয়। বড় মাটির হাড়ি আড়াআড়িভাবে কেটে নিচের অংশ দিয়ে নাগ্রা বানানো হয়। দামার ন্যায় গরু, মহিষের চামড়া দিয়ে এর ছাউনি দেওয়া হয়। নাগ্রার আওয়াজ খুবই মোটা স্বরের হয়ে থাকে। এ নাগ্রাটি ঘরের প্রবেশ পথে বা অতিথিশালার ঘরের মাঝখানে রাখার রেওয়াজ রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে কোন অতিথি বা নবাগত ঘরে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে এই নাগ্রা বাজাতে হতো। তা-না হলে ঐ গৃহকর্তা বা লোকজন তাকে মূল্যায়ন করতেন না। নাগ্রার আওয়াজেরও ব্যতিক্রম হতো, যেমন চ্রারা আসলে এর আওয়াজ হতো দিং-দিং-চ্রাচিং-চ্রাদিং; আর নকচামি আসলে দিং-দিং-নকদিং-নকআদাম,দিং-দিং-নকদিং-নকআদাম; এবং নকচিক আসলে নকআদাম, নকচিকদিং ইত্যাদি। অর্থাৎ এই নাগ্রার শব্দে গৃহকর্তা প্রতিবেশী সকলকে চু খাওয়া এবং আলাপ আলোচনার জন্য নিমন্ত্রণ করে থাকেন।

এছাড়াও আদি গারোদের বিশ্বাস, গারোদের প্রতিটি বাদ্যযন্ত্রের সাথে দেবতারা থাকে এবং বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে দেবতারা কথা বলে। তাই গারোদের সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, পূজা উৎসব কিংবা যে কোন বিনোদনে গারোদের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয় অতি যত্নসহকারে, ভক্তিপূর্ণভাবে। সেকারণে গারোরা তাদের বাদ্যযন্ত্রগুলোকে খুবই নিরাপদ স্থানে রাখে যাতে কারোর গায়ে বা পায়ে না লেগে যায়। বাদ্যযন্ত্রের আকার আকৃতি, প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহার বিভিন্ন রকমের।

আদিমকাল থেকেই এই বাদ্যযন্ত্রের কারিগর তারা নিজেরাই। শুধুমাত্র লোহাযুক্ত বাদ্যযন্ত্রের বেলায় কামারের সহায়তা নিতে হতো। বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে বিশেষত্ব মানা হতো বলে গারোদের উৎসব বা উদ্দেশ্য অনুসারে বাদ্যযন্ত্রগুলোর স্বর, আওয়াজ, তাল, লয় ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে বাদ্যযন্ত্রগুলো সংস্কার অথবা উপহার হিসেবে প্রদান করা হতো।

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
2919
গারো ভাষায় দিন, মাসিক ও ঋতু পঞ্জিকা এবং এর ব্যবহার https://theabimatimes24news.com/%e0%a6%97%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8b-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93-%e0%a6%8b%e0%a6%a4%e0%a7%81/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=%25e0%25a6%2597%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a7%258b-%25e0%25a6%25ad%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b7%25e0%25a6%25be%25e0%25a7%259f-%25e0%25a6%25a6%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25a8-%25e0%25a6%25ae%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b8%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%2595-%25e0%25a6%2593-%25e0%25a6%258b%25e0%25a6%25a4%25e0%25a7%2581 Sun, 01 Aug 2021 10:30:53 +0000 https://theabimatimes24news.com/?p=2909 The post গারো ভাষায় দিন, মাসিক ও ঋতু পঞ্জিকা এবং এর ব্যবহার appeared first on The Abima Times 24 News.

মূলত একটি দেশের এবং নির্দিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ঋতু পঞ্জিকা তৈরি হয়। বাংলাদেশে ঋতুকে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। সকল ঋতুর বিরাজকাল সমান না হলেও হিসাবের সুবিধার্থে পঞ্জিকা বৎসরকে সমমেয়াদী কয়েকটি ঋতুতে বিভাজন করা হয়। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ঘেটে জানা যায়, […]

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
The post গারো ভাষায় দিন, মাসিক ও ঋতু পঞ্জিকা এবং এর ব্যবহার appeared first on The Abima Times 24 News.

মূলত একটি দেশের এবং নির্দিষ্ট এলাকার ভৌগোলিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ঋতু পঞ্জিকা তৈরি হয়। বাংলাদেশে ঋতুকে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। সকল ঋতুর বিরাজকাল সমান না হলেও হিসাবের সুবিধার্থে পঞ্জিকা বৎসরকে সমমেয়াদী কয়েকটি ঋতুতে বিভাজন করা হয়।

বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ঘেটে জানা যায়, গারোদের পঞ্জিকার হিসাব মূলত কৃষি ভিত্তিক। গারো ভাষায় যেমন সংখ্যা গণনা রয়েছে, তেমনই সারা বছরের (বিলসিকারি বা সলেতক) জুম চাষের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের নাম; অর্থাৎ দিন, সপ্তাহ, মাস ও ঋতু, কাজের নাম এবং কৃষি উৎসবের নাম রয়েছে। গারোদের নিজস্ব ভাষাতেও দিন, মাসিক, ও ঋতু পঞ্জিকা রয়েছে, যেমন- 

গারো ভাষায় দিন পঞ্জিকা-

গ্রিসো (Griso) – সোমবার

আবেসো (Abeso) – মঙ্গলবার

আইরো (Airo) – বুধবার

মে’চো (Mecho) – বৃহস্পতিবার

নারিংসো (Naringso) – শুক্রবার

সানিচো (Sanicho) – শনিবার

চিগিচো (Chigicho) – রবিবার

 

গারো ভাষায় মাসিক পঞ্জিকা-

গালমাকজা (Galmak ja) – মার্চ

মেবাকজা (Mebak ja) – এপ্রিল

জাগ্রোজা (Jagro ja) – মে

সগালজা (Sogal ja) – জুন

জাগাপজা (Jagap ja) – জুলাই

জামেদকজা (Jamedok ja) – আগস্ট

মেপাংজা (Mepan ja) – সেপ্টেম্বর

আনিজা (A’ni ja) – অক্টোবর

বেরকজা (Berok ja) – নবেম্বর

কিলকজা (Kilok ja) – ডিসেম্বর

আউইতজা (Awit ja) – জানুয়ারি

ওয়াচেংজা (Wacheng ja) – ফেব্রুয়ারি

১)   গালমাক জা (Galmak ja): মার্চ মাস। গারোদের কাছে এটি বছরের প্রথম মাস। অনেকের মতে ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেক এবং মার্চ মাসের অর্ধেক অর্থাৎ বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্রমাস। এ মাসে নববর্ষ উৎসব উদযাপন করা হয়। আসং কোশির (গ্রাম ও জীবন রক্ষক দেবতার) পূজা করা হয়। এ কৃষি সময়কে আসকারী বলা হয়। এ মাসের কৃষি উৎসব হলো ‘দেন বিলসিয়া’ (নতুন কৃষিজমি পরিষ্কারের উৎসব)। গিৎচিপং, মিচিল থাত্তা ইত্যাদি বহু সংখ্যক উৎসব এ মাসে হয়ে থাকে।

২)   মেবাকজা (Mebak ja): এপ্রিল মাস। এটি বৎসরের দ্বিতীয় মাস। এই মাসে কৃষি সময়ের নাম হলো গালমাক বা গেআ কারি। এ মাসে আসিরকা বা আসি অক্কা কৃষ্টি উৎসব হয়। আসি অক্কা অর্থ মন্দ শক্তির প্রভাব দূর করা। এ মাসে পাহাড়ি ধান বোনা হয় এবং সামদিম/সামদুম দাঙা বা আগাছা নিড়ান হয়।

৩)   জাগ্রোজা (Jagroja): জাগ্রোজা গারো পঞ্জিকার বৎসরের তৃতীয় মাস। অর্থাৎ মে মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হলো জাকরাকারি। এ মাসে নতুন কৃষিক্ষেত নিড়ান হয় এবং একে কেন্দ্র করে আ-জাকরা উৎসব পালিত হয়।

৪)   সগালজা (Sogalja) : বৎসরের চতুর্থ মাস; জুন মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হল দাংকারি। এ মাসে দ্বিতীয় বছরে ব্যবহৃত কৃষি ক্ষেত নিড়ান হয়। এর নাম আব্রংদাংআ। এ মাসে ভুট্টা (মিকপ) ফসল তোলা হয় এবং আব্রেং দাঙা উৎসব পালিত হয়।

৫)   জাগাপজা (Jagapja) : জাগাপজা অর্থাৎ জুলাই মাস হচ্ছে গারো পঞ্জিকার বৎসরের পঞ্চম মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হলো মিসিকারি। এ মাসে বামিল (দ্বিতীয় ফসলের জন্য নতুন করে চাষ) এবং আব্রেংরাত্তা হয়। মিসি বা মিসিরি (কাউন), মিখপ (ভুট্টা) তিল এবং অন্যান্য শস্যও এ সময়ে কাটা হয়। এ মাসে ‘মি’ আমুয়া বা রক্ষিমের (শস্য দেবী) পূজা উৎসব হয়।

৬)   জামেদকজা (Jamedokja) : বৎসরের ষষ্ঠ মাস; আগস্ট মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হলো মিত্তেকারি। এ মাসে সামাংদাংআ বা আগাছা নিড়ান হয়। এ মাসে গ্রীষ্মকালীন ফসল তোলা শেষ হয় এবং রংচুগালা, গিন্দেগাল্লা বা মিগিত্তাল উৎসব পালিত হয়।

৭)   মেপানজা (Mepanja) : মেপানজা; বৎসরের সপ্তম মাস। ইংরেজী ক্যালেণ্ডার অনুসারে সেপ্টেম্বর মাস।এ কৃষি সময়ের নাম হলো সামপাংকারি। এ মাসে গারোরা আগাছা পরিস্কার করে।

৮)   নিজা (Anija) : বৎসরের অষ্টম মাস; অক্টোবর। এ কৃষি সময়ের নাম ওয়াছি ছাকাতকারি। এ মাসে গারোদের প্রধান উৎসব ওয়ানগালা ও ঘুরে ওয়াতা উৎসব উদ্যাপিত হয়।

৯)   বেরকজা (Berokja) : বৎসরের নবম মাস। অর্থাৎ নবেম্বর মাস। এ মাসে কার্পাস ফসল তোলা হয় এবং আ’বিয়া উৎসব পালিত হতো।

১০) কিলকজা (Kilokja) : কিলকজা বছরের দশম মাস। ডিসেম্বর মাস। এ মাসে আখিং নকমা (রাজা) আ’দাল (নতুন জমি) চাষের জন্য বিতরণ করা হতো এ মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো উৎসব নেই।

১১) আউইতজা (Awitja) : বৎসরের একাদশ মাস আউইতজা অর্থাৎ জানুয়ারি মাস। এ মাসে নতুন জমি পরিষ্কার করার কাজ আরম্ভ করা হয় এবং অ’পাতা উৎসব পালন করা হয়।

১২) ওয়াচেংজা (Wachengja) : এ কৃষি সময়ের নাম ওয়াচেংজা। এটি বছরের বৎসরের দ্বাদশ মাস, ফেব্রুয়ারী মাস। এ মাসে বরাং তৈরি করার সময়।

গারো ভাষায় ঋতু পঞ্জিকা-

বালরোরোখারি (Palinkhari) – বসন্তকাল

দিং’খারি (Dingkhari) – গ্রীষ্মকাল

ওয়াচি’খারি (Wachikhari) – বর্ষাকাল

আ’রাক’খারি (A’rakkhari) – শরৎকাল

পিলানখারি (Bandonkhari) – হেমন্তকাল

সিন’খারি (Sinkhari) – শীতকাল

গারো ভাষায় ‘জা’ মানে মাস। তাদের নিজস্ব ভাষায় সেগুলোর ব্যবহারও অতি প্রাচীন। গারোদের মাস শুরু মার্চ মাস থেকে। ফলে বছরের শুরু থেকে সারা বছর বিভিন্ন উৎসবও পালিত হতো নিজেদের ঋতু পঞ্জিকায়। বিভিন্ন কৃষিজ ফসল, চাষাবাদ, সংরক্ষণ ইত্যাদি হতো সে ঋতু পঞ্জিকানুসারে। তথ্যসূত্র: গারো সংস্কৃতির মাধুর্য (প্রকাশিতব্য)

লুই সাংমা, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং
সাংস্কৃতিক কর্মী, lchiran76@gmail.com

The post is published by আবিমা টাইম নিউজ at The Abima Times 24 News - .

]]>
2909