বাপন নেংমিঞ্জা, শেরপুর: আইটিসহ ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এখন দারুণ আকর্ষণীয় পেশা। দিনকে দিন বাজারে আইটি বা ফ্রিল্যান্সিং পেশার দাপট বেড়েই চলেছে। এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘরে বসে শিক্ষিত, নানা পেশাজীবি অনেকেই চাকরি না করে ফ্রিল্যান্সিং করার স্বপ্ন দেখেন। এর মূল এবং অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফ্রিল্যান্সিংয়ে একদিকে যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়; তেমনি আয়ের পরিমাণও রেগুলার চাকরিজীবীর চাইতে বেশি। ফ্রিল্যান্সিং কাজে পছন্দ বা স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি কাজের স্থান ও ছঁকে বাঁধা নিয়ম থাকে না বলে অনেকেই এ পেশাকে বেঁছে নেয়। আর সে কারণেই নিজেকে সফলভাবে তৈরি করে সংকল্প নিতে হবে। দক্ষতার পাশপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করার দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জ নিতে পথকে সহজ করে দিচ্ছে এ যুগের ত্যাগী আইটি উদ্যোক্তারা।

আইটি উদ্যোক্তা উৎসব পিন্ট ডিও, নেত্রকোনা

ঠিক তেমনি-ই একজন আইটি উদ্যোক্তা পিন্টু ডিও। পুরো নাম উৎসব পিন্টু ডিও। ভারত সীমান্ত ঘেষা প্রত্যন্ত অঞ্চল দুর্গাপুর উপজেলা বিরিশিরি গ্রামের একজন সফল ফ্রিল্যান্সার এবং আইটি উদ্যোক্তা। ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড ভিশন অব বাংলাদেশ এর অধীনে ৩ মাস মেয়াদী এম.এস অফিস প্যাকেজ প্রোগ্রামের ওপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি কলেজ জীবন ২০০৪ সাল থেকেই সরাসরিভাবে আইটি ক্যারিয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ফলে কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি তাকে এবং ছোট ভাইকে তার বাবা একটি ডিজিটাল স্টুডিও করে দেন। মূলত সেই কাজ করতে করতেই গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে জানার আগ্রহ শুরু হয় উদ্যোক্তা উৎসব পিন্টু ডিওর।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইটি এবং ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক কর্মশালা

একদা ২০০৯ সালে উচ্চতর শিক্ষা এবং চাকুরীর জন্য ঢাকায় গমন করেন। সেখান থেকেই গ্রাফিক্স এবং অন্যান্য ডিজাইনে পেশাদার হয়ে উঠেন। ঢাকায় বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেস, স্বনামধন্য দুটি কপোর্রেট ডিজাইন ফার্মে চাকুরী শুরু করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপে সিনিয়র গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজও করেন। এরপর ২০১৬সাল থেকে তার এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথেও ওতোপ্রোতভাবে জড়িত হন। দেশে বসে ফিনল্যান্ড এর একজন বায়ারের রিমোট জব অর্থাৎ ভার্চুয়্যালিও কাজ করছেন এবং আইটি উদ্যোক্তা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন এ গারো যুবক।

২০১৬ সালে নিজের ডিজাইন ও ফ্রিল্যান্সিং স্কীল শুধুমাত্র নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতিদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিআইটিআই (BITI) নামে একটি আইটি বিষয়ক ট্রেনিং সেন্টার শুরু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় মিরপুরে নিজের বাসায় আলাদা একটা রুমে ছোট আকারে শুরু করেন ১ম ব্যাচ। সে ব্যাচের শিক্ষার্থী বাবু কবির (মানিকগঞ্জ— ফাইভার মার্কেট প্লেসে টপ রেটেড সেলার), ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিও ঘ্রাগ্রা (ঢাকা মিরপুর— ফাইভার মার্কেট প্লেসে লেভেল টু সেলার) এবং ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিলয় নীল  (নীলফামারী থেকে— ফাইভার মার্কেট প্লেসে লেভেল টু সেলার) এবং ফ্রিল্যান্সিং আন লাইন বিভিন্ন মার্কেটে প্লেসে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন।

এভাবেই আইটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে সাড়া ফেলেছে নিজ এলাকা দুর্গাপুর বিরিশিরিতে। নিজে ফ্রিল্যান্সিংও করছেন এবং অন্যের কর্মসংস্থান তৈরীতে আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইটি প্রকল্প শুরু পরও ঢাকা মিরপুরে বিআইটিআই অফ লাইন এবং অনলাইন কোর্স তখনও চালু ছিলো। তিনি জানান, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল করোনার আগ পর্যন্ত ২০০০ জনেরও বেশি শিক্ষিত বেকার যুবক—যুবতীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্ম সংস্থানে প্রত্যক্ষভাবে  সহযোগিতা করেছেন।

২০২০ সালে করোনা পরবতী অর্থাৎ লকডাউনের পর পারিবারিক চাপে আর ঢাকা ফেরা হয়নি তার। ফলে বিআইটিআই কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারকে আরও গুচ্ছিয়ে ঐ বছর ১৫ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি গ্রামে বিআইটিআই এর কার্যক্রম শুরু হয় এবং সুদুর প্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে এগুতে থাকে। গত দুবছরে (অফ লাইন এবং অনলাইন) ১৫০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে ব্যাসিক কম্পিউটার এবং এডভান্স গ্রাফিক্স ডিজাইন উইথ ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধিতে ও কর্মসংস্থান তৈরীতে সহযোগিতা করেছে বলে দাবি করেছেন পিন্টু ডিও। তিনি  আরও জানায়, যারা তার কাছে কোর্স করেছে তারা কেউ বসে নেই। ফ্রিল্যান্সিং শিখে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে, কেউবা ব্যবসা করছে ; আবার কেউবা উদ্যোক্তা হয়ে নিজের কর্মসংস্থানের পথ তৈরী করে নিয়েছে।

বিআইটিআই এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে বিআইটিআই এর দুটি শাখা রয়েছে, একটি পুর্বধলা আর অন্যটি হলো দুর্গাপুরে। এছাড়াও পরিকল্পনানুযায়ী নতুন শাখা খুব শীঘ্রই কলমাকান্দা ও ময়মনসিংহে ব্রাঞ্চ  চালু হবে বলে তিনি জানান।

সর্বপরি বিআইটিআই এর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল, টেকসই এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সরকারি সার্টিফিকেট বা সনদ প্রদান করার লক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি তার একজন বন্ধুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের উদ্যোক্তা কার্যক্রমকে সম্পর্কে জানতে পারেন। ডাক বিভাগের নিয়মানুযায়ী বিরিশিরি পোষ্ট অফিস এবং কলমাকান্দা চৈতা পোস্ট অফিসের জন্য তার ছোট ভাইকে দিয়ে আবেদন করেন। অনেক চেষ্টা পর গত ২২ আগষ্ট বাংলাদেশ ডাক বিভাগের দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি ব্রাঞ্চ পোষ্ট অফিস উদ্যোক্তা তিনি নিজে, এবং তার ছোট ভাই কলমাকান্দা থানার চৈতা পোষ্ট অফিসে উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ পান।

এই উদ্যোক্তার সাথে বিআইটিআই পরিবারে আরও ৭ জন ট্যালেন্ট মেন্টর কাজ করে যাচ্ছেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের শিক্ষিত বেকার সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরী এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে চলেছে বলে আ.বিমা টাইমসকে জানান। বাংলাদেশের এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বেকার সমস্যা নিরসনে এবং দেশকে ডিজিটাল করার লক্ষে তার এই উদ্যোগ এক সময় অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করেন গারো উদ্যোক্তা উৎসব পিন্টু ডিও।