(লুই সাংমা’র বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া) 

১.
বেলা অবেলা

আমি কখনো নিজেকে আমার করে ভাবতে পারি-নি,

এভাবেই আমার কতটা প্রহর অন্যের হয়েছিলো, অথবা

আমার কতটা দিন অন্যের হয়েছিলো নিজেও জানি-নে।

 

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর

আমি কেবল অন্যের হতে থাকি; নিজের প্রিয় কিছু শব্দ হারাতে থাকি;

অন্যের হতে থাকে নিজের ঘাম জড়ানো গচ্ছিত ক’খানা সিকি আধুলি,

শেষ সম্বল মাথা গোজার ঠাঁই কবে বেহাত হয়েছিলো নিজেও জানি-নে।

 

আমি কেবল শিগারেটের মতোন পুড়ে দিন দিন খাঁটো হতে থাকি

ছোট হতে থাকি অনু পরমানুর চেয়েও ফিনফিনে, অথবা

নরক যন্ত্রনায় কাতর ক্ষনিক ধরিত্রীর অলীক জলহীন বৃক্ষের মতোন;

তবুও অনাদরে পরে থাকা ছাইপাসে নিজেকে খুঁজিফিরি বিরামহীন

জলতরঙ্গ হয়ে নিজের মধ্যে অন্যরকম ছবি আঁকি।

 

আমি কখনো নিজেকে আমার করে ভাবতে পারি-নি

আমি কখনো নিজেকে আমার করে ভাবতে শিখি-নি

আজ বেলা অবেলাকে আপন করে ভাবতে শিখেছি

তোমার নিটোল পায়ের ছন্দ খুঁজে পেয়েছি।

মার্চ ২২, ২০১৫ খ্রী:

প্যারিস।

 

২.

ভালোবাসা’র ছুটি

নিদ্রাহীন রজনী
কিংবা নিসঙ্গ একাকীত্বে
ওমন বিমল আনন্দের
মিথ্যা দীর্ঘশ্বাস কাছে ফেল না তুমি।
অথবা সুনিপুন নৃত্য ভঙ্গিমায়,
আপন ভেবে খুব কাছে এসো না।

আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা
সকল উচ্ছাস, যতো প্রেম সুর লহড়ী;
ফুঁ-দিয়ে উড়িয়ে দিলাম অন্য আকাশে।

তপ্ত বুক ফেটে কালো মেঘ করুক
শুন্য বুকে কঠিন বৃষ্টি ঝরুক;
হে স্বর্গীয় ভালোবাসা
আজ তোমায় দিলেম ছুটি।
২৫ জুন, ২০১৩ খ্রী:
প্যারিস

 

৩.

প্রথম চিঠি

কি লিখবো, লেখার অনেক বাকী, জানা-অজানা

লিখতে পারছি না তবু কিছুতেই; ওগো প্রিয়তমা।

থরথর কাঁপে কলমের ডগা, শীর্ণ আঙ্গুলের ভাঁজে

চৌচির সাদা কাগজ; মরণ আর্তনাদ, উন্মাদনা৷

 

অনেক বলার বাকী- সীমাহীন পাথর চেপেছে বুকে

বাক-রূদ্ধ, সংশয়ে লজ্জাবতির মত; গুটিয়ে যাই শুধু

অবিরাম রক্তঝরা কথামালা; যা বলা হয়-নি শোকে ৷

 

নিবিড় দৃষ্টিবদ্ধ হয়েছিলেম, কাছে আসবে কবে

তুলে দেব তোমার হাতে- প্রেমের শ্রেষ্ঠ গোলাপ,

নিশ্চুপ তুমি; চলে গেলে পাশ কাটিয়ে- নীরবে,

আহা, ঝরে গেলো স্পর্শকাতর গোলাপের বিলাপ ৷

 

নষ্ট সময় বেঁধে- রয়ে গেলো বুকে সহস্র ক্ষত-

অথচ হৃদয়ে অক্ষত রয়ে গেলো চিঠির ভাঁজটি;

প্রাণের প্রিয়তমা, বলো না- কেন চিঠি পড়লে না

শুধু তোমার জন্যে লিখা, এ আমার প্রথম চিঠি !

আগষ্ট ২৬, ২০১১ খ্রী:

প্যারিস৷

৪.

শাল অরণ্যের মেয়ে

জাগর স্বপ্ন নিয়া; পাখি ডাকা স্নিগ্ধ ভোরে

শিশির ভেজা দুর্বাঘাসে কোমল সবুজ মাঠ পেরিয়ে

মৃদু ছন্দময় নূপুর পায়ে, জংলি ফুল খোপায়,

ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট রাঙিয়ে, তুমি এসো।

 

ওহে সুনয়না আমায় বিশ্বাস কর, আপন

সংস্কৃতি সাজে তুমি অনন্যা, অপরুপা;

তুমি এসো গ্রামীণ শৈল্পিক হস্ত খচিতো

তাঁতে বুনা লাল রঙের দকমান্দা পরে।

 

যতো ভিন গায়ের সংস্কৃতি ভুলে,

রাশি রাশি জংলি ফুল তুলে

সেরেজিং গীত নৃত্যের তালে;

তুমি এসো, ফিরে এসো তুমি

শাল অরণ্যের মেয়ে হয়ে।

জুলাই ৫, ২০১৩ খ্রী:

প্যারিস।

 

৫.

একদিন-তো হবে

এমন একটা সময় ছিলো খেতে গেলে সব খাদ্য অমৃত মনে হতো

এমন একটা দিন ছিলো বৃষ্টি রোদে দুরন্তপনায় দিনভর কাটতো ;

এমন কিছু রাত ছিলো রাতভর জেগে গানের জলসায় ডুবে যেতাম

এমন কিছু চাওয়া ছিলো কল্পিত কল্পনায় নিমিষেই জোছনা হয়ে যেতো।

আমি দিনের পর দিন এভাবেই প্রিয় কিছু স্বপ্নকে কোলেপিঠে লালন করতাম ;

আজ না হোক, কাল-তো হবে অথবা কাল না হোক, একদিন-তো হবে।

 

আমার কিছু চাওয়াগুলো মাতৃগর্ভে আসা মানব শিশু ভ্রুণের মতোন-

সন্তানসম্ভবা মায়ের স্বযত্নে সোনামুখি সুঁইয়ে গাঁথা সেলাই করা কাঁথার মতোন;

আমার কিছু চাওয়াগুলো কৃষকের লাঙল কাস্তে শাণ দেয়া ক্ষণের মতোন,

মৌসুম আসলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে লাঙ্গল মাটির সশস্ত্র যুদ্ধে।

 

আজও কিছু অগনিত চাওয়া পাওয়া ঘুরেফিরে মনের গভীরে

নববধূ হয়ে আসে মনের জালনায় বারেবারে ফিরে;

আজ অনেকদিনপর ফেলে আসা দিনগুলো ফিরে পেতে ব্যাকুল

কিন্ত হায়! ওকুল গড়ে; ভাঙ্গে আমার এপার-ওপার দুÕকুলই।

 

এভাবেই আমি দিনের পর দিন প্রিয় কিছু স্বপ্নকে কোলেপিঠে লালন করি ;

আজ না হোক, কাল-তো হবে অথবা কাল না হোক, একদিন-তো হবে।

অক্টোবর ৩১, ২০১৫খ্রী:

প্যারিস।