সোশ্যাল মিডিয়াতে লুই সাংমা নামে অধিক পরিচিত। তাঁর আসল নাম লুই চিরান। তিনি ফ্রান্সের বাসিন্দা। প্রবাসে এক যুগের বেশি সময় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সাংমার সহধর্মিণী লিপা সাংমা। তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় মেয়ে কৃপা এবং ছোট মেয়ে ঐশিকা।

কবি এবং প্রবন্ধিক লুই সাংমা, ছবি: গারোহাব

তিনি মূলত কবি এবং প্রবন্ধিক হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। তিনি তথ্য প্রযুক্তিতে তিনি বেশ দক্ষ। চাকরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্লাটফর্মে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন এবং গারোদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্লগার। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন দেশীয় এনজিও, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ মাল্টিন্যাশনাল লিয়াজো অফিসে প্রশাসনিক পদে কর্মরত ছিলেন। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি তিনি নিজেকে সৃষ্টিশীল এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে রেখেছেন অদ্যাবধি।

কিন্তু সম্প্রতি সাংমা গান শিল্পের ভূবনে তাঁর চারণক্ষেত্রকে আরও সম্প্রসারিত করেছেন। নিজেকে যুগোপযুগি করে সমানতালে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছেন একজন গীতিকার ও মিউজিক প্রোডিউসার হিসাবে। যদিও গান লেখা আর গীতিকার হওয়া এক কথা নয়। কোন লেখাই গান হয়ে ওঠে না যতক্ষণ তাতে সুরারোপ করা না হয়। যতক্ষণ কোন কণ্ঠশিল্পী তা কণ্ঠে ধারণ না করেন। আবার কথা ও সুরে গান হলেও গানের মৌলিক বিষয়গুলো উপস্থিত না থাকলে সে গান শ্রোতাদের মনকে টানে না। মোদ্দা কথা, গানে মৌলিকত্ব, এবং ইউনিক বিষয় থাকতে হবে।

প্যারিসে কবি এবং প্রবন্ধিক লুই সাংমা, ছবি: গারোহাব

২০০৯ সালে প্রবাসে আসার পর লেখালেখিতে নিজেকে আরও বেশি জড়িয়ে ফেলেন। প্রবাসে বসেই এ পর্যন্ত ৪টি একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন (শুধু মুগ্ধতার জন্যে, শাল অরণ্যের মেয়ে, অতৃপ্ত কিছু বাক্য, এবং নির্বাচিত কাব্যগ্রন্থ)। অপ্রকাশিতব্য রয়েছে বেশ কটি গ্রন্থ। সাংমা কাব্য চর্চার পাশাপাশি ২০১৬ সালের আগে থেকে গান লেখা শুরু করেন। তবে বাংলা গানের চেয়ে নিজ মাতৃভাষার গুরুত্বনুভব করে তিনি গারো বা আ.চিক ভাষাতে গান লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। মূলত গীতিকার এবং মিউজিক প্রোডিউসার হিসেবে সাংমার যাত্রা শুরু হয়েছিল গেল দুবছর আগে। গারোহাব মিউজিক পরিবার ধীরে ধীরে দেশ দেশান্তরে গীতিকার হিসাবে সাংমার পরিচিতি বেড়েছে। দীর্ঘদিন কাব্য চর্চা করলেও সে সময় মিউজিক নিয়ে গান প্রকাশ নিয়ে তেমন বিচলিত ছিলেন না। অর্থাৎ এলবাম প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না তা নয়; যেকোন সময় সুযোগ হলে সাংমার গান একদিন প্রকাশ হবে তাঁর নিজের মধ্যে এমন বদ্ধমূল বিশ্বাস এঁটেছিল। সে ভাবনা থেকেই গারো গীতিকার ফরিদ জাম্বিল, সমাপন স্নাল, মিউজিক কম্পোজার সমাপন স্নাল, এবং ভারতের জিতুপন বোরা সবার সন্মিলিত প্রয়াসে তৈরি হয়েছে লুই সাংমার লেখা গান। সাংমার প্রথম গানের এ্যালবাম ‘নিথুগিপা আঙনি চামে’, ‘নাঙকন নামনিকা’ এবং ‘কা.সা বালা’ ইত্যাদি গান। এসব গানের অডিও ও ভিডিও গারোহাব ইউটিউব চ্যানেলে  প্রকাশিত হয় সাংমার গান। সাংমার নান্দনিক কাব্যকথা এবং ভিডিও দর্শক শ্রোতাদের মনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস। ভারত বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে তৈরি করেছেন মিউজিক এবং মিউজিক ভিডিও। গানটি যৌথ কণ্ঠে গেয়েছেন সমাপন স্নাল, বাংলাদেশ এবং ভারতের তরুণ শিল্পী জিতুপন বোরাসহ আরও অনেক।

তাঁর লেখা গান সারল্যভাবে ভালোবাসার গভীর আর্তি অনায়াসে ফুটে ওঠে। সাংমার কাব্য ঝুলিতে আরও অনেক কাব্যকথা জমা আছে; যা গানে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। গীতিকবি সাংমা প্রত্যাশা রাখেন পর্যায়ক্রমে সেগুলো প্রকাশ করবেন।

ফ্রান্সের আমিয়া শহরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত যোদ্ধাদের গণকবর পরিদর্শন সাংমা ও তাঁর পরিবার, ছবি: গারোহাব

এরপর আসে তাঁর তৈরি কিছু গারো জাতিগোষ্ঠির শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে শর্ট ডকুমেন্টরি ফিল্ম। গারোহাবের তৈরি ডকুমেন্টরি এবং মিউজিক ভিডিও গারোহাব ডট কম আর্কাভে দেখতে পাবেন। নিজস্ব চিন্তা চেতনা এবং পুরোপুরি নিজ অর্থায়নে খুব ছোট পরিসরে অনলাইনে গারোদের অতীত ও বর্তমান তথ্য কোষ বা তথ্য ভান্ডার তৈরি করে চলেছেন দিনের পর দিন। প্রবাসে বসে একটি নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম তৈরি করতে তিনি নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে এক নির্লোভ, নিভৃতচারী সৃষ্টিশীল এবং প্রতিভাধর এক মানুষ।