কবি সালাহউদ্দিন সালমান মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। পড়ালেখা অবস্থা থেকেই সাহিত্য চর্চায় আদ্যোপান্ত মিশে আছেন। লিখছেন সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কবিতা, প্রেম, মা, মাটি পরিবেশ, প্রাকৃতি সব মিলিয়ে বর্তমান প্রজন্মের কাছে অতি পরিচিত তরুণ কবির নাম সালাহউদ্দিন সালমান।
প্রকাশিত গ্রন্থ: প্রচার বিমুখ কবির কবিতা ইতোমধ্যে দেশের দৈনিক সাপ্তাহিক পাক্ষিক মাসিক পত্রিকায় ও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো; যেমন- একাকী উড়াল (কাব্যগ্রন্থ), পকেট সেলাই করি ছেঁড়া জামার (কাব্যগ্রন্থ), হৃদয়ে জলছবি (কাব্যগ্রন্থ), কবিতা বুক ব্যান্ডেজ করে (কাব্যগ্রন্থ), ঘরের খোঁজে নিখোঁজ বাড়ি (কাব্যগ্রন্থ), ভালোবাসার শেষ বিষ (উপন্যাস), আড়াই অক্ষর প্রেম (উপন্যাস), নীড় হারা পাখি (উপন্যাস), কেউ কথা রাখেনি (উপন্যাস), রক্তে লেখা শেষ চিঠি (উপন্যাস) ইত্যাদি।
তিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত।
পকেট অনুকাব্য
এক.
চোখ পকেটে ভর্তি অসংখ্য অযুত বৃষ্টির ফোটা
অধিকারের চৌহদ্দিতে তোমার আতিশয্য বিরাগ
হৃদয়ের ঝুল বারান্দায় বাতাসে নড়ে অনুরাগ
অলক্ষ্যে চোরা কাঁটার মত বিঁধে রেখে যাওয়ার বিন্যাস
যতই থাকো তুমি যোজন দূরে দূরত্বে
তোমার তাৎপর্য্য অষ্টপ্রহর পোড়ায়
ছাই চাপা আগুনের মত আপন ও গোপনে !
দুই.
এই ছেঁড়া বুকপকেটে নুন্যতম কিছু রাখিনি
ঝেড়েঝুড়ে সব উজাড় করে দিয়েছি
যেখানে তুমি আমার নিঃশ্বাসের বাতাসে মিশে যাবে
সেখানে আর গোপন রেখে কি লাভ
রাখবোইবা কার জন্য অন্য কেউ থাকলে তো আর
তোমার কাছেই আসা হতোনা কস্মিনকালেও
চাঁদে ঘরবাঁধার স্বপ্ন আমিও দেখি দশ পাঁচটা মানুষের মত
তবে সেটা একা বা অন্য কাউকে নিয়ে নয়
যদি ঘর বাঁধতেই হয় একান্ত তুমিই হবে আমার সহসঙ্গিনী!
বাবার আক্ষেপ
পরকালের সামগ্রিক বিচার বিশ্লেষণ তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে ইহকালের চাকচিক্যময় রাম রাজত্বে রং চটা জীবনযাপনে বেশ আছি দেখে পাড়াগায়ে মসজিদের ইমাম একদা ডেকে বলেন, বাবা মুসলিম ঘরের সন্তান যেহেতু সৎ পথে চলতে শেখো‚অন্তত নামাজ রোজাটা ঠিকমতো ধরো‚তখন আমার বয়স তেইশ।
আমি এখন টগবগে এক তরুণ ছেলের পিতা, মেয়ে আমার কলেজপড়ুয়া ছাত্রী ষাটোর্ধ্ব বয়স সীমাকালে আমি আরবী হরফ চেনা-জানার জন্য রীতিমতো উদ্ভ্রান্ত হয়ে যাই, অস্থির চিত্তে ঝাপসা চোখে পবিত্র কোরআন আকড়ে ধরি‚ আধুনিকায়নের বৈশ্বিক মহামারির ফেসবুক টুইটার জানে একমাত্র সন্তান আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্কে নাজানি ডাকে কোন নামে।
টেলিস্কোপ যান্ত্রিক রাডার কম্পিউটার অথবা এ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের ভার্চুয়াল সময়সিন্ধুর ব্যস্ততার প্রাক্কালে একঘরে থেকে; যেখানে বাবা জানে না ছেলের খবর মা রাখে না সন্তানের নজর, সেখানে ইহকাল আর পরকালের ডর ভয় এই টিনএজারদের কাজে নিছক কল্পকথার গল্পমাত্র।
একদিন জীর্ণশীর্ণ বয়সের ভাড়ে নতজানু হওয়া আমার জীবনের কস্মিনকালে পুত্র জানে না তার পিতার মৃত্যু শয্যায় পরকালের পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বাবার শেষ বিদায়ে মাবুদের দরবারে কি বলে ফরিয়াদ করে। দুনিয়াবী শিক্ষায় দীক্ষায় সন্তানদের সবই দিলাম দু’হাত খুলে পরকালের পাললিক মাটির তলের কিছুই দিতে পারলাম না সন্তানেরে।
অর্কিডগুলো তাকিয়ে থাকে
অনেকগুলো
নির্ঘুম রাতের চাপা কষ্টকে বুকে ধারণ করে
আমি রাতভর চোখ খুলে থাকি অপলক
ঝুল বারান্দায় অর্কিডগুলো তাকিয়ে থাকে আমার দিকে
আমি ও বুঝি ঝুলন্ত অর্কিডের বোবা ব্যথা।
চাঁদের চক্রান্ত বুঝি না বলে বারংবার ছ্যাকা খাই
যে গান দিনে গাওয়ার কথা সে গান আমি রাতে গাই
সুখ দুঃখে তবুও ঝুলে থাকি শোকের কলার চেপে
বলার অনেক কিছু থাকে ঠিকই
তবুও বলতে পারি না বড্ড ভয় পাই।
আরো হও দীর্ঘজীবী
রাতের অন্ধ আকাশে মেঘের অচ্ছুত যন্ত্রণায় ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টি
সুখের কোন সংস্পর্শ নেই,,নেই কোন অনুগত সামিয়ানা
জীবনের যৌবন ভিজে নেয়ে একাকার একা একা
মুখোশবন্দি অনন্ত ঘৃণার কাছে প্রতিহিংসা বিলুপ্তপ্রায়
নগ্নতার অপার অরণ্য চিরচেনা সম্পর্কের দূরত্ব
বেঁচে থাকার দীর্ঘশ্বাস ঝুলে বিরহের ব্যালকনির রূপরেখা।
স্থির অস্থিরতা বুকের বোতাম খুলে ভিতরে খুব জ্বালায়
ক্ষতের দৃশ্যমান তৃষ্ণা ছুটে চলে উদ্দেশ্যহীন
জমাতকৃত ব্যথারা পেঁজাতুলোর মতো নড়ে এদিক-সেদিক
স্বপ্নগুলো দলবেঁধে বিবাগী হতে থাকে বুকের বামপাশ থেকে
বোধের ব্যাঞ্জনা বুঝি না খলবল করে নেমে যায় মহার্ঘের অনুভুতি
তুমি পরিকল্পিত ভালোবাসার নামে অনন্তের শিরোনাম লেখতে চাও যেখানে
অন্যজন সেখানে লেখে দিতে চায় আরো হও দীর্ঘজীবী।
হন্তারকের বিষাক্ত কিরিচ
গভীরভাবে তাকিয়ে বুঝে ছিলে, ঝুলে থাকা দিনের বেলা শেষ
আমি অসফল প্রতীক্ষায় মৃত্যু অবধি মগ্ন ছিলাম শুরুতে
অন্ধকারের কোন গন্ধ হয় না
তবুও জলের মতন অবিরল ঘুরে ঘুরে নিবিড় হয়ে মিশে ছিলাম
আকাশ আর নক্ষত্রের উদ্দীপনে।
যাত্রা পথে শতসহস্র মাকড়সাজাল আগলে ছিলো গন্তব্য মিছিল
নশ্বরতা ছিলো পায়ে পায়ে, আমি ছিলাম সংকল্পে অটুট নিয়মাধীন
তুমি ছিলে জাগতিক মোহ মায়ায় নিমগ্ন ভিন্ন আয়োজনে।
পথের শেষে পথ গেছে বেঁকে মতান্তরে দূর বহুদূর
হরেক রকম গোলক ধাঁধায় চোখে ছিলো ফেনিল সমুদ্দুর
স্বচ্চ ধ্রুব স্বাদহীন স্বাধীনতা সুখের সামান্য নিচে
কখন জানি সরলতা কাটা পড়েছে হন্তারকের বিষাক্ত কিরিচে।
চারদিকে হু হু হাহাকার
ফাল্গুন রাতে জোনাকির ভিতর দিয়ে
অপরিমেয় ভালোবাসা কেটে গেছে আমাদের
অজস্র কথার ভিতরে অযুত লক্ষ নিযুত কথারা
তখন অষ্টপ্রহর জীবিত রেখেছিল আমাদের প্রেম।
বিচ্ছুরিত রোদের গালিচা দিয়ে হেটে গেছি কত দুপুর
কত সূর্য সন্ধ্যায় তিলোত্তমা আয়োজনে পৃথিবী করেছে মুগ্ধ
নিয়মের আলপনায় অসংখ্য নক্ষত্রের মতো মিলন হয়েছে মধুর
আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি চোখের চাহনি যায় যদ্দুর।
শতাব্দীর অচিন অন্ধকারে দুহাতের মুঠোয়
গোলাপের বদলে হাতে এখন একরাশ উপচে পড়া কষ্ট।
বার্ধক্যময় স্তব্ধতা ম্রিয়মান করে রেখেছে যাবতীয় আয়োজন
কোথাও কিঞ্চিৎ রোমাঞ্চ নেই, চারদিকে হু হু হাহাকার
তোমার আমার রেখে যাওয়া গোলাপের বাগান
অকাল উপকন্ঠের ধূসর পান্ডুলিপি হয়ে আছে সমস্ত স্মৃতি
এতটুকুন ও প্রেরণা নেই, শাশ্বতকাল হারিয়ে গেছে নিশ্চিহ্ন হয়ে
আমাদের প্রেম আমাদের ভালোবাসা এখন কেবলই সমাধি।
প্রেমের লিরিক
চোখ পকেটে জলের ফোটা‚মনে ঘূর্ণিঝড়
একদিন আমি ছিলাম আপন‚এখন আবার পর
তোর শ্যাম্পু করা চুলের ঘ্রাণ‚সোহাগ আর আদর
জ্বালায় খুব জ্বালায় আমায়‚অন্তরের ভিতর!
কুয়াশাময় রাতের ক্যাফে‚নির্জন অন্ধকার
কফির ধোঁয়ায় উড়ে যেতো‚অভিমানের পাহাড়
হাসির ঝিলিক জোছনার ফিনিক‚সূর্যরাঙ্গা ভোর
তোরই জন্য খোলা ছিলো‚আমার হৃদয় দোর!
শব্দের সাথে হু হু কান্না‚ কবিতায় করে ভর
হিমঘরে একা পড়ে থাকি‚ মোড়ে স্মৃতির চাদর
উজ্জীবিত স্বপ্নগুলো‚ আজকাল দুঃস্বপ্নে ধূসর
ভাবনার ক্যানভাসে আজও তুমি‚ প্রিয়তা বরাবর!