নিজস্ব প্রতিবেদক: দামা, রাং, ক্রাম, আদুরির গ্রিমচেং গ্রিমচেং নিনাদে দুইদিন মুখরিত ছিল টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সুবকচনা। এই আমুদের উপলক্ষ্য গারোদের প্রধান উৎসব ওয়ানগালা।

দীনেশ খামাল

সাংসারেক দীনেশ খামাল, মধুপুর

গত ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় এই উৎসব, শেষ হয় ২২ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায়। এতে পৌরহিত্য করেন ধরাতি গ্রামের বয়জেষ্ঠ্য খামাল দীনেশ নকরেক। ‘সাংসারেক কমিউনিটি, বাংলাদেশ’ উদযাপনের মূল আয়োজক হিসেবে সুবকচনা গ্রামবাসীকে সম্পৃক্ত করে। আয়োজনে মৌলিকত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্টায় বাড়ির উঠানে নকমান্দি আকারে প্যান্ডেল স্থাপন করা হয়। এর ভিতরে অঙ্গারি অর্থাৎ বাঁশের মাচাং বানানো হয়। অঙ্গারিতে সাজিয়ে রাখা হয় রাও, ফং ইত্যাদি তৈজসপত্র। সুবকচনা গ্রামবাসী এমন আয়োজনে আনন্দিত এবং মুগ্ধ।

ওয়ানগালার পূজা নিবেদন, পৌরহিত্য করছেন দীনেশ খামাল

উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল সাংসারেক কমিউনিটি, বাংলাদেশ এর কোষাধ্যক্ষ যশী দালবত’র বাড়িতে। সেই সূত্রে দালবত মাচং এর চ্রা এলবিন দালবত তার বক্তব্যে বলেন, “এই আয়োজনে আমরা খুবই খুশি। আমরা এই উৎসব প্রায় ভুলতে বসেছিলাম।” সাংসারেক কমিউনিটির সদস্যদেরকে ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ” তোমরা বয়সে ছোট হলেও সাহস অনেক। নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষায় তোমাদের প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করি। ভবিষ্যতেও তোমরা এইভাবে এগিয়ে যাবে এই কামনা করি।”

সাংসারেক কমিউনিটির সভাপতি শীতল স্নাল সুবকচনা গ্রামবাসীর সর্বাত্নক সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ধন্যবাদ জানান।

ওয়ানগালা গারোদের প্রধান উৎসব। ধানের বীজ দানের জন্য শস্য দেবতা মিসি-সালজংকে কৃতজ্ঞতা জানাতে এই উৎসব পালিত হয়। গারোদের আদি বিশ্বাসমতে ফসল ঘরে তোলার পরে মিসি-সালজংকে উৎসর্গ না করে সেই ফসল তারা খেতো না। গারোরা ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এই উৎসব প্রায় ভুলতে বসেছিল। বহু বছর পর ওয়ানগালা আবার উদযাপন করা শুরু করলেও এর কাঠামো ও ভাবধারায় পরিবর্তন আসে। ইদানিং নতুন প্রজন্মের অনেকে ওয়ানগালার আদি কাঠামো ও ভাবধারা বজায় রেখে এটি পালন করার চেষ্টা করছেন। সাংসারেক কমিউনিটির প্রচেষ্টা তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।