লিয়াং রিছিল, মধুপুর, টাঙ্গাইল: করোনায় যখন সকল আদিবাসী রোগ বালাই প্রতিরোধে ব্যতিব্যস্ত, বিপর্যস্ত ঠিক এমন অসহায়ত্বে গারো আদিবাসীদের আবাদি ফসল উজাড় করে কেটে দিচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর বন বিভাগ। গতকাল সোমবার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পেগামারী গ্রামের হত দরিদ্র বাসন্তী রেমার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কলা বাগানটিও কেটে উজাড় করে দিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় গারো আদিবাসীরা বন বিভাগের দোখোলা রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

ছবি: মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি, জলছত্র, মধুপুর, টাঙ্গাইল।

স্থানীয় গারো আদিবাসীরা আরও অভিযোগ করে বলেন- বন বিভাগের জমি দাবি করে কোনো ধরণের আগাম নোটিশ ছাড়াই গত ২৪ আগস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে তাদের জমির ফসল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। তখন তারা পাঁচ একর জমির ফসল এভাবে ধ্বংস করেছে। আর গতকাল সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০) বাসন্তী রেমার ৪০ শতাংশের ওপর আবাদি কলা বাগান নির্বিচারে কেটে ফেললো বন বিভাগ। করোনা মহামারির কঠিন সময়ে বিভাগের এমন ‘অমানবিক আচরণে’ তাঁরা এখন পথে বসার উপক্রম। স্থানীয় গারো আদিবাসীরা জানান, যুগ যুগ ধরে দখলি সত্ত্বে; আবার কেউবা উত্তরাধিকার সূত্রে এইসব জমিতে চাষবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন। মধুপুরে জমি উদ্ধারের নামে গারোদের সর্বস্বান্ত করে চলেছে বন বিভাগ দিনকে দিন।

আজ “সংরক্ষিত বন” বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বন বিভাগ কর্তৃক আদিবাসীদের লক্ষ লক্ষ টাকার আবাদি ফসল কেটে উজাড় ও নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জলছত্র পঁছিশ মাইলে সম্মিলিত আদিবাসী ছাত্র জনতা এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচি সঞ্চালনায় ছিলেন জিএসএফ (কেন্দ্রীয় পরিষদ) এর সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব ইউজিন নকরেক। তিনি তাঁর বক্তব্যে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘মধুপুরে গারো আদিবাসী এলাকায় এবং তাঁদের দখলি সত্ত্বের জমিতে কোন ধরণের বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। গারোদের আবাদি জমিতে এ ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।‘

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব প্রবীণ চিসিম বলেন, ‘বন বিভাগ কোন ধরণের আলোচনা, নোটিশ ছাড়াই গারো এলাকায় বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পায়তারা করছে। এলাকার গারো আদিবাসী জনগণের আদিভূমি বেদখল করছে। এই আদিবাসী অধ্যূষিত বন ভূমিতে যদি কোন ধরণের সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়; তাহলে স্থানীয় গারো আদিবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করতেই হবে এবং এর বিকল্প পথ আমার জানা নেই।‘

মানববন্ধন কর্মসূচীতে সোস্যায়াল এক্টিভিস্ট জনাব প্রিন্স এডুয়ার্ড মাংসাং আরও বলেন, ‘বন বিভাগ এবং বন বিভাগের দালালরাই অর্থের বিনিময়ে মধুপুরের শালবন ধ্বংশ করছে, কিন্ত শত শত মিথ্যে মামলা ঝুলছে নিরীহ গারো আদিবাসীদের ওপর। এসব মিথ্যে মামলা বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের যোগ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।‘

এছাড়াও কর্মসূচীতে সংহতি বক্তব্য রাখেন, সত্যজিত নকরেক (সাবেক সাধারণ সম্পাদক-জিএসএফ, মধুপুর উপজেলা শাখা), মিলন দফো (সাধারণ সম্পাদক, বাগাছাস মধুপুর উপজেলা শাখা), অনিক দিব্রা (শিক্ষা সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক, জিএসএফ কেন্দ্রিয় পরিষদ), শ্যামল মানখিন (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদ) প্রমূখ।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে উপস্থিত সকল বক্তাগণ একই সুরে উচ্চারণ করে বলেন, বন বিভাগের এমন বিমাতাসূলভ আচরণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে সত্যিই দু :খজনক। বন বিভাগ সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নামে স্থানীয় গারো আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন একটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত পরিকল্পনা। বাপ দাদার আবাদি জমিতে বিনে নোটিশে ফসল নিধন কর্মসূচী “রিজার্ভ ফরেস্ট” এর নামে মধুপুর গড়ে আদিবাসী উচ্ছেদের এক গভীর ষড়যন্ত্র। একটি গণতান্ত্রিক দেশে সকল জাতিগোষ্ঠির সহাবস্থান করা এটি তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার। বক্তারা এ সকল আবাদি ফসল কাটার ক্ষতিপূরণসহ গারো আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বন মামলা এবং গারোদের দীর্ঘদিন দখলি সত্ত্বে সকল ধরণের সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বন্ধে সরকারের প্রতি সুদৃষ্টির আহ্বান জানান।