আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যা দেখেছি কিছু প্রতিবেশী কৃষকের ন্যায় অযাচিতভাবে ছোটখাটো অন্যায় অপরাধ আমরা করি। সেই ছোট ছোট অপরাধ এক সময় বড় অপরাধের জন্ম দেয়। আপন জগতে অরাজগতা, ঝোট ঝামেলা সৃষ্টি করে। ফলে প্রথমে ব্যক্তি থেকে মানুষে মানুষে, আবার সমাজ থেকে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্র থেকে মহাদেশেও ব্যবধানের দেয়াল তৈরি করি। যুদ্ধ বিগ্রহের দানা বাঁধে। ঠিক তেমনি এক গল্প এবং গল্পটি এমন- তো এক দেশে দুই কৃষক ছিলো। দুই কৃষক নিজেদের প্রয়োজনে খুব সাধারণ খুঁটি দিয়ে জমির ওপর নির্ভেজাল সীমানা নির্ধারণ করেন। কারন তারা উভয়কে বিশ্বাস করে। কিন্ত তার প্রতিবেশী সে বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কিছু কলাগাছ উভয়ের সীমানার মাঝখানে রোপন করে, যাতে এ বিষয় কেউ কিছু বলতে না পারে, দ্রুত ফল পায় এবং পাশাপাশি তার অসৎ উদ্দেশ্যও সাধিত হয়। এক সময় অসৎ লোকের সীমানার কলাগাছ ফল দেয়, ফল দেয়ার পর বুড়ো কলা গাছের মুথা জমির জৈব সারের নাম করে তার নিজের জমিতে উপরে ফেলে সীমানা পরিস্কার করে ফেলতো। এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন। কিন্ত তার আরেক সৎ প্রতিবেশী কাজের লোক রেখে বিদেশ পাড়ি দেয়। অনেক দিন পর কলাগাছটি বাড়তে বাড়তে সৎলোকের জমির মাঝখানে চলে আসে এবং এরপর অসৎ লোকটি সৎলোকের অনুপস্থিতে মালিকানা দাবি করে। গল্পটির মোরাল অব দ্যা ষ্টোরি বুঝে নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের ওপর।
আপনি/আপনারা সহসায় ভাববেন, আজিয়া সংগঠন থেকে আমার নাম বাদ পড়েছে বলে প্রতিবাদ করছি তা নয়। বিশ্বাস করুন এ বিষয়ে আমার কোন দু:খ কষ্ট নেই। আজকে যদি লুই সাংমার পরিবর্তে, অন্য কেউ হতো তাহলেও সমান ভাবেই এই লুই সাংমা আগে প্রতিবাদ করতো।
আজিয়া সংগঠন ছোট হলেও এর একটি জন্ম, স্থান আছে, ইতিহাস আছে এবং ভবিষ্যতের ইতিহাসও রচিত হবে। গারো সমাজে আরও সামাজিক সংগঠন, অঙ্গ সংগঠন তাদের জন্ম ইতিহাস রয়েছে, থাকা উচিত। যদি থাকে তাহলে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সে সংগঠনগুলোর সঠিক জন্ম ইতিহাসের দলিল সংরক্ষণ করা কতটা জরুরী সেটি সচেতন নাগরিক মাত্রই ভালো বুঝবেন।
আজিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাবুল ডি. নকরেক আজিয়ার জন্ম ইতিহাস প্রবন্ধে বিষয়টি সংশোধন করে যে বার্তা থকবিরিম পত্রিকায় পুনরায় প্রকাশ করেছেন, আমি ব্যক্তিগত এবং আদর্শিক জায়গা থেকে তাঁকে অভিবাদন জানাচ্ছি।
যে কথা এহেন না বললেই নয়, একক ব্যক্তির সমস্যা সমষ্টিগতভাবে সমাধান করা সহজ; কিন্ত সমষ্টিগত সমস্যা তৈরি হলে একক ব্যক্তি দ্বারা সমাধান করা একেবারে অসম্ভব। যেকোন সমস্যার সমাধান করতে হলে, আগে সকলের বুঝতে হবে সমস্যা কেউ না কেউ বা কেউ একজন সৃষ্টি করে। সৃষ্ট সমস্যার সমাধান চাইলে সমস্যা সৃষ্টিকারী গোড়া ভালো করে জেনে সমাধানের পথ খুঁজে নেয়া এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি উত্তম।
আজিয়াসহ গারো জাতিসত্তার সকল সামাজিক সংগঠনের কাছে আমার উদাত্ত আহ্বান, শুধু আজিয়া বা অন্য সংগঠনের ইতিহাস নয়; বাংলাদেশে গারো জাতিসত্তার সকল দৃষ্টান্তমূলক, প্রণিধানযোগ্য কর্মকান্ডের সঠিক দলিল স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তায়। একটি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সংগঠন কোন ব্যক্তি স্বার্থে জন্ম হয় না। ব্যক্তি, সাংগঠনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক দায়িত্বে এবং দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারোর অবদান অনস্বীকার্য এবং প্রাপ্য হয়ে দাঁড়ায়। বাইবেলে যীশু খ্রীষ্টের উক্তিতে তিনি যথার্থই বলেন “যা সিজারের তা সিজারকেই দাও আর যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দাও (মথি ২২:২১)”। অর্থাৎ যা কিছু মানুষের প্রাপ্য তা মানুষকে দাও আর যা ঈশ্বরের প্রাপ্য তা ঈশ্বরকেই দাও। তাই আবেগে, ব্যক্তি স্বার্থকে জড়িয়ে নয় বরং নিজের আবেগ বর্জন করে নি:স্বার্থভাবে এবং নিষ্কন্টক গারো জাতির সকল ইতিহাসের দলিল নতুন প্রজন্মকে উপহার দিন।