মানুষের জন্ম ও মৃত্যু হলো ঐশ্বরিক। জন্ম হলে মৃত্যুর স্বাদ তাকে পেতে হবে। যিশু মানুষের বেশে জন্ম নিলেন। ঈশ্বর থেকে তিনি সাধারণ মানুষের তরে ত্রাণকর্তারুপে আর্বিভুত হলেন। মানুষের জন্মে যেমন মাহাত্ম আছে, তেমনি মৃত্যুতেও মাহাত্ম নিহিত থাকে। মানবরুপে জন্ম গ্রহণ করে জীবন নামক তীর্থযাত্রায় তিনি সামিল হলেন। এই যাত্রাটি ইহ লোকের অলিগলি পেরিয়ে, স্বর্গধাম পর্যন্ত। ঘৃনা থেকে ভালোবাসা, অসত্য থেকে সত্যের দিকে, ঘোর অন্ধকার থেকে আলোর পথে, মৃত্যু থেকে অনন্ত জীবনে ধাবিত করতে আমাদের শিখিয়েছেন।
মানুষের জীবনে জন্ম ও মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও যিশুখ্রিস্টের জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থান মানব ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। যিশুখ্রিস্টের জন্ম মানব মুক্তির আশা জাগায়। সেই আশা জাগানিয়া যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান শ্বাশত জীবনে অন্ধকারময়তাকে দুরে ঠেলে দেয়। সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দেয়। মানুষের মৃত্যুই শেষ নয়, বরং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষ শ্বাশত জীবন লাভ করতে পারে।
যিশুখ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান তাঁর গভীর এক ভালোবাসার অতি উত্তম নির্দশন। যিশু পুনরুত্থান করে আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন জীবন, নতুন আশা আর নবজীবনের প্রেরণা যুগিয়েছেন। যিশুর সেই আদর্শ, প্রেরণা, পাপের ক্ষমা সমগ্র পৃথিবীর খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে সদা জাগ্রত। যিশুর এমন ত্যাগ, শ্বশত জীবনের শিক্ষায় নত হয়ে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে প্রভু যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান বা ইস্টার সানডে উৎসব।
যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের, গৌরবের। পাশাপাশি তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যেকোন কষ্টভোগ ছাড়া আনন্দ পরিপূর্ণতা লাভ করে না। শাশ্বত জীবন লাভ করা যায় না। তিনি ক্রুশ যন্ত্রনার মাধ্যমে অনন্ত জীবনের পথ দেখিয়েছেন। যিশু আমাদের শিক্ষা দেন ‘ভোগে নয়, ত্যাগেই পরম সুখ ও আনন্দ।’এই ত্যাগ বা তপস্যার যাত্রা শুরু হয় ইস্টার সানডের ৪০ দিন আগে থেকে। এই ৪০ দিন তপস্যার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। ৪০ দিনের এই যাত্রা মানুষের মন পরিবর্তন ও অনুতাপের মধ্য দিয়ে নতুন জীবন গঠনের আহ্বান জানায়, মানব গৌরবের নতুন পথটি দেখায়।
যিশুর দেখানো ত্যাগস্বীকার, প্রার্থনা, দয়া, ক্ষমা, শত্রুকে ভালোবাসা, ন্যায্যতা ও পবিত্র হওয়ার মধ্য দিয়ে যিশুর শিষ্যত্ব লাভ সম্ভব। কাজেই যিশুর প্রকৃত অনুসারী হতে গেলে নিজেই নিজের ক্রুশ কাঁধে নিয়ে তাঁর পথ অনুসরণ করতে হবে। জাগতিক সকল দু :খ, ব্যথা, যন্ত্রণা, সহ্য করে মৃত্যুবরণ করে তাঁর মূল্যবোধগুলোর প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে যিশুর প্রকৃত ভালোবাসার স্বাক্ষ্য দিতে পারবেন। কারণ যিশু নিজেই শ্বাশত জীবনের প্রতিশ্রুতিস্বরূপ। যিশুর সমাধিটি ছিল ‘শূন্য’। এই শূন্য কবরটিই প্রমাণ করে যে তিনি অনন্ত জীবনের অংশী হয়েছেন।
যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থন, এবং ৪০ দিন তপস্যা আমাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলন ঘটায়। সকলের হৃদয় মন পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করে, সঠিক পথ দেখায়; আর সেটিই হলো মানব জীবনে আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। সেখানেই যিশুর আনন্দ বিরাজ করে ইস্টার সানডের মাধ্যমে।
লুই সাংমা, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং
সাংস্কৃতিক কর্মী।