স্টাফ রিপোর্টার, মধুপুর: বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত দোখলায় আধুনিক রেস্ট হাউজ ও লেক হলে এখানে দেশী পর্যটক ছাড়াও বিদেশী পর্যটকরাও ঘুরতে আসবে। এতে দোখলার পরিচিতি আরো বাড়বে। এটি আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ও টাঙ্গাইল-১ আসনের সাংসদ ড: মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৫টায় টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার দোখলা রেস্ট হাউজের মিলনায়তনে আদিবাসীদের সাথে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দোখলা রেস্ট হাউজ: জিএমএডিসি’র সভাপতি অজয় এ মৃ ও অনান্য আদিবাসী নেতৃবৃন্দ
দোখলায় চার তলাবিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউজের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। লেক কাটার জন্য আদিবাসীদের কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন চেয়ে শুক্রবার তিনি আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গ্রেটার মাইমেনসিং আদিবাসী ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (জিএমএডিসি)র সভাপতি অজয় এ মৃ, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ’র সভাপতি ইউজিন নকরেক, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (টিডব্লিউএ) মধুপুর উপজেলা শাখার চেয়ারম্যান উইলিয়াম দাজেল, টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুল হক, মধুপুর উজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমিন, মধুপুর উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবু, মধুপুর উপজেলা পরিষদ’র মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেকসহ অন্যান্য আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।
কৃষিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা সবাই জানি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সপরিবারে এসেছিলেন এই দোখলায়। এই কারণে এই দোখলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সেই ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে দরকার। আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম এইখানে একটি আধুনিক রেস্ট হাউজ হবে। যারা এখানে ঘুরতে আসবে তারা থাকার জন্য মানসম্মত জায়গা পাবে। সেই রেস্টহাউজ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।”
ড: মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক আরো বলেন, “রেস্ট হাউজের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর আমি চিন্তা করলাম, এইখানে একটা লেক কাটলে কেমন হয়? তরুণ প্রজন্ম এখানে এসে লেকে নৌকায় করে ঘুরবে, আনন্দ পাবে, মন ফ্রেশ হবে।” লেকটা এতো বড় হবে না। লম্বায় ৮০০ ফুট ও প্রস্থে ২০০ ফুট হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু জমিগুলো যেহেতু আদিবাসীরা আবাদ করে খায় তাই আদিবাসীদের মত নেওয়া প্রয়োজন তাই আপনাদের সাথে আজকে আলোচনায় বসেছি। আপনারা মত না দিলে পুলিশও আনবোনা, আর্মিও আনবোনা।”
জিএমএডিসি’র সভাপতি অজয় এ মৃ তার বক্তব্যে বলেন, “১৯৬২ সালে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণার পর থেকেই আমরা এর প্রতিবাদ করে আসছি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দোখলায় এসে আমাদেরকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘আপনাদেরকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। ন্যাশনাল পার্ক বাতিল করা হবে।’ কিন্তু ন্যাশনাল পার্ক বাতিল করা হয় নাই। ২০০৪ সালে পীরেন স্নালকে হত্যা করার পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি যদি ক্ষমতায় আসি তাহলে প্রথমেই আপনাদের ভূমি সমস্যার সমাধান করা হবে।’ কিন্তু এখনো সমাধান করা হয় নাই।” বাংলা প্রবাধ ‘চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ডরায়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বন আইন সংশোধন হয় নাই, পীরেন স্নাল হত্যার বিচার এখনো হয় নাই। আমরা এখনো উচ্ছেদ আতঙ্কে আছি।”
অজয় এ মৃ’র বক্তব্যের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড: মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আপনাদের ভূমি সমস্যার সমাধানের জন্য আমি বারবার নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) কাছে গিয়েছি, নেত্রী বারবার আশ্বস্ত করেছেন। এই করতে করতে ১২ বছর কেটে গেলো। কিন্তু এই ভূমি সমস্যার সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। ন্যাশনাল পার্কের ব্যাপারে আমি চেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এটির কাজ আগাচ্ছেনা।” শেষে আদিবাসীদের কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন না পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ’র সভাপতি ইউজিন নকরেক, মধুপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবু, শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী প্রমুখ।