ইন্টারনেট ব্যবহার যতই বাড়ছে; তেমনি তথ্য প্রযুক্তির জনপ্রিয়তার দৌড়ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। একদিকে যেমন বেড়েছে তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যবসায়িক নানাবিধ ব্যবহার; অন্যদিকে মানুষের মেধা প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
এ যুগে অনলাইন বিপণন, স্বল্প সময়ের উদ্যোক্তা তৈরি এবং বৃহত্তর ব্যবসায়ের উভয়ের জন্যই অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। যেকোন ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটের জন্য একটি ব্লগ প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি ব্লগিং পেশা আপনাকে আপনার দর্শকদের সাথে সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি করে। আপনার ব্লগটি আপনার গ্রাহকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে কোম্পানির সাথে সম্পর্কিত আপডেটগুলি রোল আউট করার একটি দুর্দান্ত উপায়ও বটে।
ফলে একে ওপর ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা থেমে নেই। একজন ব্লগার হিসাবে, আপনি যদি আপনার পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে চান তবে আপনাকে আপনার ব্লগের সামগ্রী বাড়ানোর জন্য নিয়মিত নতুন এবং কার্যকর উপায়গুলি অনুসন্ধান করতে হবে। আপনি যখন ব্লগ শুরু করেন তখন একই জিনিসটি প্রযোজ্য হবে। আপনাকে কেবল এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা আপনার ব্লগিং পেশাকে বাঁধাগ্রস্থ বা ব্যহত করে। আপনার ব্লগিং পেশায় নিচের বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন এবং সফল ব্লগিং পেশাদারিত্বে যে বিষয় আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে-
আপনার ব্লগিং পেশাতে মনোনিবেশ করুন- একটি অস্বচ্ছ ধারণা কোন কাজের সফলতা আনতে পারে না। আপনার ধারণগুলোতে যাতে আপনি নিজেই বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য সর্বদা আপনার ব্লগিং বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করুন, কাজে নেমে পরুন, নতুনত্ব বা উত্তপ্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন। মনে রাখবেন যে আপনার ব্লগের লক্ষ্য হলো আপনার ব্যবসা বাড়ানো। আপনার লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন, বিষয়টি যত উত্তপ্ত বা ট্রেন্ডিং হোক না কেন।
আপনার ব্লগিং পোস্টগুলি ভাষা সহজ করুন- একজন পেশাদার এবং জনপ্রিয় লেখক হতে গেলে ভাষা সহজীকরণ খুবই জরুরী। যাতে পাঠক আপনার উত্থাপিত বিষয়গুলো সহজে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। আত্মস্থ করতে পারে। লেখনীর ভাষা দুর্বোধ্য হওয়া সমীচিন নয়। প্রত্যেক পাঠক আপনার পুরো ব্লগ পোস্টটি পড়বে না, অনেক পাঠকের আগ্রহ থাকে না। সে কারনে দুশ্চিন্তা করতে নেই। অর্থাৎ লেখক হিসাবে আপনি কে সে সম্পর্কে লোকেরা চিন্তা করবে না। আপনি যদি তাদের জন্য কিছু নতুন অফার করতে পারেন; তখন পাঠক নতুন ভেবে পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে।
সর্বদা নির্দিষ্ট এবং জনপ্রিয় বিষয়ে ব্লগ লিখুন- নতুন ব্লগ আইডিয়াগুলির জন্য সময় আপনি জনপ্রিয় আলোচিত বিষয়গুলিতে প্রাধান্য দিতে পারেন। একজন ব্লগার হিসেবে বিস্তৃত বিষয় এড়িয়ে যাওয়া ভালো। কারণ একজন ব্লগার হিসাবে, সমস্ত বিবরণ জড়িত থাকার কারণে বিস্তৃত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা একটু কঠিনতর কাজ হতে পারে। ব্লগিংয়ের নিয়ম হলো, আপনি যে বিষয়গুলি নিয়ে লেখার পরিকল্পনা করছেন তার জন্য আপনার শিরোনামগুলির সাথে নির্দিষ্ট হওয়া ভাল। এটি কেবল আপনার লেখার পক্ষে সহজ করবে না, এটি আপনার পাঠকদের জন্য আরও বেশি প্ররোচিত করতে পারে।
তথ্য এবং পরিসংখ্যানসহ আপনার তথ্য যুক্ত করুন- যেকোন লেখা পরিবেশনের ক্ষেত্রে তথ্য সংযুক্তি বা রেফারেন্স দেয়া জরুরী, যাতে পাঠক তথ্যে উৎসের লিঙ্ক অনুসরণ করে তথ্য এবং চিত্রের ব্যবহারিক পরামর্শ সম্পর্কে পড়তে এবং আরও জানতে পারে। লেখকের মনে রাখতে হবে, বিশ্বাসযোগ্য উত্সগুলির সাথে যুক্ত শক্ত ডেটা এবং পরিসংখ্যানগুলি আপনার পোস্টগুলিকে আরও বেশি স্বক্ষমতা দিতে স্বক্ষম।
চৌর্যবৃত্তি পরিহার করুন- যেকোন চৌর্যবৃত্তি একটি দন্ডনীয় অপরাধ। ব্লগার একজন শুধু ব্লগার নয়, সে একজন লেখকও বটে। লেখকের জন্য কারোর লেখা কপি পেষ্ট কাজটা সহজ হতে পারে কিন্ত ধরা পড়লে এর পরিনাম সুখকর নয়। আপনি যদি চৌর্যবৃত্তিকে পরিহার না করেন, তাহলে এটি আপনার ব্লগিং পেশাদারিত্বে চরম আঘাত করতে পারে, হারিয়ে ফেলতে পারেন ব্লগিংয়ের মৌলিক স্পীহা।
নিয়মিত লিখুন এবং ধারাবাহিকভাবে ব্লগ পোষ্ট করুন- আপনার ব্লগ ওয়েবসাইটটি কতটা ট্র্যাফিক বা ভিউয়ার্স পাবেন, তা নির্ভর করছে আপনি নিজের ব্লগে পোস্ট নিয়মিত কিনা, সে ক্ষেত্রে কতটা ধারাবাহিক রক্ষা করেন তার ওপর। আপনি নিয়োমিত ব্লগ পোষ্ট করলে আপনার পাঠকরা অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে, ফলে একটি ব্লগ পোস্টিং রুটিন সেট করে নিতে পারলে ভালো। এতে করে পোস্টগুলোর মাধ্যমে আপনার পাঠকদের প্রত্যাশা পূরণ এবং বিভ্রান্ত এড়াতে আপনাকে সহায়তা করবে।
আপনার সামগ্রী প্রচার করুন- সোশ্যাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে আপনার ব্লগ প্রচার করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের মনোযোগ পেতে এবং আপনার ব্লগে ট্রাফিক পেতে সামাজিক মিডিয়া একটি সমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। অর্থাৎ লোককে আপনার সামগ্রী পড়ার চেয়ে আরও বেশি চূড়ান্ত লক্ষ্য হ’ল সেই দর্শক বা ট্রাফিক ম্যানেজ করা। এরপর, আপনার ব্লগ এবং সামগ্রীতে রিলেটেট কীওয়ার্ড, হ্যাশ ট্যাগ এবং মেটা বিরবণ ব্যবহার করুন, যাতে আপনি কীওয়ার্ড স্টফিংয়ের জন্য দণ্ডিত না হন। ফলে আপনি পাবেন সর্বোত্তম কার্যকারিতা।
অভ্যন্তরীণ লিঙ্কগুলির সাথে সামঞ্জস্য রাখুন- সার্চ ইঞ্জিন রেঙ্কিংয়ের জন্য ব্যাকলিঙ্কগুলির সর্বোচ্চ তাত্পর্যপূর্ণ এবং কৌশলগতভাবে অভ্যন্তরীণ সংযোগ স্থাপন করা প্রয়োজন। ফলে ব্যবহারকারীদের এবং অনুসন্ধান ইঞ্জিনগুলির গভীর লিঙ্কগুলিতে পৌঁছানো সহজ হয়। আপনার অভ্যন্তরীণ লিঙ্কগুলির মধ্যে কোনটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্তৃত্ব রয়েছে এবং সর্বাধিক ট্র্যাফিক পান তা নির্ধারণ করুন। আপনার এবং পুরো ব্লগ জুড়ে কর্তৃপক্ষকে আরও বিতরণ করার জন্য এগুলি এবং উচ্চ মানের অন্যান্য পোস্টগুলিতে অভ্যন্তরীণ লিঙ্কগুলি রাখুন। সর্বদা একটি সাইটম্যাপ রাখুন। এটি আরও ভাল সার্চ ইঞ্জিন ক্রলিং এবং ইনডেক্সিং নিশ্চিত করে। তবে এর আগে আপনার ইউআরএলগুলি কীওয়ার্ডগুলো অনুকূলে রয়েছে তা নিশ্চিত করুন।
স্থির চিত্র এবং ভিডিওগুলি অফটিমাইজ করুন- আপনার ব্লগে সহজে ট্র্যাফিক গমনাগমনের জন্য আকর্ষণীয় উপায়ে চিত্র এবং ভিডিওগুলি অফটিমাইজ করা খুব জরুরী। এর ফলে আপনার পোস্টগুলিকে যেমন অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে; তেমনি আপনার ডেটা, এবং ধারণাগুলি আরও ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, বিষয় ভিক্তিক অনুযায়ী ভাগ করে দেয়ার ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে সহজ হয়। আপনার চিত্র এবং ভিডিওগুলো অফটিমাইজ না করলে আপনার সাইটে ওভার লোড করে ফেলতে পারে অপরিকল্পিত ডেটাগুলো।
সকল নেগেটিভ কমেন্টস ইগনোর করুন- ব্লগিং এর ক্ষেত্রে পাঠকদের মতামত প্রদানের সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন। সকল মতামত গঠনমূলক তা ভাবা উচিত নয়। যেকোন মতামতকে সাদরে গ্রহণ করুন, তবে কেবল গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনাকে বেশি প্রাধন্য দিন যাতে, সুপাঠকের চাহিদা মাফিক আপনার লেখনী আরও বস্তুনিষ্ঠ হয়ে উঠে। আপনার দুর্বলতাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সর্বদা সজাগ দৃষ্টিতে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলোন।
জনপ্রিয় বগ্লার হয়ে উঠা অত সহজ ব্যাপার নয়। প্রথম ব্লগ লিখেই পাঠকদের পিলে চমকে দিবেন বিষয়টি এমনও নয়। এমন ভাগ্য সবার কপালে জোটে না। আবার এমনটি ভাবার কারণ নেই যে, আপনি লেখালেখির প্রথম দিক থেকেই খুব ভালো লিখবেন। তবে ভালো ব্লগার হতে গেলে ভালো ব্লগ লেখার অভ্যাস এবং ভালো বিষয়গুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করা উচিত। আজকে যারা প্রথিতযশা ব্লগার, লেখক হয়েছেন তারাও শুরুতে একদমই সেরা কিছু লিখতেন তা কিন্ত নয়। আপনার নিয়মিত লেখা অনুশীলনের মাধ্যমেই ভালো লেখা ও জনপ্রিয় ব্লগার তৈরি হতে পারে। আপনাকেও সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। আপনি যদি নিয়মিত অনেক বেশি মৌলিক বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে থাকেন; তাহলে সেটা পরে ভালো লিখতে নিজের মধ্যে অন্যরকম শক্তি যোগাবে। দিনকে দিন নিজের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাড়তে থাকবে। আপনি সফল ব্লগার হতে চান, আপনি হবেন, নিজের মধ্যে এমন আত্ম বিশ্বাস থাকলে আপনি সফল ব্লগিংয়ে আপনাকে সফলতা দেবে-ই দেবে।
লুই সাংমা, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী।