চরম দারিদ্রতায় সংসার যেখানে দু’বেলা খাবার জোটে না, আর সেখানে সুচিকিৎসাতো দুরের কথা মাথা ব্যাথার প্যারাসিটামল কিনতেও এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয় গোটা পরিবারকে। দারিদ্রতায় নিমজ্জিত সংসারে যেখানে দু’বেলা সাদা ভাত জোটে না সেখানে লক্ষ টাকার চিকিৎসা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। তবুও দীপনার গভীর আশায় বুক বাঁধে, দারিদ্রতার সরল বিশ্বাসে বিশ্বাস করে যে; এই ইহ জগতে মানবতা বলে কিছু আছে, মানবিতকতায় কেউ না কেউ গরীবের কাছে সাহায্যের সুকোমল হাতটি বাড়ায়। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা আর্থিকভাবে শূন্যে পৌঁছে গেছি। যেহেতু ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা তাই আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
দীর্ঘ আঠারো বছর স্বামী অসুস্থ। অভাবী সংসারে স্বামীর শরীরে হেপাটাইটিস (ক্রনিক) অর্থাৎ লিভার সিরোসিস ধরা পরার পর গ্রামীণ কবিরাজি, এলোপ্যাথিক চিকিৎসা করাতে থাকেন। ওতেও স্বামীর রোগ পুরো ভালো হয়নি। এরপর শেষ সম্বল ভেটেমাটি বন্ধকী, বাগানের গাছ গাছালি বিক্রি এবং স্বজনদের কিছু আর্থিক সহায়তায় ২০১৮ সালে ভারতের চেন্নাইতে গিয়ে চিকিৎসা করান। সেখানে চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। সাধ্যমতো চিকিৎসা নেয়ার পর স্বামী সুস্থতা ফিরে পেলেও পরবর্তীতে স্বামীর জন্য এমন ব্যয়বহুল এবং নির্ধারিত ঔষধগুলো চলমান রাখা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।
এদিকে দুই অবুঝ সন্তান ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দীপনা চাকমাকে। অভাবী সংসারে সহায় সম্বল, সঞ্চয় বলতে যাও ছিল, ইতোমধ্যে তা সবই খরচ হয়ে গেছে স্বামীর চিকিৎসায়। স্বামীর চিকিৎসায় শ্বশুরবাড়ি, বন্ধু, স্বজনদের কাছ থেকে যাও কিছু সহায়তা পাচ্ছেন; কিন্ত তা দিয়ে সংসার চালানো, দুই অবুঝ সন্তানকে লেখাপড়া এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ যোগাবেইবা কী করে !
আ.বিমা টাইমসকে খাগড়াছড়ির দীপনা চাকমা বলেন, ‘২০০৬ সালে বিয়ে করেন জেলাস চাকমাকে। বিয়ের পর গ্রামে কৃষিকাজ করতাম, স্থানীয় একটি স্কুলেও ছেলে মেয়েকে পড়াতাম। এরপর ২০১৩ সালে খাগড়াছড়ি শহরে চলে আসি। সেখানে আসার পর সে (স্বামী) একটা ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু বেশি দিন করতে পারেনি। স্বামীর শরীর খারাপ হয়ে যেত। রেগুলার কাজ করতে পারতো না।‘
চলতি বছর শুরু থেকেই স্বামীর অসুস্থতা আরও বেড়েই চলেছে। শহরে আসার পর দীপনাও বেকার হয়ে পড়েন। তারা ননদের জমিতে ঘর তুলে থাকছেন। গ্রামের জমি থেকে কিছু ফসল পান। ননদেরা ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া ছেলের পড়ার খরচ দেন। কিন্তু দীপনা জানেন না, এভাবে কত আর দিন চলতে পারবেন। কিভাবেই স্বামীর ব্যয়বহুল চিকিৎসা করাবেন !
স্বামীর চিকিৎসা এবং সংসারে ব্যয়ভারে উপায়ন্তর না পেয়ে করোনা ভাইরাস প্রদুর্ভাবের মধ্যেও দীপনা অনলাইনে খাবার বিক্রি শুরু করেন। ‘দীপনার চুমো গরাম’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে পাহাড়ি খাবার ও শস্য বিক্রি করা শুরু করেন। এছাড়াও ‘দীপনা চাকমা দীপু’ নামের তার নিজস্ব ফেসবুকের ওয়াল ঘুরে দেখা যায়, স্বামীর চিকিৎসা এবং দুই নাবালক সন্তানদের দায়িত্বের বোঝা নিয়ে টেনে নেওয়া সংসার চালাতে প্রতিদিন অর্ডার নিচ্ছেন নানা বাহারী পদের খাবার। পাহাড়ী স্বাদের বাশেঁর চোঙায় করে ছোট মাছ, শুকরের মাংস রান্না যেটাকে চাকমা’রা বলে থাকে ‘চুঙো গরাং’। সেই সাথে সিঙারা, চানাচুর, রোল,পিঁয়াজো, সরিষার তেল সহ আরো বিভিন্ন পদের খাবার অনলাইনে মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে সেই পদের কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করে আবার নিজের বাসায় রান্না করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সেগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় ডেলিভারী দেওয়ার কাজটিও সুনিপুণভাবে করে যাচ্ছেন এই হতদরিদ্র সংগ্রামী এক পাহাড়ী নারী।
মোদ্দা কথা, স্বামীর চিকিৎসা এবং দুই অবুঝ সন্তানের কথা ভেবে, যখন যা সামনে পান, তা–ই বিক্রি করে থাকেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া ঢাকা থেকেও কেউ কেউ পণ্যের অনলাইনে অর্ডার নিয়ে থাকেন। এমন টুকিটাকি ব্যবসায় দু’বেলা পেটে সাদা ভাত জোটানো সম্ভব। ব্যবসায় লাভ, সঞ্চয় তেমন হয় না জানিয়ে দীপনা বলেন, ‘ব্যবসায় বেশি সময় দিতে হয়, কিন্ত আমি তেমন সময় দিতে পারি না । অসুস্থ স্বামী, সংসার, দুই বাচ্চা নিয়ে সামলানো এমন ব্যবসা করা কঠিন। আমাকে ব্যবসায় সাহায্যের জন্য কাউকে রাখবো, সে সামর্থ্যও আমার এখন নেই।’
স্বামীর অসুস্থতা আরও বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি চিকিৎসক কাছে গেলে চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর লিভারে টিউমার ধরা পড়েছে। অনেকগুলো ছোট ছোট টিউমার। সেগুলো ডাক্তার ক্যান্সার হিসেবে সন্দেহ করছেন। সেটি চিকিৎসার জন্যেও অনেক টাকার প্রয়োজন। এমতাবস্থায় দারিদ্রতার সরল বিশ্বাসে বিশ্বাস করে দীপনা চাকমা দীপু বলেন যে; এই ইহ জগতে মানবতা বলে কিছু আছে, মানবিতকতায় কেউ না কেউ গরীবের কাছে সাহায্যের সুকোমল হাতটি বাড়ায়, স্বামীর সুচিকিৎসায় এবং সংসার টিকিয়ে রাখতে যদি কেউ পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসতেন।‘
দীপনা চাকমা দীপুকে সাহায্য করতে চাইলে —
দীপু চাকমা
সঞ্চয়ী হিসাব নং-১১৯৯০
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
খাগড়াছড়ি শাখা।