ইন্টারনেটে কাজ করে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করা যায়, বিষয়টি কারোর কাছে অবিশ্বাস্য, ধোঁয়াতে মনে হলেও এটা সম্ভব এবং প্রমাণিত। তারা দেশের ফরেন রেমিটেন্স অবদান রাখছে, রাখা সম্ভব। প্রথমে এ কথাগুলো শুনে অনেকেই আগ্রহ পায়। অতপর কাজ করতে গিয়ে আবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে; আবার কেউবা পূর্ণ উদ্যেমে কাজ করে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে স্বক্ষম হয়। তারা পুরোপুরি ইন্টানেট ক্যারিয়ারে সফল মানুষ বললে অত্যুক্তি হবে না।

আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে; নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ আছে ঠিকই কিন্ত বাস্তব কাজের অভিজ্ঞা বিন্দুমাত্র নেই, বর্তমান চাকরির বাজারে অতিরিক্তি যোগ্যতার প্রয়োজন তা আপনি কোনদিন অনুভব করেননি। বিধায় আপনি চাকরীর বাজারে চাহিদা মাফিক নিজেকে চৌকশভাবে গড়ে তুলতে পারেননি, এর মানে এই নয় যে আপনি পুরোপুরি ব্যর্থ।

এহেন আমি বলবো সেটা আপনার সনদ অর্জনের যোগ্যতা মাত্র, কিন্ত চাকরী পাওয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত এবং যোগ্যতা অর্জন করতে আপনি পারেননি। সনদ অর্জনের পাশাপাশি চাকরী পাওয়ার এবং নিজে স্বাধীনভাবে কিছু করার যোগ্যতা অত্যাবশকীয় বিষয় এটা ভুলে গেলে হবে না। এমন দেখা যায় ইচ্ছে থাকলেও কেউ কেউ নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে না অথচ সফল জীবন যাপন করছেন। এখন প্রশ্নটা নিজেই করুন, কিভাবে !

আপনি পড়াশুনা শেষ করেছেন অথবা করবেন; তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন এই ভাবে যে, আমার যেহেতু স্মার্টফোন, কম্পিউটার আর ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে, তাহলে আমাকেও ইনকাম সোর্সের একটি সঠিক পথ খুঁজতে হবে। অন লাইনে কাজ পেতেই হবে, ইন্টারনেটে ক্যারিয়ার তৈরি করতে হবে আমাকেও; এবার নিজেই আরেকবার প্রশ্ন করুন, কি করে সম্ভব !

আমি যা বুঝেছি, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও; আপনাকে সঠিক গাইড করার কেউ নেই, এটা দোষের কিছু না। কিন্ত নতুন ক্যারিয়ার গঠন, ক্যারিয়ারে বর্তমান চাহিদা সম্পর্কে জানার এবং নিজে থেকে কিছু করার আগ্রহ না থাকাটা দোষের কিছু। সেটা আপনার নিজের অজ্ঞতা অবশ্যই। নিজের আগ্রহ নেই যেহেতু ভালো কোন আইডিয়া নেই, তখন প্রশ্ন আসে; তাহলে সহজে কি শেখা যায়। সব চেয়ে কম সময়ের মধ্যে কি শেখা যায় এবং কোনটা শিখলে মাসে ভালো একটা ফিগারে ইনকাম করা যায়।

আপনাকে মনে রাখতে হবে মানুষের দুইটা জিনিস এক সাথে ফুলফিল হয় না। যেটা সহজ এবং কম সহজে শেখা যায়, তা তো সবাই শিখতে পারে। কিন্ত তা দিয়ে মাসে ভালো একটা ফিগারে ইনকাম করা যায় না। এ সহজ সমীকরণটি আমাদের সবার বুঝতে হবে, বুঝা উচিত!

অভিজ্ঞতা বলে, সহজ কিছু শিখলে আপনাকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে, আজীবন। যতদিন ঐ সহজ বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন। সে তুলনায় আয়ের পরিমানও কম হবে। আবার মোটামুটি কঠিন কিছু শিখে নিতে বেশি সময় লাগবে। কিন্তু তা কাজে লাগালে অল্প সময় বেশি আয় করা যাবে। একটার ক্ষেত্রে শুরুতে সময় বেশি দিতে হবে, অন্যথায় পরে সময় বেশি দিতে হবে। এখন পছন্দ এবং সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে আপনাকে। যদিও একজনের কাছে একেকটা বিষয় সহজ লাগে এবং চিন্তা চেতনা, বিষগুলো বুঝার ক্ষমতাও সমান নয়।

আবার এমনও দেখা যায়, জীবনে সহজ কিছু শিখতে শিখতে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে ভালো কিছু ও শেখা যায়। কোন শেখাই ফেলে দেওয়ার মত না। শিখতে হবে, জানতে হবে। আপনাকে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। এগুলো সবসময় প্র্যাকটিসের ব্যাপার। একদিন দেখলাম, আর আমি সব শিখে ফেললাম, এমন নয়। আস্তে আস্তে প্র্যাকটিস করতে করতেই শেখা যায়। কোন কিছু পড়ার পাশা পাশি তা নিজে নিজে প্র্যাকটিস করতে হয়। কারণ কম্পিউটারের সব কাজই মোটামুটি প্র্যাকটিকেল।

অনলাইনে ক্যারিয়ারে তৈরি বা গঠন করতে হলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ধৈর্যের সহিত লেগে থাকা। আপনি যা শুরু করেছেন, এর শেষটা দেখে নেয়া। অধৈর্য হয়ে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার গড়া যায় তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। আমাকেও অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে হবে। দুয়েকটা দিন বা কয়েক মাস চেষ্টা করেছেন, তারপর মনে করলেন আমার দ্বারা অনলাইনেও কিছু হবে না বলে ছেড়ে দিয়েছেন, এটা করলে হবে না। এমনটা করলে, বোকামি করবেন। অনলাইন ক্যারিয়ার গঠনে ধৈর্য হারাবেন না। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন তিনি খুব তীক্ষ্ণধী নন, তবে একটি সমস্যা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ লেগে থাকতে পারেন। বুদ্ধি থেকে আগ্রহ বেশি গুরুত্ত্বপূর্ণ। বুদ্ধি থেকে লেগে থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অনলাইন ক্যারিয়ারে কোনটা শিখলে, কোন কাজটা করলে বেশি আয় করা যাবে, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে নিজেকেই বারংবার প্রশ্ন করুণ কোনটা আমার ভালো লাগবে। কোন বিষয়টি আমি সহজেই বুঝতে পারি। প্রয়োজন হলে বিষয়গুলো সম্পর্কে রিসার্চ, কিংবা বেশি ঘাটা ঘাটি করুণ। একটু সময় ব্যয় করুণ নিজের পছন্দের বিষয় খোঁজার জন্য। পেয়ে গেলে দেরি না করে কাজে নেমে পড়ুন, আরও শেখার জন্য, কাজ করার জন্য আগ্রহ বাড়ান এবং পৃথিবীকে দেখিয়ে দিন আমিও পারি এবং আমি ব্যর্থ নই। এমন হতে পারে, যে বিষয় আপনি শিখলেন, যা আপনার ভালো লাগে না, একদিন হয়তো ঠিকই আয় করতে পারবেন, তবে শেখার সময় হয়তোবা বোরিং লাগবে। নিজের কাছে মনে হবে শেখা ছেড়ে দিই। আমার কথা হলো, ভবিষৎতের ভালো চিন্তা করে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। কিভাবে অল্প সময়ে অনলাইনে বেশি আয় করা যাবে এ প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে ধৈর্যসহকারে শিখতে থাকুন, পাশাপাশি কাজ করতে থাকুন। অনলাইন ক্যারিয়ারে আয় নিয়ে আপনাকে একটুও চিন্তা করতে হবে না, এমন আগাম চিন্তা করা উচিত নয়। আপনি যতটুকু আয় করার আশা করেন, তার থেকেও বেশি করতে পারবেন এবং এটায় এখনকার অনলাইন ক্যারিয়ারে বাস্তবের বাস্তবতা।

লুই সাংমা, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী