আমি নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এর কোনও বিগ ফ্রেন্ড বা ফলোয়ার কোনটিই নই। বিগ ফ্রেন্ড বা ফলোয়ার না হলে তাঁর লেখা, আলোচনা-সমালোচনাগুলো জিন্দেগিতে পড়া যাবে না এমনতো নয়! কিন্ত তাঁর তীক্ষ্ণ সমালোচনা, লেখার ধরণ, লেখার ভাবধারা প্রায়শই পড়ি। আত্মস্থ করার চেষ্টা করি। ভালো লাগে। তবে কেন ভালো লাগে তা জানি না! আমার ভালো লাগা, মন্দ লাগা না হয় উহ্যই থাক।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রথিতযশা প্রাবন্ধিক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এর মৃত্যুতে উনি দীর্ঘশাস্ব ফেলেছেন বলে ছোট্ট করে ফেবুতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ছোট্ট স্ট্যাটাস হলেও এর ব্যাপকতা খুঁজে পাবেন অনেকেই, আমার যা বিশ্বাস। তিনি মাত্র চার ঘন্টা আগে সেখানে বেশ অবলীলায় লিখেছেন (নীচে কোট আন-কোট করা) –
প্রাবন্ধিক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ
‘প্রাবন্ধিক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ গতকাল মারা গেছেন। খবরটি শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। আমার সঙ্গে তাঁর কোনও সখ্য তো ছিলই না, কোনও পরিচয়ই ছিল না। কিন্তু কেন তবে দীর্ঘশ্বাস? কারণ বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে বেশি সৎ এবং নির্ভীক।
ছোট্ট একটি উদাহরণ দিই। বেশ কয়েক বছর আগে আমার একটি বই ঢাকার বইমেলায় উদবোধন করেছিলেন তিনি। কোনও লেখক-বুদ্ধিজীবী এই কাজটি করবেন? আমি নিশ্চিত করবেন না। তাঁরা ভাববেন আমার বই উদবোধন করছেন এটি সরকারের নজরে পড়ে গেলে আবার না সরকারি সুযোগ- সুবিধে পুরস্কার- উপঢৌকন ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হন। ভাববেন আমার বই স্পর্শ করে আবার আমার মতো ব্রাত্য না হয়ে যান।
হাজার মানুষের ভিড়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ আমার বইটি তুলে ধরেছিলেন। কোনও দ্বিধা করেননি আমার বই স্পর্শ করতে, ভয় পাননি আমার নাম উচ্চারণ করতে। নির্ভীক ছিলেন তিনি, নির্লোভ ছিলেন। এই চরিত্র আজকালকার বুদ্ধিজীবীদের নেই।
এক পাল ভীরু স্বার্থপর কূপমন্ডুককে মানুষ যে কেন বুদ্ধিজীবী বলে ডাকে, সম্মান করে!’
তসলিমা নাসরিনের মতোন দেশ বিদেশের বহু গুণী সহ সাধারণ জনগণ যে বা যাঁরা ‘প্রাবন্ধিক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ কে চেনে, তাঁর লেখা পড়েছেন সবাই অশ্রুজলে শোকাহত, দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। বিভিন্নভাবে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তখন নিশ্চয়ই এই বিষয়টি আর বুঝতে বাকি থাকে না, কেন তাঁর প্রতি সবার এতো দীর্ঘশ্বাস!
সৈয়দ আবুল মকসুদ এর মৃত আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রেখেই আমিও বলি, হাজার হাজার ভীরু, স্বার্থপর কূপমন্ডুক মানুষ বুদ্ধিজীবী হওয়ার চেয়ে মাত্র একপিস সৈয়দ আবুল মকসুদ হওয়াও ভালো।
লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী।