দেশের একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালী জাতির আরেকটি প্রাণের উৎসব। দেরিতে হলেও একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা উঠেছে গেল ১৮ মার্চ। প্রতি বছর পাঠক সাধারণসহ লেখক এ গ্রন্থমেলার আলাদা সুখটান অনুভব করেন। এমন অকুন্ঠ ভালোবাসার টানেই পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকের ভিড়ে উৎসব, আর মিলন মেলায় পরিনত হয় মাসব্যাপি আয়োজনে। এহেন কারোর দ্বি-মতের সুযোগ নেই।
ফেব্রুয়ারির অমর একুশে মেলাটি করোনার দরুন শুরু হলো স্বাধীনতার মাসে। মেলার আয়োজক, দেশের কর্ণধার, রাজনীতিবিদসহ দেশের বুদ্ধিজীবীরা অবশ্যই জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, পাঠকের পাঠাভ্যাস গড়া তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিলম্বিত হলেও এ বছর একুশে গ্রন্থ মেলার ফিতা কাটেন। বোধ করি এখানেও কারোর দ্বি-মত নেই।
দ্বি-মতটা তাহলে কোথায় ? ভনিতা না করে হ্যাঁ সে দিকেই যাচ্ছি আজকের মতামতের মূল বিষয়ে! পুরো বিশ্ব এখনো করোনার করাল গ্রাসে ভীত সন্ত্রস্ত। কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে নি সকল অর্থনৈতিক কাঠামো। এখানো বিশ্বের বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নি, নিয়মিত হতে পারে নি। কোথাওবা লগডাউন, সকাল বিকাল কারফিউ চলছে বিভিন্ন দেশে এখনো। যদি তাই হয় বাঙালীর গ্রন্থ মেলাটি এ বছর না করলেইবা কি এমন ক্ষতি হতো ! তবে ক্ষতি যে হতো না তা নয়, কিছু একটা ক্ষতি হতো অবশ্যই তা আমরা সকলে বুঝি ! দেশের সকল মানুষ যদি সুস্থ্য, নিরাপদে থাকে, সুস্থ রাখতে পারেন সকলকে; তাহলে এই ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি আমাদের মতোন উন্নয়শীল দেশে ভবিষ্যতে পুষিয়ে নেয়াটা খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন ছিল কী?
আমার মনে প্রশ্ন জাগে, বই মেলা উদ্বোধন করে উদার মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন; তবে দেশের মানুষকে কি পরিমাণ করোনা ঝুঁকিতে ফেলে দিলেন তা কেন একবারও ভাবলেন না? তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির এই যুগে মুদ্রিত বই, পাঠক কিংবা লেখক কি হারিয়ে যাবে? এমন প্রশ্ন যৌক্তিক নয়। আপনি দেখবেন করোনাকালে আলীবাবা, আমাজন, ইবেসহ অন্যান্য অনলাইন ভিক্তিক ইকমার্সগুলো বাম্পার ব্যবসা করছে, এমন প্রতিবেদনটি কী কারোর নজরে আসে নি ? এই তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে প্রায় ডাবল আয় করছে, তাহলে দেশের প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আপদকালীন ব্যতিক্রম মেলার আয়োজন করা যেতো কী?
দিন দিন গ্রন্থমেলায় পাঠকদের সমাগম বাড়ছে এবং আরও বাড়বে। জনসমাগম বাড়লে করোনার ঝুকিও বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিও এখনো স্থিতিশীল নয়; বরং দিনকে দিন বাড়ছে। দেশে করোনার প্রতিষেধক প্রথম ডোজ কার্যক্রম শুরু করলেও শতভাগ এর আওতায় সম্ভব হয় নি এখনো। করোনার ঝুকি ওখানেইতো আরও বেশি রয়ে যায়, রয়ে গেল কি!
স্বাস্থ্যবিধিনুযায়ী একেওপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় কিংবা মুখে মাস্ক পড়লেই করোনা প্রতিরোধ যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে স্যানিটেশান সহ স্বাস্থ্য সচেতনতা, মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারীভাবে দেখভালের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী।