আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: দ্রোহী কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হিমেল বরকত আর নেই। তিনি বেশ কিছুদিন যাবত হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভোগছিলেন। রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪২ বছর।
গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সময় তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। এর পরপরই তাঁকে দ্রুত ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
ভগ্নিপতি মাহমুদ জানান, হিমেলের রক্তচাপ কমে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও সেটা বাড়াতে পারেন নি। তিনি জানান, হাসপাতালে আসার পর দুই বার হার্ট অ্যাটাক হয় কবির। লাইফ সাপোর্টে নেয়ার পর আজ রোববার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে মৃত্যু হয়।
ক’দিন ধরে ফেবু সোস্যাল মিডিয়াতে তাঁর অসংখ্য ভক্ত, অফিস কলিগ, ছাত্র/ছাত্রী, বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্খিরা বিভিন্ন বার্তায় তাঁর দ্রুত আরোগ্য লাভে বিনয়ের সহিত মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা চেয়েছেন।
তেমনি তারই ছাত্র ফেবু এক বার্তায় লিখেছেন, ‘যাঁর কবিতার ক্লাস করে কবিতার প্রেমে পরেছিলাম, তিনি কবিতাকে এত নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করতেন যে তা মনের মাঝে গেঁথে যেত। মেঘনাদ বধ মহাকাব্য মানেই যেন হিমেল স্যার। স্যারের ক্লাসে আমারা মেঘনাদ বধ মহাকাব্যের দ্বিতীয় স্বর্গ উপস্থাপন করেছিলাম। আমরা নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগেই শেষ করাতে স্যার বিস্মিত ও খুঁশি হয়েছিলেন। স্যার ম্যাসিভ কার্ডিয়াক এরেস্ট। স্যারের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য সকলের আশীর্বাদ কামনা করছি। প্রিয় স্যারকে আমাদের মাঝে স্রষ্টা ফিরে দিক।‘- সুজিত মোহনতো।
আজ তাঁর অকাল প্রয়াণে ফেবুতে শোকের ছায়া নেমে আসে এবং তারা তাদের বিভিন্ন বার্তায় লিখেছেন-
“Beyond the door, there’s peace, I’m sure
And I know there’ll be no more tears in heaven”
দশমাতৃক দৃশ্যাবলী’ তে লীন তুমি
তুমি Himel Barkat বন্ধু আমার। – সূচারু দেশ
‘বিশ্বাস হচ্ছে না। স্যার Himel Barkat আর নেই। ঘুম থেকে উঠে মন ভেঙে গেলো…বড় ভাই রুদ্রর কাছে যাওয়ার এতোই কি তাড়া ছিলো স্যার ?’- মায়িশা তাসনিম ইসলাম
‘না ফেরার দেশে চলে গেলেন দ্রোহী কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিমেল বরকত ভাই। এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন…. মেনে নিতে পারছি না…
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে স্বর্গবাসী করুক, সেই কামনা রইলো।’- প্রসেনজিৎ মণ্ডল
‘পৃথিবীতে ভালো মানুষেরা হয়তো অল্প সময়ই থাকেন। মানুষের অপরিমেয় ভালোবাসা তাদেরকে পৃথিবী হতে বিদায় করে দেয়।
অনাত্মীয় কোনো মানুষের জন্য এই প্রথম দুচোখ ভরে জল আসছে আর বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে।
হায় জীবন এতো ছোটো ক্যানে!!!!
জাহাঙ্গীরনগর বাংলা বিভাগ তথা পৃথিবীতে আপনার শূন্যতা অপূরণীয়। আপনাকে স্রষ্টা কেড়ে নিয়েছে, আপনাকে ভালো রাখুক ওপারে।আপনার পরিবার শোক বহন করার শক্তি অর্জন করুক।’ – জুলহাস উদ্দিন শিমুল
তাঁর ক্ষণ জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য গ্রন্থ ভক্তদের উপহার দিয়েছেন। এর মধ্যে তাঁরই সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের আদিবাসী কাব্যসংগ্রহ’ উল্লেখযোগ্য। এ প্রসঙ্গে সাংস্কৃতিক কর্মী ও অন লাইন ব্লগার জনাব লুই সাংমা আ.বিমা টাইমসকে জানান, ‘সালটা ঠিক মনে করতে পারছি না; তবে ২০১২ বা ১৩ হবে এবং তাঁর সঙ্গে ফেবুতে পরিচয়। ফেবুতে পরিচয় হলেও তিনি শুধু অমায়িক একজন শিক্ষক ছিলেন তা নয়; তিনি অসাধারণ কবি, লেখকও বটে। তাঁর সম্পাদিত কাব্যসংগ্রহে আমার লেখাসহ প্রায় ডজন খানেক আদিবাসী লেখকের লেখা কবিতাও স্থান পেয়েছিল। আজ আমাদের কাছে এই ‘বাংলাদেশের আদিবাসী কাব্যসংগ্রহ’ গ্রন্থটি অসাধারণ একটি দলিল। তাঁর এই অকাল প্রয়াণ জনজাতির অপূরণীয় ক্ষতি।‘
পরিবার থেকে আরও জানানো হয়, হাসপাতাল থেকে জাবি শিক্ষকের মরদেহ নেয়া হয়েছে মোহাম্মদপুরে সেবামূলক সংস্থা আল-মারকাজুল ইসলামীতে। সেখানে গোসল করানো শেষে মরদেহ নেয়া হবে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তাঁর বড় বোনের বাসায়। সেখান থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিক্ষককে নেয়া হবে প্রিয় ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগরে। ক্যাম্পাসে হতে পারে তাঁর জানাজা।
মাহমুদ হাসান আরও জানান, জাহাঙ্গীরনগরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে কবি ও শিক্ষকের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলার মিঠাখালী গ্রামে রওনা হবেন স্বজনরা। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে আত্মীয়, বিদ্যাপিঠসহ এলাকায় এক শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আ.বিমা টাইমস পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।