আ.বিমা টাইমস জলছত্র, মধুপুর:  টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধার নিয়ে সম্প্রতি সরকারি পদক্ষেপকে ভূমি উদ্ধারের নামে আদিবাসী উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র দাবি করে মহা সমাবেশ করেছে মধুপুরের আদিবাসী জনতা। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় আজ রোববার বেলা ১১টায় জলছত্র ফুটবল মাঠে। এতে কয়েক হাজার গারো নারী-পুরুষের সাথে স্থানীয় বাঙালিরাও অংশ গ্রহণ করেন। এর আগে সকাল থেকে তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মিছিল নিয়ে মাঠে জমায়েত হতে থাকে। মধুপুর গড়াঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক।

জলছত্র বিক্ষোভ সমাবেশ

ছবি: জলছত্রে আদিবাসী মহা সমাবেশ ও জনতা

গত ২৫ জানুয়ারি মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে (আনারস চত্তর) মানববন্ধন করে এবং ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ভূমির অধিকার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামসহ ২৩টি সংগঠনের সংহতিতে ঢাকা শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদিবাসীদের ভূমি অধিকারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির পর, তাঁদের প্রতিবাদ ও আন্দোলনকে আরো জোরদার করার লক্ষ্যে এবার বিক্ষোভ এবং মহা সমাবেশ করেছেন মধুপুর গড়াঞ্চলের সর্ব স্তরের আদিবাসী জনতা।

আদিবাসী মহা সমাবেশ

মহা সমাবেশে আদিবাসী নেতাদের অভিযোগ করেন, সরকার এবং বনবিভাগ স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে কোন আলোচনা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়নে পায়তারা করছে। সরকার তাঁদের খাজনা বন্ধ করে দিয়ে শুধু আদিবাসী ক্ষতি করছেন না, সরকার রাজস্ব এবং সরকারী বন ও বনভূমির সম্পদ হারাচ্ছেন। ফলে আদিবাসীরা সুস্পষ্টভাবে তাঁদের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া ‍স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন যে; বন বিভাগ, আদিবাসী ও রাজস্ব বিভাগগের যৌথ উদ্যোগে জরিপের মাধ্যমে আদিবাসীদের ভূমি চিহ্নিত করা, মধুপুর বনাঞ্চলের সংরক্ষিত, জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ঘোষণা বাতিল, ১৯৮২ সালের আটিয়া বন অধ্যাদেশ বাতিল, স্বত্বদখলীয় ভূমিসমূহ স্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা, বন মামলাসমূহ ভ্রাম্যমাণ আদালত সৃষ্টি করে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা ও সামাজিক বনায়ন বাতিল করে প্রাকৃতিক বন রক্ষার দায়িত্ব তথা কমিউনিটি ফরেস্ট্রি বা গ্রামবন পদ্ধতি চালু করাসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন।

জলছত্রের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তৃতা করেন -জয়েনশাহী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, জিএমডিসির সভাপতি অজয় এ ম্রি প্রমুখ। সংহতি প্রকাশ করেন সেড এর পরিচালক ফিলিপ গাইন, নিজেরা করি উন্নয়ন সংগঠনের ফজলুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম, জুলহাস উদ্দিন, আক্তার হোসেন,  রেজাউল করিম বেনুসহ স্থানীয় আদিবাসী ছাত্র সংগঠন বাগাছাস, গাসু, জিএসএফ, আ.চিক মি.চিক এবং আজিয়াসহ অন্যান্য আদিবাসী অঙ্গসংগঠনের নেতা নেত্রীবৃন্দ

সমাবেশ কর্মসূচীতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপনের জোর দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়াও নেতারা মধুপুরের আদিবাসীদের দাবি এবং এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অনতিবিলম্বে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তাঁদের দাবি না মানলে এর চেয়েও আরও কঠোর কর্মসূচী হাতে নেয়া হবে বলে জানান সম্মিলিত আদিবাসী নেতা, ছাত্র সংগঠনসহ এলাকাবাসী।