ভারতে গো-মাংস খাওয়া না খাওয়া, গো-মূত্রের গুন এবং এর ব্যবহার নিয়ে বহু প্রতিবেদন পড়েছি। এটিকে কেউবা বলছেন ভন্ডামি; আবার চিকিৎসকরা বলছেন বৈজ্ঞানিক কোন তথ্য প্রমাণ নেই। এতো কিছুর পরও এবারতো গোঅনুসারীরা আরও একধাপ এগিয়ে বিজ্ঞানকে পেছনে ফেলে বলছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় গোবর ব্যবহারে ভালো হয়। এবার আপনি কি বলবেন !

২০১৯ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ভারতে গরুর দুধের চেয়ে গো-মূত্রের দাম বেশি। হ্যাঁ এতোদিন যাবত এটিই শুনে এসেছি। গরুর দুধের দাম থেকে মূত্রের দাম বেশি! শুনতে অদ্ভুত করার মত লাগলেও বাস্তবে এমনটি ঘটেছে প্রতিবেশি দেশ ভারতে।

এবার ধরে নিন গো-মূত্রের পর গোবর ভারতের লেটেস্ট আবিস্কার। এতোদিনতো কলকাতায় গরুর দুধের দামের থেকে গরুর মূত্রের দামতো বেশি-ই ছিল। এখন যদি গোবর করোনা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হয় তাহলে গো-মূত্রের চাইতে গোবরের দাম ডাবল হতে পারে। তার কারণ গত তিন চার বছরে নিশ্চয়ই দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে গোমূত্রের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

আনন্দ বাজার পত্রিকায় তথ্য মতে, ইতোমধ্যে দেশটিতে গো মূত্রের বাজার গড়ে উঠেছে; গড়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকায় এজেন্ট। গত কয়েক বছরে সেখানে গোমূত্রের চাহিদা পাঁচ গুণ বেড়েছে। মাসে প্রায় ১০ হাজার লিটার গোমূত্র বিক্রি হয় পশ্চিমবঙ্গে। এক লিটার গোমূত্রের দাম ৪১০ টাকা আর দুধ বিক্রি হয় ১৭৬ টাকা লিটারে। বর্তমানে কলকাতায় গো মূত্রের চাহিদার দরুন গো দুধ লিটার প্রতি ৪১-৫১ টাকায় নেমে এসেছে। এবার তাহলে একটু ভাবুন তো গো মূত্রের চাহিদা যেভাবে বেড়েছে; গোবর করোনার প্রতিষেধক হলে গোবরের দাম কেজি নয়, ১০০গ্রাম গোবরের দাম কত হতে পারে?

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষায় ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় গোবার এবং গোমূত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সতর্ক করেছেন ভারতের চিকিৎসকেরা। তাদের দাবি, ভাইরাসটি প্রতিরোধে গোবরের কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রমাণ নেই। বরং এর প্রয়োগে শরীরে অন্যান্য রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়াও গোমূত্রের ব্যবহার সম্পর্কে দেশটির ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বপন তখন জানিয়েছিলেন, গো মূত্রের পুরো ব্যাপারটি ভণ্ডামি। গাছগাছালি থেকে রাসায়নিক বের করে ওষুধ হতে পারে। তার ফার্মাকো কাইনেটিক্স ও ডায়নামিক্স রয়েছে। গোমূত্রের এমন কিছুই নেই।

সমগ্র ভারতে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক সংক্রমণে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। অক্সিজেনসহ নানাবিধ সংকটে ভেঙে পড়েছে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থাও। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় বেড, অক্সিজেন ও ওষুধের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে যেন মৃত্যুর মিছিল চলছেই। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও রয়েছে চার হাজারের আশপাশেই।

বর্তমানে ভারতে যে হারে করোনা জেঁকে বসেছে, ফলে করোনা প্রতিরোধে গোবরের ব্যবহার এবং এর দাম আকাশচুম্বী হতে পারে। আক্সিজেন সংকট তো আছেই তাদের; এর ফলে আবার গোবর উৎপদন সংকটে পড়ে যেতে পারে ভারত।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফার্মাকোলজির শিক্ষকের কথা অনুযায়ী গো-মূত্রে কিছু নেই; সুতরাং গোবরের মধ্যেও রোগ প্রতিরোধের তেমন কিছু নেই। থাকার কথাও নয়; বিজ্ঞানও তা আবিস্কার করতে পারে নি। করোনা বিপর্যয়ের সময় মানুষের মধ্যে এমন ভ্রান্ত ধারণা, বিজ্ঞানকে পাশকাটিয়ে এটি তামাশা, ভন্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। এর ফলে ভারতে করোনা ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে এবং পশু থেকে মানুষে নানাবিধ রোগ, অসুখ বিসুখ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।