এ প্রতিবেদনটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের এক নেতার বয়ান দিয়েই শুরু করি। তিনি বলেন, অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম আমাদের কাছে নালিশ করেন, আপনাদের এই লোক (প্রিন্স এডুওয়ার্ড মাংসাং) তো আমার সর্বনাশ করে দিতেছে। অবিরত সে আমার বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছে। আপনারা ওকে বলে বুঝিয়ে থামান না!

প্রতি উত্তরে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানকে বলি, ওকে বলে কোন লাভ নেই। ও তো আমাদের বিরুদ্ধেও লিখে যাচ্ছে। আমাদেরকে দালাল রাজাকার ভন্ড দূর্নীতিবাজ বলে বলে মান-সন্মান সব শেষ করে দিচ্ছে। আমরা অনেক উপায়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন লাভ হয় নি।

এ অবস্থায় চেয়ারম্যানের সাথে শলা করে আমরা উভয় পক্ষই এডুওয়ার্ডের বিপক্ষে ডিজিটাল আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু মধুপুর থানার ইনচার্জ আমাদের মামলা গ্রহণ করে নি, চেয়ারম্যানের মামলাও গ্রহণ করে নি। এ অবস্থায় চেয়ারম্যান আমাদের কাছে জানতে চায়, এখন কি উপায়? আমরা তাকে বলি, আমরা তো অনেক চেষ্টা করেছি, চেষ্টা করেও কিছু করতে পারি নি। দেখেন আপনিই কিছু একটা করতে পারেন কিনা। যেন শিক্ষা হয়। আর আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমরা এর আগে-পিছে থাকব না। কোন আন্দোলন প্রতিবাদে যাব না। এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না।

মাইরের পর থানা পুলিশ প্রিন্স এডুওয়ার্ড মাংসাংকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম থানায় আসেন, আমরাও থানায় যায়। সে সময় চেয়ারম্যান মামলা রুজু করতে চাইলে থানার ইনচার্জ বলেন, একটা নির্দোষ লোককে ধরে গাছে বেঁধে মাইর দিয়া আধমরা করে ফেলছেন, আর এখন বলছেন মামলা করবেন! যে অপরাধ করছেন- আপনি তো দৌড়ের উপরে থাকবেন। আগে নিজেরে সামলান। কিভাবে রেহাই পাবেন সেই চিন্তা করেন।

এর পর পার্টির লোকজন মামলা নেয়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে ফোন দেয়। মন্ত্রী রাজি হয় না। মন্ত্রীরে ভুলভাবে বোঝানোর পরও মন্ত্রী রাজি হয় না। এতো কিছুর পরও এডুওয়ার্ডের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে।

উল্লেখ্য, নির্যাতিত এই প্রিন্স এডুওয়ার্ড মাংসাং দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নানা বিষয় সহ জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এবং পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম অপকীর্তি নিয়ে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। সেসব জনগণের সামনে তুলে ধরতেন। এ কারণে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের নেতাসহ এলাকার কিছু নেতাও তার প্রতি নাখোশ ছিলেন।

স্থানীয়ভাবেও অভিযোগ আছে যে ভোটে কারচুপি করে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদেরও চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান। সে সময় পরিষদের মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৩০, কিন্তু ভোট পড়েছিল ২৭৭টি। এর মধ্যে অনেকেই আবার ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন নি।

চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সংগঠনের ভেতর নানা অনিয়ম দূর্নীতি করা সহ মধুপুরের বিভিন্ন ব্যক্তির বিপদে-আপদে সমস্যায় সেসব ব্যক্তির দুর্বলতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে হয়রানি করা সহ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে আসছে। এছাড়াও ইকোপার্ক ইস্যুতে তাদের বিতর্কিত ভূমিকা তো সর্বজনবিদিত। মধুপুরে কিছু নেতা বুক-পিট নাই দালাল নামেও পরিচিত।

জানা যায়, নির্যাতিত প্রিন্স এডুওয়ার্ড মাংসাং যুবক বয়স থেকেই রাজনীতি করতেন, রাজনীতি সচেতন ছিলেন। সব সময় অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কখনই অন্যায় অনিয়মকে বরদাস্ত করতেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সব মূহুর্তে আপোষহীন ছিলেন।

অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামী যুব লীগও তারাই প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন অরণখোলা ইউনিয়নের আওয়ামী যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। মাঝখানে রাজনীতির ময়দান ছেড়ে তিনি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। কিন্তু যার রক্তে রাজনীতি, তিনি কি আর এ ময়দান ছেড়ে বেশিদিন থাকতে পারেন। বেশিরভাগ সময়ই ব্যবসা ফেলে এদিক-ওদিক রাজনীতির বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশ নিতেন, যোগ দিতেন। রাজনীতির লোকদের সঙ্গ দিতেন। আর যখনই দেখতেন অন্যায় হচ্ছে, অনিয়ম হচ্ছে, তিনি তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন। পাশাপাশি অন্যদেরকেও বলতেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে।

মানলাম এডুওয়ার্ড মাংসাং ভুল করছে। সে করেছে। ভুল করে থাকলেও কিন্ত মধুপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের অনত্যম মাদার সংগঠন হিসেবে আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় অঙ্গসংগঠন তাকে শুধরে নেয়ার দায়িত্বও তাদের ওপরই বর্তায়। একজন আদিবাসী যখন বিপদগ্রস্ত হয়, বিপথে যায় তখন তাকে সুপরামর্শ না দিয়ে, তাকে বরং বিপদে, অন্ধকারে ঠেলে দেন সে গণ দায় ভার কি আপনারা কেও এড়াতে পারবেন ! মধুপুরের নানা ইস্যূতে জনসন্দেহের তির আপনারা কোনভাবে এড়াতে পারবেন ? অত :পর প্রশ্ন থেকেও গেল, তাহলে এলাকায় আপনারা কাদের জন্যে রাজনীতি করেন, নেতৃত্ব দেন ?

মতামতকারী,

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

পুনশ্চ: এ মতামতের জন্য প্রকাশক ও সম্পাদক দায়ী নহে।