আ.বিমা টাইমস নিউড ডেস্ক: ভারতের পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী নদীর তীব্র ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে অর্ধশত বাড়িঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গেল পাঁচ মাস ধরে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে ভাঙ্গন কবলিত তীরবর্তী বাসিন্দারা। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ভিটেবাড়ি, ফসলী জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ, আরও নানা আদি স্থাপনা। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো হলো, উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের কামারখালী, ভূলিপাড়া, বরইকান্দিসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা।

নদী ভাঙনরোধে সরকারী অনুদান না পেয়ে, গ্রামবাসী এবং পার্শবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন দেশীয় সংঠন, সেচ্ছাসেবীগণ কাঁধেকাঁধ মিলে ভাঙন রোধে এগিয়ে এসেছে। মানবতায় যা সত্যি একটি অনন্য  উদাহরণ। পাশাপাশি সহমর্মিতায় দেশ ও বিদেশের মানবতাবাদীরা অর্থ সহয়তা প্রদান করে যাচ্ছেন। এইসব ভাঙ্গন কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইউরোপীয় গারো কমিনিউটি (ইজিসি)। আজ শুক্রবার (৯ অক্টোবর ২০২০) নদী ভাঙ্গনে স্থানীয়দের কাজের সাথে একাত্মতা জানিয়ে কামারখালী সোমেশ্বরী নদী ভাঙ্গন কমিটির হাতে ৪৬ (ছেচল্লিশ) হাজার টাকা সহায়তার নগদ অর্থ তুলে দেন। অর্থ সহায়তাদানকারী দেশগুলো হলো ফ্রান্স, ইতালী এবং জার্মানী। ইউরোপীয় গারো কমিনিউটির পক্ষে মিসেস প্রমিলা রুগা এ অর্থ নদী ভাঙ্গন কমিটির হাতে তুলে দেন।

আ.বিমা টাইমসকে ইউরোপীয় গারো কমিনিউটির আহ্বায়ক ফ্রান্স প্রবাসী জনাব লুই সাংমা জানান, ‘আসলে এটি ইউরোপীয় গারো কমিনিউটি (ইজিসি)র খুবই ক্ষুদ্র প্রয়াস। সত্যি বলতে, আমরা বিদেশের মাটিতে বসেও দেশের খবর আমাদের নখদর্পণে থাকে। ফলে দূর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদী ভাঙ্গন এলাকাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। প্রশাসন থেকে সরকারী অনুদান হিসেবে আপদকালীন ভাঙ্গনরোধ কর্মসূচী উদ্বোধন করেও সেই কাজ আর পরে না হওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে আরও ব্যথিত করে, এবং উদ্বেগজনক ছিলো। আমরা আশা রাখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কামারখালীসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সকলের পাশে দাঁড়াবেন এবং ভাঙনরোধে নদীর দু’পাশে স্থায়ী বেরিবাধ নির্মাণে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। পাশাপাশি সোমেশ্বরী নদীতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করে আসছে, যা পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এসব অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলেই নদীর দু’পাশে তীব্র ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধকল্পে প্রশাসনিকভাবে স্থায়ী ব্যবস্থা নেবেন। তা না হলে আগামীতে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমাদের প্রয়াস ক্ষুদ্র হলেও মোরাল অবলিগ্যাশান থেকেই কাজটি আপনারা করেছেন এবং সেজন্য সকল ইউরোপীয় গারো কমিনিউটি ফ্যামিলিকে অসংখ্য ধন্যবাদ যারা এই মানবতায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন।’

নদীর ধর্মই একূল ভাঙা, ওকূল গড়া; কিন্ত এ নিষ্ঠুর খেলা বন্ধ চায় এলাকাবাসী। আগুনে পুড়লে মাটি ও ছাইচাপা স্বপ্ন থাকে; কিন্তু নদী ভাঙলে এক বুক নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। বর্তমানে এমনই ভয়াবহ নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে দূর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী এলাকা। এরপর আবার সরকারী সহায়তা না পেয়ে ভাঙন এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা। দিনকে দিন বেপরোয়া গতিতে ভেঙে চলছে এসব জনপদ। নদীর ভয়াবহ ক্ষুধা যেন কিছুতেই মিটছে না। সোমেশ্বরীর থাবা যেন থামছেই না। ফলে নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী এবং কার্যকর পদক্ষেপ চায় এলাকাবাসী।