সোস্যাল এবং প্রিন্ট মিডিয়ার টার্গেট এখন ডনাল্ড ট্রাম্প। ফলে সহসায় আমার এবং আমার মতোন কিছু মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, ট্রাম্প ও মেলানিয়া করোনাভাইরাস আক্রান্তে আপনি/আপনারা এতো উচ্ছসিত কেন ? যদি তাই হয় তাহলে আপনার উচ্ছসিত হবার হেতু বুঝতে বাঁকি রইলো না। বাকী থাকার কথাও না। টুক টুক করে ললিপপ চকলেট খাওয়ার বয়স না। আমার সেই বয়সও নেই। জগত সংসারে কিছু মানুষ থাকে মানুষের বিপদেও দাঁত খিল খিল করে হাসে, এবং হাসতে জানে। কোথায় আমাদের মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, প্রার্থনা থাকার কথা। কিন্ত তা না করে ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দায়ী করে বসি কোন ব্যক্তিকে। কাউকে দায়ী করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি নিজেও কোনভাবে দায়ী কিনা !

তাঁদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক কনি ব্যারেটকে মনোনয়নের ঘোষণা দিয়ে গত শনিবার হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে এই অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর এখন সমালোচনার ঝড় বইছে সেই আয়োজনকে ঘিরে, যাকে বিপজ্জনকও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আরো এও বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকে ট্রাম্প এ নিয়ে হেসে-খেলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর পরও ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বালাই ছিল না। ট্রাম্পসহ উপস্থিত সেনেটর, অতিথিদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক ছিল না। তারা বসেছিলেনও গা ঘেঁষাঘেষি করে। ট্রাম্প-মেলানিয়া বাদে ওই অনুষ্ঠানে থাকা চারজনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে ইত্যাদি, আর ইত্যাদি।

নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরীন তিনিও সোস্যাল টাইম লাইনে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প হাড়ে হাড়ে বুঝুক কোভিড-১৯ কি জিনিস!’ এবং তা কালের কন্ঠে প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, ট্রাম্পের করোনাভাইরাস একটু দেরিতেই হলো। আমি তো আশংকা করেছিলাম আরো আগেই হবে। উনি মাস্ক পরবেন না, উনি কারো সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন না। হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সেদিন পার্টি হলো, প্রায় কেউই মাস্ক পরেননি। নির্বাচন প্রচারণায় যাচ্ছেন, তিনি তো মাস্ক পরেনই না, তাঁর কাছের লোকদেরও মাস্ক পরতে দেন না। হোয়াইট হাউজের সাংবাদিক সম্মেলনে মাস্ক পরা সাংবাদিকদের কী হেনস্থাই না করেন। তাঁর মাস্ক বিরোধী প্রচারণার কারণেই তো গড়ে উঠেছে অ্যান্টি-মাস্কার দল, যারা মিছিল করে বেড়ায়, রাস্তায় রেস্তোরাঁয় মাস্ক না পরা লোকদের অভিনন্দন জানায় আর মাস্ক পরা লোকদের অপমান করে। ট্রাম্প তো করোনাভাইরাসকে প্রথম থেকেই গুরুত্ব দেননি। চীনা ভাইরাস বলে একে ডেকেছেন, চিকিৎসক না হয়েও মানুষকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দিয়েছেন, হাইড্রক্সিক্লরোকুইন, এমনকী ডিজইনফেক্টেন্ট খেতে বলেছেন। বিশেষজ্ঞদের জানাতে হয়েছে হাড্রোক্সিক্লরোকুইন করোনাভাইরাস সারায় না, লাইজল কম্পানি তড়িঘড়ি মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছে, ভুলেও কেউ যেন ডিজইনফেক্টেন্ট লাইজল খাবার চেষ্টা না করে……ইত্যাদি কথা।

আমি যা বুঝি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ঘটনা করোনায় শেষ নয়। আসলে শুরুটা হয়েছিল প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচিত হবার পর থেকেই। ঠিক তখনও কেউবা মহা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, তিনি নির্বাচনে জিতবেন না, হারবেন। তিনি হারেননি। শুধু কি তাই ! প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে বসতে না বসতে, সেই গদিতেও তিনি বেশিদিন টিকবেন বলেও মিডিয়াতে গরম খবর রটেছে। বিবৃতি দিয়েছেন। এরপর ভূ-রাজনীতিতে উত্তর কোরিয়াসহ নানা ইসূতে মানুষের আস্থা ছিলো না। কেউবা তাঁকে বানর খুন্টি খেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশ্বকে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন,  যুদ্ধাং প্রেসিডেন্ট বলেও আখ্যা দিয়েছে। আরও কত কথা…. !

আপনি আপনারা দেখুন উনি ক্ষমতায় বহাল তবিয়তে ছিলেন, আছেন। দ্বিতীয়বার নির্বাচনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভূ-রাজনীতির মাঠেও দক্ষতার সঙ্গেই খেলছেন। ট্রাম্পের গোল পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টির জন্য আপনাদের আমাদেরকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

আমরা যারা ব্যক্তি সাধারণ, অসাধারণ তাদেরকেও বলি; সমাজে কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে খিল খিল করে হাসে এবং তারা কেবল হাসতেই জানে। অন্যের বিপদে বিনোদন নেয় এবং অন্যকে বিনোদিত করে। মানুষের দুর্দিনে তারা কাঁদতে জানে না। বিষয়টি আজব লাগে আমার!  আমি বলি কি, মানুষের বিপদে দাঁত খিল খিল করে হাইসো না, নিজের দাঁতও মাইজো। তাই বলছি কোভিড-১৯র জন্য আসলে দায়ী কে, কোথায় উদ্ভব হয়েছে সেটি বড় করে ভাবার সময় এখন নয়; বর্তমান বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিকে কিভাবে একযোগে সামলাতে পারি এবং অন্যকেও সহায়তা করতে পারি, মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে এবং ভাইরাসটিকে নির্মূল করতে পারি সেদিকে সবার দৃষ্টি দেয়া উচিত।