লিয়াং রিছিল, মধুপুর: টাঙ্গাইল জেলাধীন মধুপুর উপজেলার ৪নং কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর বাজারে স্বর্গীয় বিশ্বনাথ চাম্বুগং এক গারো আদিবাসীর ৩.৮১ (তিন একর একাশি শতাংশ) রেকর্ড জমি দখলমুক্ত করার দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ খ্রীঃ) সকাল দশ ঘটিকায় মানব বন্ধন কর্মসূচিটি শুরু হয় মধুপুর জলছত্র বাস স্ট্যান্ডে। আদিবাসীদের জমি হতে ভূমিদস্যূদের দখলমুক্ত করার দাবীতে মানব বন্ধন কর্মীসূচির আয়োজন করেন আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ এবং এলাকার সর্বস্তরের আদিবাসী ছাত্র জনতা। আয়োজকরা বলেন, কর্মসূচিটি বৃষ্টির কারনে পরিকল্পিতভাবে করা সম্ভব হয় নি; তবে বিভিন্ন মিডিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ভিক্টিম এবং স্থানীয় নেতারা।
এ ব্যাপারে আ.বিমা টাইমসকে টেলিফোনে মামলার অভিযোক্তা প্রভাতী সিমসাং (মৃত বিশ্বনাথের নাতনী) এক বিবরণে জানান, প্রভাতীর দাদু (মৃত) বিশ্বনাথ ভূমি দখলদারদের বিরুদ্ধে গত ২০০০ সালে মামলা করেন। কিন্ত সে মামলার রায় দেখে যেতে পারেন নি। গত ২০০৩ সালে ২৫ মে পরলোকগমন করেন। দাদুর মৃত্যুর পরও প্রভাতী জানতেন না, গংদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ঘাটিয়ে মামলার বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পারেন। জানতে পারলেও প্রভাবশালীর ভয়ে মিডিয়ার সামনে এতো দিন সে মুখে খুলেন নি।
বিভিন্ন সূত্র ধরে মামলাটির সত্যতা পাওয়া গেলেও; তখন উক্ত মামলার আইনজীবিও অনন্তধামে। এরপর আইনজীবির মুহুরিকে খুঁজে বের করে এবং তারই সহায়তায় মামলার সকল নথিপত্র উদ্ধার করেন প্রভাতী সিমসাং। কোট কাচারিতে প্রভাতী সাংমার নড়েচড়ে ওঠার বিষয়টি টের পেয়ে মো: ফজলুল গং (বর্তমান চেয়ারম্যান) হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে এলাকায়। প্রভাতী সিমসাংকে জমির আশপাশেই ঘেষতে দেন না। কোন ধরণের কাগজপত্র ছাড়া, ভোগদখল নিয়ে জমির ওপর দুতলা বিল্ডিং রাতারাতি তৈরিও করেন। দোকান ভাড়া দিয়ে মালিকানা দাবি করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিকও হয়েছেন।
ভূমির দলিল এবং মামলার নথিপত্র পাওয়ার পর ২০১৯ সালে আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ ও আ.চিক মিছিক সোসাইটির পরামর্শে উক্ত সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে ফজলুল গং এর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেন প্রভাতী সিমসাং, মামলা নং ৯৫ এ। প্রথম মামলা শুনানীর পর ফজলুল গং এলাকায় প্রচার করেন, এ জমির মালিক তিনি এবং সরকারী উচ্চ মহল থেকে তাকে জমিতি ভোগদখলে পূর্ণ অধিকার দিয়েছেন।
প্রভাতী সিমসাং আরও বলেন ফজলুল গং এবং তাঁর সহযোগি দীর্ঘদিন যাবত এলাকার গারোদের ভূমি অবৈধভাবে দখল করে আসছেন। বর্তমান সরকারী দলের ছত্র ছায়ায় এবং এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যাবহার করে নতুন ভুমি দখলের পায়তারা করছেন। আরও তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় কিছু নেত্রীবৃন্দ বিষয়টি জানার পরও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে থানায় অভিযোগ করতে গেলে তাঁর অভিযোগটিও গ্রহণ করেনি।
প্রভাতী সিমসাং বিশ্বনাথ (মৃত দাদুর) এর জীবিত থাকালীন সময় তাঁকে সেবা শুশ্রুষা করেন। মৃত্যুর পরে গারো প্রথানুযায়ী এবং আত্মীয় স্বজনের ইচ্ছায় তাকেই নকনা হিসেবে সহায় সম্পত্তি দেখভালের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়। গারোদের নকনা বা নক্রম প্রথা হলো গারো পুরুষেরা বিয়ের পর তাঁদের স্ত্রীর পরিবারে বা শ্বশুর বাড়িতে থাকে। সমাজ ব্যবস্থার কারণেই গারো পরিবারে নকনা নির্বাচন করতে হয়। সাধারণত ছোট মেয়েকে অথবা একমাত্র মেয়ে হলে তাকেই নকনা হিসাবে মনোনীত করা হয়ে থাকে। আর পরিবারের চ্রা-দেফান্থেদের পরামর্শ ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি কখনও গ্রহণ করা হয় না। এই নকনা এবং নক্রমের দায়িত্ব পরিবারের কর্তৃত্ব করা। তাই, পরিবারের কর্তা কর্তৃ বা মা-বাবার ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য চ্রাগণই এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞে সবসময় এগিয়ে আসেন। নকনার মেয়েটির স্বামীই নক্রম (ঘরের খুঁটি) হিসাবে পরিচিত হন। নক্রম পদটি গারো সমাজে একটি মর্যাদাপূর্ণ পদ; যার বিশেষ সম্মান এবং পরিবার এবং গোষ্ঠীর দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে ছেলেটি শ্বশুরের আপন ভাগ্নে হয়ে থাকলে, সে জামাতাই নক্রম হওয়ার যোগ্য রাখেন বা দাবী করতে পারেন। পরিবারের মেয়ে সকলকে পরিবার থেকে সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার পর এই নকনাই শ্বশুর-শাশুড়ির সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন। ফলে এই নক্রমই শ্বশুরের সকল ধরণের পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন শুরু করেন। শ্বশুর-শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর পিতামাতা বা শশুর-শাশুড়ির আসনটিই নকনা এবং নক্রমের জন্য দেওয়া হয়।
এ মানব বন্ধনের মাধ্যমে আদিবাসীদের জমি হতে ভূমিদস্যুদের দখলমুক্ত করার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এবং প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু সমাধানের জোড় দাবী করেন।