যে খবর সন্ধানে একজন সাংবাদিক জীবন বাজি রেখে খবর যখন মিডিয়াতে তুলে দেয়া হয়; সে খবর কেউবা আয়েশভাবে পঠন করে, অথবা হা হুতাশ করে, কেউবা চক্ষুশূল হয়ে ওঠে; আবার সত্য ঘটনা বিবরণে, প্রকাশে লজ্জায় লজ্জাবতি হয়ে ওঠে। আসলে তার মানে কী দাঁড়ালো?
তার মানে এই দাঁড়ায়, আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি কিন্ত সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা নেই, প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সংবাদ প্রচারের কারনে আপনি খুঁশি, অখুঁশি হতে পারেন। এহেন একটি বিষয় ভাবা দরকার, যে ঘটনাগুলো না বলাতে, কিংবা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয় নি সেগুলো ঘটনার অন্তরালে রয়ে যায়, সামাজিকভাবেও সমস্যা থেকে যায়- পরে যা হয়তো ব্যক্তি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে- তা কী কোনদিন একবারও ভেবেছেন?
সংবাদ মাধ্যম যেমন উন্মুক্ত হওয়া উচিত; তেমনি সাংবাদিক এবং ভিক্টিমকেও রেসপন্সসিভ হতে হবে। সংবাদ মাধ্যমকে মুক্ত গণমাধ্যম তৈরি করতে হবে। মুক্ত মানে এই নয় যে ঘটনা ঘটলো ঐ ঘটনার সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক কিছু জুড়িয়ে দিয়ে নেতিবাচককে ঘটনাকে ইতিবাচক বা ইতিবাচককে ঘটনাকে নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করবেন। সংবাদটি অবশ্যই সত্য ঘটনা এবং পরিবেশনে বস্তনিষ্ঠ, নিখাদ, নিখুঁত হতে হবে। কিন্ত বর্তমানে দেশ ও দেশের বাইরেও গণমাধ্যমের সাথে জড়িতদের অনেকে স্বীকার করছেন, সেলফ সেন্সরশিপ, অর্থাৎ নিজেরাই খবর চেপে যাওয়া বা প্রকাশ না করার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে এটিও যেমন দু :খজনক; তেমনি দু:খজনক ভিক্টিমও স্বপ্রনোদিত হয়ে সত্য খবর প্রকাশে অনিহা, বা রেসপন্সসিভ হতে না পারা।
পৃথিবীর বহু দেশেই এখনো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে সরকারের নানা কালাকানুন, বিধিনিষেধ বা চাপের ইঙ্গিত থাকে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা কেবল সরকার নয়, গণমাধ্যমের মালিক যারা এবং এমন কি ভিক্টিম নিজেরাও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের সম্পাদক এবং সাংবাদিকরা স্বীকার করছেন, গণমাধ্যমে বিগত দশকগুলোতে যে ধরণের পুঁজির লগ্নি হয়েছে, তাতে করে মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে এবং সাংবাদিকতার নয়, মালিকের স্বাধীনতার নিশ্চিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুল ধারার গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থার সংকটের অভিযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে যা সত্যিই দু:খজনক।
কোন ব্যক্তি, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের বা রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কোন সংবাদ প্রকাশক, সাংবাদিকের জন্ম হওয়া উচিত নয়। ফলে সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রয়োজন। তবে স্বাধীনতাকে পূঁজি কোন ব্যবসা নয়। জাতিগত এবং রাষ্ট্রের কল্যাণেই ব্যবহৃত হওয়া উচিত। সংঘটিত ঘটনার সংবাদ, ঘটনাকে চেপে যাওয়া, বা না প্রকাশ করা এটিও অপরাধ। পৃথিবীতে বহু প্রকাশক, সাংবাদিক চায় ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের প্রকৃত ঘটনা বেড়িয়ে আসুক। সত্য ঘটনাকে মিডিয়ায় তুলে ধরা হোক। সত্য প্রকাশে যেমন ভিক্টিম প্রকৃত বিচার, অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে, তেমনি একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিও মানুষ আস্থা কোনদিন হারাবে না।