নিউজ ডেস্ক: দেশের প্রধান কিছু আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির মধ্যে বিদ্যালয়ে নিজ মাতৃভাষার পড়ালেখার পাঠ্য বই প্রণয়ন করে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে পাঠ্য বই তুলে দেওয়া হয়েছে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের হাতে। বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশসংশনীয়। তথাপিও জন মনে প্রশ্ন জাগে, সেসব ভাষার পাঠদানে নিয়োগ হয়েছে কি আদিবাসী শিক্ষক!

গারো আদিবাসী শিশু শিক্ষা বিষয়ক হালনাগাদ করতে আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক কিছু ব্যক্তিসহ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে; এবং তাদের ভাষ্যমতে, পাঁচটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির প্রাথমিক লেখাপড়ার সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা খুব একটা এগোতে পারেনি, ভবিষ্যতে পারবে কিনা বা কোন ভালো উপায় বের করা হবে কিনা তাও জানে না। এ প্রসঙ্গে একজন চাকমা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবং তিনি বলেন, সরকার শুধু চাপে পরে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে; আসলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এক কথায় বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের খুব একটা কাজে আসেনি। এদিকে দুর্গাপুর ভেন্নাকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভাষ্যমতে, সরকারের তরফ থেকে যখন বই উপজেলায় আনা হয় তখন স্কুল প্রধানদের ডেস্কে নিয়ে বই বুঝিয়ে দেন, তারপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক না থাকায় স্কুলের লাইব্রেরীতে বইগুলো অনেকদিন অবহেলায় পরে ছিল। বইগুলো স্কুল পর্যন্ত আসে; কিন্ত গারো ছাত্রছাত্রীদের কাজে আসেনি! গত বছর স্কুলের লাইব্রেরি পরিষ্কারের সময় বইগুলো ফেলে দেওয়া হচ্ছিল ঐ সময় নিজ সংগ্রহশালায় সংরক্ষণের জন্য দুয়েকটি কপি তুলে রেখে দিই। হালুয়াঘাটে চরবাঙ্গালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, তাদের স্কুলে গারো ভাষার বইগুলো মাঝে মধ্যে পড়ানো হয়। এছাড়াও মিশনারী দ্বারা পরিচালিত কিছু ক্যাথলিক স্কুলগুলোতে গারো ভাষায় পড়ানো হচ্ছে হয় বলে জানা যায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, স্কুলে পাঠ্য পুস্তক থাকলেও অধিকাংশ স্কুল পাঠ্য বইয়ের শিক্ষক নেই বলে সেসব স্কুলগুলোতে নিয়মিত পড়ানো হয় না।

মূলত আদিবাসীদের দাবী, শিশুরা বাসায় যে ভাষায় কথা বলছে, স্কুলে সে ভাষায় লেখাপড়া করছে না। বাংলা বুঝতে না পারার কারণে শিশুমনে পাঠ্যবই কোনো দাগ কাটছে না, স্কুলের পাঠ গ্রহণ করাও তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে অন্তত প্রাথমিক শিক্ষায় আদিবাসী শিশুর মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের দাবি দীর্ঘদিনের। আদিবাসী শিশুরা যাতে, নিজ মাতৃভাষায় বর্ণ পরিচয়, ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট-খাট অংক, নিজ জাতির ও বাংলাদেশের ইতিহাস শিক্ষার পাশাপাশি যেন আদিবাসী শিশু বাংলাতেও অন্যান্য পাঠগ্রহণ করতে পারে।

ফলে বাংলাদেশে সরকার ২০১০ সালে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে, সেখানে এ দেশের আদিবাসী তথা সরকারি ভাষায় আদিবাসী শিশুরা নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের শুরুতেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয় প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে আদিবাসীদের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির। এ বিষয়ে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে গঠিত হয় একটি জাতীয় কমিটি।

এ অবস্থায় প্রধান কয়েকটি আদিবাসী জনগোষ্ঠির ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায়, তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠদানের উদ্যোগ নেয় সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই কমিটির সুপারিশে প্রাথমিকভাবে ছয়টি প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠি (চাকমা, মারমা,ককবোরক, মান্দি, সাঁওতালি ও সাদর) ভাষায় পাঠ্যপুস্তক তৈরি করে। আদিবাসী জনগোষ্ঠির ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায়, তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠদানের উদ্যোগ নেয় সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে মাঠ পর্যায়ে স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বও তাদের হাতেই বর্তায়। ফলশ্রুতিতে গারো আদিবাসী শিশুদের নিজ ভাষায় শিক্ষানীতির যে বেহাল অবস্থা; এ থেকে অন্যান্য আদিবাসী শিশুদের অবস্থাও সহজেই অনুমেয়। অর্থাৎ মাতৃভাষার পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শিশুরা সুফল পাচ্ছে না এবং শিশু পাঠ্য বইয়ে ভুল বানান চোখে পড়ার মতোন বিষয় বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

সারা বিশ্বে অস্তিত্ব সংকটে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠি। ফলে ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষায় ২০১৯ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের নিদের্শনা কিছু দেশ অনুসরণ করছে; তবে কথা থেকে যায়- আদিবাসী শিশুদের জন্য পাঠ্য বই আছে; কিন্ত বই পড়ানোর কারিগর যদি না থাকে তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াতে পারে একবার ভাবুনতো!