এ সময়ের অন্যতম পেসিভ ইনকাম সোর্স হলো গুগল এ্যাডসেন্স। ব্লগিং, ইউটিউবিং করে অর্থোপার্জন করা যায় কথাগুলো শুনে অনেকের কাছে হাস্যকর; বিষয়টি অবাস্তব, অবহেলার মনে হতে পারে এখনও। কিন্ত সেই হাস্যকর ব্লগার, ইউটিবার যদি ব্লগিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে, আপনার চোখের সামনে গাড়ী-বাড়ি, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে তখন নিশ্চিয়ই আরও অবিশ্বাস্য লাগবে, তাই না! না এমন দ্বিধা দ্বন্দের সুযোগ নেই। আত্ম বিশ্বাস রাখুন ইউটিউব, ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ে অর্থ উপার্জনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম নির্দ্বিধায় বলা যায়। যথাযথভাবে ওয়েভ সাইট বা ব্লগ তৈরি করে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে, তথ্য নির্ভর এবং অনুসন্ধানীমূলক কনটেন্ট লিখে আপনি যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তেমনই সেখান থেকে অর্থ আয়ও করতে পারেন।

গুগল এ্যাডসেন্স বিষয় সম্পর্কে আরও খানিকটা ধারণা নেয়া যেতে পারে, আসলে গুগল এ্যাডসেন্স কী! গুগল এ্যাডসেন্স গুগল দ্বারা পরিচালিত একটি প্রোগ্রাম, যার মাধ্যমে গুগল নেটওয়ার্কের সামগ্রীর পেজে, ওয়েবসাইট প্রকাশকরা পাঠ্য, চিত্র, ভিডিও বা ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া বিজ্ঞাপনগুলি সাইটের সামগ্রীতে দর্শকদের জন্য লক্ষ্যযুক্তভাবে কাজ করে। এই বিজ্ঞাপনগুলি গুগল দ্বারা পরিচালিত, বাছাই করা এবং রক্ষণা-বেক্ষণ করা হয়। মূলত এর যাত্রা শুরু হয় ১৮ জুন, ২০০৩ সালে।

সত্যিই বলতে কী ২০১৯ সালের পর থেকে ব্লগারদের গুগল এ্যাডসেন্স পার্টনারশীপ অনুমোদন পাওয়া, একাউন্ট টিকিয়ে রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনুমোদন পেলেও গুগল নীতি অনুসরণ করতে না পারার দরুন নীতিভঙ্গের কারণ দর্শীয়ে আপনার এ্যাডসেন্স একাউন্ট বাতিল হতে পারে। একবার একাউন্ট ব্যান্ড হলে ফিরে পাবার সুযোগ একেবারে-ই কম। বিষয়টি অনেকটা বলতে পারেন অত্যন্ত সেনসিটিভ প্লাটফর্ম। সেনসিটিভ হলেও, প্লাটফর্মটি আপনাকে কাজ করার যোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করে; এবং অর্গানিক ভিসিটরস  বা ভিউয়ারকে বেশি উৎসাহিত করে।

বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় ব্লগারদের লেখনী দেখে তাদের আমরা ব্লগার বলে জানি। সাধারণত তাদেরকেই ব্লগার বলে থাকি। অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয় ব্লগ লিখে, নিয়মিত পোস্ট করে মনিটাইজেশানের মাধ্যমে অর্থ উপর্জনের পাশাপাশি খ্যাতি অর্জন করেছেন আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন। যদি তাই হয়, আপনার যদি লেখনীর অভ্যাস থেকে থাকে সেই মেধা মননকে কাজে লাগিয়ে গুগল মনিটাইজেশানের মাধ্যমে চেলেঞ্জটি আপনিও নিতে পারেন! এই জনপ্রিয় নির্মাণ শিল্পে আপনি পিছিয়ে পড়বে কেন?

এহেন আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, গুগল এ্যাডসেন্স সেরা প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি। এখন অবধি এ্যাডসেন্স অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি সহজ যদি আপনি তাদের দেয়া নীতি অনুসরণ করে ওয়েভ পেজ, বা ব্লগ পেজ তৈরি করতে পারেন। তৈরি করার পর একটি নতুন এ্যাডসেন্স একাউন্ট তৈরি করে মনিটাইজেশানের জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনার একাউন্টটি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর যদি এ্যাডসেন্স টিম আপনার আবেদন গ্রহণ করে তাহলে আপনি আপনার সাইটে বিজ্ঞাপনগুলি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থোপার্জন শুরু করতে পারেন।

এ্যাডসেন্স একাউন্ট অনুমোদনের প্রক্রিয়া বিষয়ক এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটি আপডেট করছি, যা নতুন ব্লগারদের কাজে দিতে পারে। ২০২১ সালে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদনের পদ্ধতি পরিবর্তন এনেছে এবং নতুন প্রকাশকদের পক্ষে যা এটি সহজ করে তুলেছে। আপনার সাইট বা ব্লগ পেজে নতুন একাউন্ট অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি ফলো করে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন পেতে পারেন দ্রুত এবং সহজে, যেমন-

১। হাই কোয়ালিটি এবং ইউনিক কনটেন্ট হতে হবে

২। মিনিমাম ১৫ অথবা ২০টি, ৬০০ শব্দের কনটেন্ট; তবে এর অধিক শব্দ হলে ভালো

৩। পেজে কন্টাক্ট, প্রাইভেসি পলিসি এবং ‍এবাউট পেজ থাকা বাঞ্চনীয়

৪। কোন কনটেন্টে ‍সেক্সসোয়াল, শ্যোকিং, জনস্বাস্থ্যে ক্ষতির, রাষ্ট্রবিরোধী ইত্যাদি হতে পারবে না

৫। পোস্টের সকল ছবি ইউনিক এবং কপিরাইট ফ্রি হতে হবে

৬। গুগল পার্টনারশীপে আগে আপনার একাউন্ট বেন্ড হতে পারবে না

৭। আপনার ওয়েভ পেজ ক্লিয়ার নাভিগেশান থাকতে হবে

৮। ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস ২৪ ঘন্টা ভালো সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে

৯। আপনার বয়স ১৮ হতে হবে ( আবেদন করার সময় আপনার বয়স ১৮ র নীচে হলে আপনার পিতা মাতা বা যেকোন রিলাইবেল প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে সংযুক্ত করা যাবে)

১০। এ্যাডসেন্স আবেদনের পূর্বে অন্যকোন কোম্পানির এ্যাডস পেজে শো করা যাবে না।

আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি পর্যালোচনা করতে ৪৮ ঘন্টা এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। আপনার আবেদন অনুমোদিত হয়ে গেলে এটি আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন শুরু করবে এবং তখন থেকে আপনি অর্থোপার্জন শুরু করবেন।

নীচে অ্যাডসেন্স অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি কী এবং এটি কীভাবে পরিচালিত হয়-

ক) এ্যাডসেন্স ডটকম এ গিয়ে একটি এ্যাডসেন্স একাউন্টের জন্য নিবন্ধন করুন। আপনার নাম, ঠিকানা এবং ওয়েবসাইট URL সম্পর্কে সমস্ত সঠিকভাবে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

খ) এরপর এ্যাডসেন্স একাউন্টে লগইন করে এ্যাডসেন্স কোড তৈরি করুন। এইচটিএমএল (html) কোডগুলি আপনার ব্লগের হেডার অথবা সাইডবারে/উইজেটে পেস্ট করে সেভ করতে হবে (প্রয়োজনে ওয়েভ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন)।।

গ) চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞাপনগুলি ফাঁকা হিসাবে দেখানো হবে। অনুমোদনের জন্য এটি দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে। সে পর্যন্ত আপনি বিজ্ঞাপন কোডগুলি সরাবেন না।

ঘ) চূড়ান্ত এ্যাডসেন্স অনুমোদনের পরে, আপনি একটি নিশ্চিতকরণ ইমেল পাবেন।

ঙ) আপনার এ্যাডসেন্স উপার্জন ১০ ডলারে পৌঁছে গেলে এ্যাডসেন্স আপনাকে আপনার ঠিকানায় একটি পিন মেল বা পিন কোড পার্সেল পাঠাবে।

চ) আপনার এ্যাডসেন্স একাউন্টে লগইন করে আপনার প্রাপ্ত পিনটি কোডটি সঠিকভাবে তা প্রবেশ করতে হবে (প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন)।

ছ) আপনার একাউন্টে মিনিমাম ১০০ ডলার হলে গেলে গুগল আপনাকে আবার একটি মেইল পাঠাবে আপনার উপার্জীত অর্থ কীভাবে তুলবেন। সে অর্থ পেতে হলে আপনাকে এ্যাডসেন্স অর্থ প্রদানের জন্য সরাসরি ব্যাংক স্থানান্তর করতে প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে (প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন)।

গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন পেতে হলে আপনি কোন ডোমেইন এন্ড হোস্টিং ক্রয় করে; অথবা ফ্রিতে জুতসই থিম এবং প্লাগিইন ব্যবহার, সঠিকভাবে কাস্টমাইজ করে আপনার সাইট বা ব্লগ পেজ তৈরি করতে পারেন। আপনি যদি সঠিক এবং তাদের দেয়া নীতিনুসারে সবকিছু করেন তাহলে এরপর নিশ্চিত থাকুন যে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন আপনি পেয়ে গেছেন।

লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স

ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী।