করোনায় অথনৈতিক দূরাবস্থার প্রভাব দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। গারো নারী উদ্যোক্তা মিসেস নীভা রুগা চাঁপা কন্ঠে বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতির উপরই পার্লার ব্যবসার অস্তিত্ব টিকে থাকা, না থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে। করোনার দোলাচলে বিশ্ববাসীর একই প্রশ্ন, করোনা মোকাবেলা করতে পারলেও বৈশ্বিক আর্থিক মোকাবেলা করতে পারবে কি! বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে; সেখানে ক্ষুদ্র কিংবা মাঝারী উদ্যোক্তরা করোনায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কি?
নিউজ ডেস্ক: করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বের জন জীবন এবং ব্যবসা বাণিজ্যকে তালমাতাল করে দিয়েছে। বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশও করোনা ভাইরাস প্রভাবমুক্ত নয়, বরং দিনকে দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত, মৃতের সংখ্যা। ফলে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষসহ বিউটি পার্লার উদ্যোক্তা ও বিউটিশিয়ানদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দীর্ঘদিন সরকারী সাধারণ ছুটি ও লক ডাউন থাকায় মারাত্মক অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে এই পেশায় জড়িত সকল মানুষ। স্বাস্থ্যঝুকি থাকায় বেশিরভাগ বিউটিশিয়ান শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিলেও অর্থনৈতিক দৈন্যতা তাদের পিছু ছাড়েনি। এমতাবস্থায় বিউটিশিয়ানরা দিনমজুরের কাজ করতেও দ্বিধা করছেন না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ। সাধারণ ছুটি বাতিল এবং লক ডাউন খুলে দেয়ার পর অন্য সব সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সচল হলেও বিউটি পার্লারগুলো চালু করা এখনো সম্ভব হয়ে উঠছে না। এবং এর স্বাস্থ্যগত যৌক্তিক কারণ হলো, সেবাগ্রহণকারীদের সংস্পর্শে গিয়ে বিউটিশিয়ানদের কাজ করতে হয়, ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
আ.বিমা টাইমসকে টেলিফোনে বিউটি শিল্পী এবং গারো তরুণ উদ্যোক্তা নীভা রুগা জানান, প্রায় বিশ বছরের অভিজ্ঞা নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারী বিউটি শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করি। আমাদের সেবাদানকারী বিউটি পার্লারের নাম ‘চেরী বিউটি পার্লার’। প্রতিষ্ঠানে বিউটিশিয়ানদের সংখ্যা মোট পাঁচজন। মাসিক বেতন ভাতা পেশাদারনুযায়ী একজন সাঁজ শিল্পীর সর্বোচ্চ বেতন ত্রিশ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। পার্লার ডেকোরেশান করতেই বড় অংকের টাকা ব্যয় করেছি বিশ লক্ষাধিক টাকা। পার্লার উদ্বোধনের পর ভালো লোকেশানে থাকার ফলে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিল পার্লারটি। বিশ্বে চলমান করোনা ভাইরাসের থাবায় সব তছনছ হতে বসেছে। গত তিন মাস ধরে পার্লারটি বন্ধ রয়েছে। চাহিদা থাকলেও স্বাস্থ্যঝুকি থাকার ফলে বিউটিশিয়ানদের অনির্দিষ্ট কালের জন্য গ্রামের বাড়ীতে পাঠিয়েছি। দোকানের নিরাপত্তার দরুন আমি এখনো কর্মস্থলে অবস্থান করছি। কাজকর্ম নেই তবুও দোকান ভারা প্রতিমাসে আটাশ হাজার টাকা এবং বাসা ভাড়া আলাদাভাবে মাস শেষে টাকা গুনে দিতে হচ্ছে। এ মতাবস্থায় বড় রকমের লোকসানে পড়ে গেছি। এমন নাজুক অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠবে।
তিনি আরও জানান, সারাদেশে ব্যক্তি উদ্যোগে গারোদের পার্লার ব্যবসা অহরহ গড়ে উঠেছে। শুধু বিভাগীয় ও জেলা শহর নয়, উপজেলা পর্যায়েও পার্লার ব্যবসা বেশ চোখে পড়ার মতোন। পার্লারগুলোতে কাজ করেন শত শত গারো বিউটিশিয়ান। এদের মধ্যে অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবার থেকে আসা। এই সেক্টরে কাজ করে অনেক অসহায় মেয়ে স্বাবলম্বী হতে শুরু করছিলেন। তাদের মাসিক আয় দিয়েই চলতো গ্রামের অনেক দরিদ্র পরিবার। করোনার ফলে পার্লার মালিকদের অবস্থাও আজ শোচনীয়। স্বল্প মূলধনে গড়ে উঠা পার্লারের সংখ্যাই বেশি এবং আর্থিক ঝুঁকিতেও রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতে পার্লারের মালিক ও বিউটিশিয়ান উভয়ই বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের জীবন জীবিকা আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে। এভাবে চলতে থাকলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে অসংখ্য বিউটি পার্লার। আর স্থায়ীভাবে বেকার হয়ে যাবে বিপুল সংখ্যক বিউটিশিয়ান, যাদের আয়ে চলতো অনেক দরিদ্র পরিবার।
বেসরকারী হিসেবানুযায়ী দেশের বিভিন্ন জায়গার গারো উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিচালিত পার্লার সংখ্যা (অনুমানিক) যথা, চট্রগ্রামে পনেরোটি, ঢাকায় অন্তত পঁয়ত্রিশটির বেশি, সিলেটে পনেরোটি, এছাড়াও টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং অন্যান্য জেলা উপজেলা শহরেরও প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে যা সহজেই অনুমেয়।
প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে নিজ নিজ ব্যবসাতে বাড়তি আয়ের আয়োজন করে থাকে; পহেলা বৈশাখ, রোজার ঈদ পর্যন্ত। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পার্লারের পাশাপাশি বুটিক, জুয়েলারী সামগ্রী দিয়ে সাজাতে প্রস্তুত ছিলাম এবারও।
নীভা রুগা আরও জানান, পার্লারের ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা মূলক কাজেও যুক্ত ছিলেন, যেমন-
ক. পথ শিশুদের নিয়ে বছরে একদিন কর্মশালা আয়োজন এবং ফ্রী-তে সেবাদান করা।
খ. নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নারী দিবস উপলক্ষ্যে নারীদের জন্য একদিন ফ্রি সার্ভিস এবং প্রচারমূলক কাজ করা।
গ. বিভিন্ন নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ এবং প্রচারের ব্যবস্থা করা।
ঘ. চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশে পেশাজীবি বিষয়ক ডেক্স এর বোর্ড সদস্য হিসেবে কাজ ।
এই সেক্টরের অথনৈতিক দূরাবস্থার প্রভাব দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। গারো নারী উদ্যোক্তা মিসেস নীভা রুগা চাঁপা কন্ঠে বলেন, দেশের করোনা পরিস্থিতির উপরই পার্লার ব্যবসার অস্তিত্ব টিকে থাকা, না থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে বলে জানান।
করোনার দোলাচলে বিশ্ববাসীর একই প্রশ্ন, করোনা মোকাবেলা করতে পারলেও বৈশ্বিক আর্থিক মোকাবেলা করতে পারবে কি! বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে; সেখানে ক্ষুদ্র কিংবা মাঝারী উদ্যোক্তরা করোনায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কি?