আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: সীমান্ত বরাবর গারো পাহাড়ের পাদদেশ। কাঁচা পাকা মিলেমিশে বিস্তীর্ণ রাস্তা। রাস্তার দুধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় সারি। খেটে খাওয়া মানুষের নিত্যদিনের প্রাণপণ জীবন সংগ্রাম। আবার সন্ধ্যা নামলেই বন্য হাতির আতঙ্ক। বলছিলাম ছোট গজনী নামক একটি গারো অধ্যুষিত গ্রামের কথা। শেরপুর জেলা থেকে কিলো বিশেক দূরে ঝিনাইগাতি থানার ছোট্ট একটি গারো গ্রাম। সহজ সরল জীবন যাপন, প্রাত্যহিক জীবনের বয়ে চলা সময় এখানেও আরো দশটা গারো গ্রামের মতোই। সেখানে এখনো বেঁচে আছেন কিছু সৃষ্টিশীল মানুষ। গারোদের হারিয়ে যাওয়া কিছু সম্পদ নিজের ভেতর পুষে যত্ন করে আগলে রেখেছেন তারা। সম্প্রতি গারোহাব মিডিয়া পরিবার গারোদের লোকগান ‘সেরেজিং’ নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করেছে এই গ্রাম এবং গ্রামের কিছু গুণী মানুষদের নিয়ে। যা শীঘ্রই দেখা যাবে গারোহাব ছোট পর্দা ইউটিউব চ্যানেলে।
সেরেজিং দলনেতা এবং তার গানের দল
সেরেজিং (Serajing) মূলত একটি গল্প কথা। সেরেজিং নামক একজন মেয়ের জীবন কাহিনীকে বিভিন্ন সুরের আলোকে সংগীতের সুরে ফুটিয়ে তোলা হয় এই লোকগানে। পিতামাতাহারা সেরেজিং, তার বোন সেরেনি ও সেরেজিং এর প্রেমিক ওয়ালজানের জীবন কাহিনীতে ফুটে ওঠে এই গারোদের প্রাচীন এ লোকগান। অনেক পুরনো গারো সংস্কৃতির একটি মূল্যবান সম্পদ এই সেরেজিং। গল্পানুসারে সেরেজিং, সেরেনি, ওয়ালজান ও আরও কিছু চরিত্রে পালা গানের মতোন গান গেয়ে গেয়ে গল্প বলার এই রীতি ছিল। এক সময় গারোদের কাছে এটি বহুল সমাদৃত লোকগীতি হিসেবে সুপরিচিত। এই প্রাচীন গারো সংস্কৃতির শেকড় খোঁজতে গিয়েই গারোহাব পরিবারে সৃষ্টি সেরেজিং। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা, ও তথ্যের ছোট ছোট ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। তথাপিও সীমাবদ্ধতাকে আমলে নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তকে ঢেলে সাজিয়ে এবং মুল গল্পের আদলে ফুটিয়ে তোলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা হয়েছে। গারোহাব মিডিয়া পরিবার বিশ্বাস করে এই ছোট ছোট প্রয়াস দর্শকদের এবং শিল্পমনাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে।
বলতে গেলে, সেখানকার মানুষের জীবনের গল্প আর সেরেজিং এর কলতান মিলিয়ে একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে এবারের এই তথ্যচিত্রে। ডকুমেন্টারি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন একনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি ও গীতিকার ফ্রান্স প্রবাসী লুই সাংমা। সহ -পরিচালনা, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা করেছেন বাপন নেংমিঞ্জা। মূলত এই ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরা হয়েছে গারোদের বর্তমান প্রাত্যহিক জীবনে পুরনো সংস্কৃতির প্রভাব, হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং ফিরে পাবার অভিপ্রায়।
তথ্যচিত্র চিত্রায়ন করা হয়েছে ছোট গজনী গ্রামে। গ্রামীণ জীবন, গ্রামীণ জীবনাচরণ ইত্যাদির নিখুঁত চিত্র ফুটিয়ে তোলার প্রয়াসে ছোট্ট এই উদ্যোগ হয়তোবা যথেষ্ট নয়। তবে দর্শক শ্রোতাদের ফিডব্যাক, মন্তব্য গারোহাবের আগামী দিনের কাজকে আরও সমৃদ্ধ, শাণিত করবে বলে বিশ্বাস করে গারোহাব মিডিয়া পরিবার।
এই শর্ট ভিডিও চিত্রটি পর্দা উঠছে কাল শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ ঘটিকায়, এবং তথ্য চিত্রটি দেখতে পাবেন গারো ইউটিউব চ্যানেলে (GaroHub)। নতুন এই ভিডিওচিত্র দেখতে সবার জন্য আমন্ত্রণ থাকলো।