বিশ্বব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশ ও জাতি ভীত সন্ত্রস্ত অথচ থেমে নেই মধুপুর গড়াঞ্চলে অমানবিক মহাকীর্তি! যুগের পর যুগ বনায়ন ও বন রক্ষার নামে মধুপুর গড়াঞ্চলে কিসের ভেলকিবাজি, এসব কিসের সার্কাস চলছে? সাম্প্রতিক মধুপুরে এমন ঘটনায় তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে সোস্যাল মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। প্রসঙ্গত ভিন দেশী রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে দেশ কুড়িয়েছে অনন্য মর্যাদা। বিশ্বের বুকে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। আহ্ তখন প্রশান্তিময় বুকে হাত রেখে বাহবা দিতে-ই হয়। কেউ দেখুক আর না দেখুক জোরসে হাততালি দিতে হয় বৈকি! আসলে আপনার যা প্রাপ্য, প্রকৃত অর্জনটুকু না দেখে, না বুঝে হাততালি দেয়া একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কোন নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?

আর বড় ভূমিকা আর পেছন ইতিহাসে যাবো না- দু:খবোধ হয় এবং সীমাহীন দু:খগুলো গেঁথে, জড় করে প্রশ্ন জাগে- আমরা মনবতা দেখাবো ভালো কথা! যে রোহিঙ্গাদের জন্ম পরিচয় কিছুই জানি না, নাম সর্বস্ব রোহিঙ্গাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করেছি। লাল সবুজের বুকে নির্ভিগ্নে আমরা সন্তানের মতোন ঠাঁই দিয়েছি। নাগরিকত্ব দিচ্ছি। জামাই আদর করছি। এমন পরিচয়হীন রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের মাটিতে বসতে না বসতেই বনের রাজা সিংহের মতোন হুঙ্কার, গর্জন দিতে শুরু করেছে। দেশটিতে অপর্কম, অরাজগতা সৃষ্টি করে চলেছে। সেখানে আমাদের কারোর সুদৃষ্টি নেই। চোখ থাকতেও যেন সবাই আমরা জম্মান্ধ। চোখে কিছু দেখি না।

অথচ খোদ আমাদের দেশেরই সন্তান, যাঁদের জন্ম পরিচয় অনেক উঁচু মানের, জাতিগত ঐতিহ্য শত শত বছরের, সেই গারো জাতিগোষ্ঠি, তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠিকে নির্দয়ভাবে, বেআইনীভাবে দেশ থেকে মধ্যযুগিয় কায়দায় তাঁদের ইতিহাস মুছে ফেলার নীল ষড়যন্ত্র করছে। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে আদিবাসী উচ্ছেদের তুলকালাম কান্ড চালাচ্ছেন। নামমাত্র প্রকল্পের নামে আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের ভোগস্বত্ত জমি কেড়ে নিচ্ছে দেশের বন বিভাগ। নিজ দেশের আদিবাসী সন্তানদের এমন শোষণ বঞ্চনায় ফেলে এ আবার কেমন তোমার দিল দরিয়া? নিজ দেশের গর্বিত সন্তানের প্রতি আপনার এ কেমন বিমাতাসূলভ আচরণ! ১৪ সেপ্টেম্বর পেগামারি গ্রামের বাসন্তী রেমা ও গেটিস যেত্রা পরিবারের ৪০ শতক জমির পাঁচ শতাধিক শবরি কলাগাছ কেটে ফেলে বন বিভাগ এ কোন মহাকীর্তির আলামত! দুর্বল জাতিসত্ত্বার ওপর এ কেমন তোমার মহাবীরত্ব !

আপনি প্রকৃতিক বান্ধব এবং বন সহিষ্ণু চারা না লাগিয়ে, সরকারী কোষাগার থেকে হিউজ অর্থ অপচয় করে মধুপুর গারোদের আবাদী কলাবাগান, নানান ফসল কেটে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে সেখানে বিদেশী ক্ষতিকর আগ্রাসী একাশিয়া চারা লাগাবেন। সেখানে কাজুবাদামের চাষ করবেন। প্রাকৃতিক শালবন উপড়ে ফেলে রাবার বাগান করবেন। গারো গ্রাম উচ্ছেদ করে বিমান ফাইয়ারিং রেঞ্জ তৈরি করবেন। কংক্রিতের দেয়াল তুলে ইকোপার্ক গড়বেন। সেখানে আরও কত বাহারী প্রকল্প গড়বেন শুনি!

বারংবার দুর্বলের ওপর সবলের এমন নির্দয় বাহাদুরি, বীরত্ব দেখিয়ে চলেছে টাঙ্গাইল বন বিভাগ। দিনকে দিন বন রক্ষার নামে রাষ্ট্র ও কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। স্থানীয়ভাবে আদিবাসী-বাঙালি দ্বন্দ্ব-সংঘাত উস্কে দেয়ার মূল হোতা, নাটের গুরু। আদিবাসীদের মিথ্যা বন মামলা থেকে শুরু করে ভুমি জবর দখল, খুনখারাবি, ভূমি উদ্ধারের নামে আদিবাসী উচ্ছেদ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট কোনোকিছুই আর বাদ রাখেনি বন বিভাগ।

এই নির্দয়, অমানবিক এবং ভক্ষক বন বিভাগকে দেখভালের কেউ নেই কি! মহা প্রকল্পের নামে বন বিভাগ সরকারী কোষাগার থেকে অর্থ খসাচ্ছে, ধ্বংস করছে প্রাকৃতিক আদিম শালবন এবং ভঙ্গুর করছে আদিবাসীদের চলমান অর্থনীতি, এর গণ দায়ভার কার ওপর বর্তায়?

এহেন বিবেকমান সকল মানুষ এবং গণপ্রজান্ত্র বাংলাদেশর সরকার কাছে বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করছি, টাঙ্গাইল বন বিভাগের এমন সব অপরিণামদর্শী আচরণ দেশকে এবং দেশর ভাবমূর্তিকে কোথায় নিয়ে যাছে? দেশে আদিবাসী এবং অ-আদিবাসীরে উস্কানিতে ‘অস্থিতিশীল’ পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? এমন বেপরোয়া, অদক্ষ বন বিভাগ আদিবাসীদের জাতিগত ঐতিহ্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র রক্ষায় কিইবা ভূমিকা রাখে?

আমাদের বেমালুম ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মান্দি, কোচ, বর্মণ আরো অনেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠি। এখনো সময় আছে, বনের আদিবাসীকে বাঁচান এবং তবেই মধুপুর গড়ের পরিবেশ রক্ষা পাবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু সুরক্ষায় আদিবাসী ও গ্রামীণ সমাজের অবদান অনস্বীকার্য। ভিন্ন দেশী শরণার্থী রোহিঙ্গা নয়, আগে আদিবাসীদের ভূমি  সমস্যা সমাধান করুন।

লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স

ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী ।