আজকাল ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কেদিনসহ বিভিন্ন সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে যেসব লিখা লিখি বা প্রতিনিয়ত অন্যের পোস্ট করা লেখা দেখি তা মূলত আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির জন্য। কেউ একটা লাইক দিলো কিনা, কেউ একটা স্ট্যাটাস শেয়ার করলো কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়েই আমরা সন্তুষ্ট থাকি, এবং এতেই আমরা আত্মতৃপ্তি লাভ করি। এখানে আসলে, এই তথ্য প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে একটি ব্লগিং ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব এবং ব্লগিং এর মাধ্যমে স্বাধীনভাবে অর্থোপার্জন এর প্রচেষ্টা না করে; অধিকাংশ নেট ব্যবহারকারী বিভিন্ন বিনোদনমূলক বা নিজের মনোরজ্ঞনের নিমিত্তে ব্যবহার করে থাকি। ব্লগিং ছাড়াও আরও বিভিন্ন উপায়ে অন লাইন থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়া যায় সেদিকে অনেকেরই খেয়াল নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক, সে বিষয় সম্যক জ্ঞান থাকাও জরুরি সেটাও আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিত।

সহজে এবং খুব সাদামাঠা বললে একজন ব্লগার বলতে, যিনি একটি ব্লগে নিয়মিত এবং বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করেন। এবং হ্যাঁ তাকেই আমরা ব্লগার বলতে পারি, ব্লগার হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। ব্লগার বা ব্লগিং শব্দটি ইদানিং ইন্টারনেটের বহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয় একটি শব্দ এতে কোন সন্দেহ নেই, প্রগতিশীলদের দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেট এর বিশাল তথ্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে এই ব্লগারদের কল্যাণেই বললে একেবারেই অত্যুক্তি হবে না, হবে কি!

ব্লগারের শাব্দিক অর্থ যদি আরেকটু খোলাসা করে বলি, একজন ব্লগার মুলত প্রতিনিয়ত জ্ঞান চর্চায় নিজেকে জড়িয়ে আবদ্ধ করে ফেলেন। ফলে তার লব্ধ জ্ঞানকে শাণিত লেখনির মাধ্যমে তার পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করে করেন। অর্থাৎ একজন পেশাদার ব্লগার অজানা কিছুকে জানার মাধ্যমে, তথ্যকে আরও সুশৃঙ্খলভাবে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে থাকেন। অন্যদিকে পাঠকসহ সাধারণ মানুষের প্রয়োজন, সমস্যা প্রভৃতি মেটানো, নিজেকে আরও উন্নত করা, নিজের জ্ঞান ভাণ্ডারকে সবসময় সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি নিজের লেখাকে আরও সুন্দর ও যৌক্তিক উপস্থাপন তথা একটি অনলাইন প্রিন্ট মিডিয়া ম্যানেজ করাসহ এ জাতীয় সকল এবং যাবতীয় কাজ একজন পেশাদার ব্লগার করে থাকেন।

যদি তাই করেন তাহলে একজন প্রকৃত ব্লগার একাধারে, একজন লেখক, ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন অথবা নিজে ওয়েভ ডেভলপার; অথবা দুটো বিষয় তার নখ দর্পণে; এছাড়াও  ব্লগ মার্কেটিং এবং প্রোমোশন করে থাকেন, নিজের ব্লগের এর মাধ্যমে একটি নিজের একটি আয়ের মাধ্যম তৈরি করে স্বাধীন পেশা নির্বাহ করে থাকেন, উপার্জন করতে স্বক্ষম একজন পেশাদার ব্লগার।

এ সময়ের ব্লগারদের উপরোল্লেখিত সংজ্ঞায় ফেললেও কম বলা হবে। বরং আমার মতে তাদের বলা উচিত, তথ্য প্রযুক্তির খুঁটিনাটি বিষয় বিশদ জ্ঞান (ওয়েভ ডিজাইন, কোডিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ওয়েভ সুরক্ষাসহ রক্ষণাবেক্ষণ) এবং ব্যবহারের মাধ্যমে ইমার্কেটিং, প্রমোশনসহ নিজে আত্মনির্ভশীল এবং স্বাধীনভাবে অর্থ উপার্জন করতে স্বক্ষম। যদিও আমরা যারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখি, টুইটারে টুইট করি কিংবা গুগোল প্লাসে যেসব লিখা লিখি সবই ব্লগিং এর আওতাভুক্ত হলেও তাদেরকে ব্লগার বলতে আমি রাজি নই; প্রকৃত সজ্ঞায় পড়ে না।

যদি ব্লগিংকে প্রফেশন বা পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে একটা ব্লগ অথবা ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা বিষয়টি সামনে চলে আসে। পাশাপাশি আপনার ব্র্যান্ড এর নিজস্ব নেম এন্ড ফেম চাইবেন, লেখার প্রচুর রিডার চাইবেন, নয় কি? যদি তাই হয় তাহলে সবকিছু আপনি উপস্থাপন করবেন যথাসম্ভব সুন্দর, সাবলীল, নানন্দিক উপায়ে এবং নিয়ম মেনে আপনি নিয়মিত লিখে যাবেন। সর্বোপরি, আপনি প্রফেশনাল ব্লগিং এর কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার আকাঙ্খানুযায়ী আপনি আপনার ব্লগিং থেকে একটি আয়ের মাধ্যম বের করে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন, এবং এ যুগের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা সম্ভব, পেশাদার ব্লগারদের জন্য এ বিষয়টি আরও উজ্জ্বল সম্ভাবমায়ী হয়ে উঠছে দিনকে দিন।

পেশাদার ব্লগার হতে হলে আপনার করনীয় বিষয়

১) আপনার শ্রোতাদের কাছ থেকে ধারণা নিন। আপনার সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিযুক্ত ব্যক্তিদের থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রশ্নের উত্তর দেয় এমন ব্লগ পোস্টগুলি তৈরি করুন।

২) আপনার শ্রোতাদের চাওয়াগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন।

৩) প্রথমেই নিজের সম্পর্কে লিখুন।

৪) প্রাপ্ত ইমেল এ্যাড্রেসগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন।

৫) আপনার বিদ্যমান পাঠকদের ভালোবাসুন।

৬) কল টু অ্যাকশন তৈরি করে নিজেকে ফোকাস করুন।

৭) আপনার লব্দ জ্ঞানকে আরো বিকশিত করুন।

৮) আপনার পরিবেশিত তথ্যগুলো নির্ভযোগ্য করে তোলুন।

১০) প্লান মাফিক কাজ করুন এবং সে কাজে সময় দিন।

১১) আপনার পরিবেশিত তথ্যগুলো সংক্ষিপ্ত এবং পঠনযোগ্য করে লিখুন।

১২) নিজ কাজের প্রতি আত্ম বিশ্বাসী হয়ে উঠুন

একজন পেশাদার ব্লগার হবেন ভালো কথা; কিন্ত পেশাদার এবং পাঠকবান্ধব লেখা উপস্থাপন করতে হলে লেখা এবং আপনার লেখার উপস্থাপন শৈলী জানা দরকার সেটা বেমালুম ভুলে গেলে চলবে না। আপনার ভাষাগত দক্ষতা, সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা, যে কোন বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত জ্ঞান, নিয়মিত লেখার অভ্যাস এবং ক্রিয়েটিভ লেখার উপর দক্ষতা মানসিকতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে-ই-না আপনি আপনার ব্লগের পাঠকদের জন্য সুন্দর এবং সাবলীল লেখা উপহার দিতে পারবেন, এবং নিজেকে একজন পেশাদার ব্লগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাধীনভাবে অর্থোপার্জন করতে পারবেন। পেশাদার ব্লগার একজন সৃজনশীল লেখকও বটে। পেশাদার ব্লগারদের সফলতার গল্প; তা আর পৌরাণিক গল্পের গল্প নয়, আজ আপনার জীবনে বাস্তবের বাস্তব গল্প হতে কতক্ষণ!

লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স

ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, অন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং সাহিত্য কর্মী।