প্যারিস হলো শিল্প-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের নগরী। ফ্রান্সে প্রাচীন নিদর্শন, প্রাকৃতিক ও আধুনিক সৌন্দর্যের স্থাপনা রয়েছে যার ফলে যেকোন পর্যটককে আকৃষ্ট করে। শিল্প-সাহিত্যে ও ঐতিহ্যে তাঁদের নিজস্ব স্বকীয়তা, এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা সহজে আলাদা করা যায়। তৎকালীন ফরাসি শাসক নেপলিয়ান বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে ফ্রান্সকে শক্তিশালী ও বৃহৎ একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ফ্রান্সের রাজধানীর নাম প্যারিস। ফ্রেঞ্চে ‘পারিইস্ট’ বলা হয়ে থাকে।
প্যারিসের আইফেল টাওয়ার
প্যারিসের নাম শুনলেই মনের গহিন কোণে মৃদু নাড়া দিয়ে উঠে। চোখে ভেসে উঠে মোনালিশা, ভেনাস দ্যা মিলো, স্বাধীনতার প্রতীক মারলিন, চিরদু:খি ভিনসেন্ট ভ্যানগগের মতোন প্রতিথযশা শিল্পী, কবি সাহিত্যিকদের অজস্র ছবি, স্মৃতি ভেসে উঠে। প্যারিস শহরের অলিতে গলিতে, নানা স্থাপনাগুলো প্রাচীন মনোলোভা ভাস্কর্য এবং শৈল্পিক স্তম্ভ দ্বারা সজ্জিত।
ফরাসি নিদর্শনগুলো দারুণভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ফ্রান্স পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত। এ দেশে বছরে প্রায় ৮২.৬ মিলিয়ন পর্যটক পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে। এখানে ইউনেসকোর নির্বাচিত প্রায় ৪১টি দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ল্যুভর আর্ট মিউজিয়াম, আইফেল টাওয়ার, নটরডেম ক্যাথাড্রাল পৃথিবীর অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় স্থান। ১৭৯৩ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় ল্যুভের পুরোনো প্রাসাদের যাত্রা শুরু। এখানে লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা জগদ্বিখ্যাত দ্য মোনালিসার ছবি ও ভেনাস দ্য মিলো অরিজিনাল ভাস্কর্যটি রয়েছে। এছাড়াও প্যারিসের বিখ্যাত স্থাপত্য আইফেল টাওয়ার। বিশ্বমেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে ১৮৮৯ সালে গুস্তাভে আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করেন। পুরো লৌহদন্ড দিয়ে তৈরি ও সুক্ষ কারুকাজ আইফেল টাওয়ারের সৌন্দর্য মানুষকে এতটাই বিমোহিত করে বাস্তবে দেখেও কল্পিত কল্পনা মনে হতে পারে।
ল্যুভর আর্ট মিউজিয়াম
ফ্রান্সের মানুষকে সবচেয়ে আধুনিক ফ্যাশনের বলা হয়। প্রায় ৪০০ ধরনের বিভিন্ন খাবার ও পানীয় ফ্রান্সে দেখা যায় তাই তো ফ্রান্সের রান্না পৃথিবী বিখ্যাত। ২৫০টিরও বেশি প্রজাতির ফোমাস বা পনির, বিশ্ববিখ্যাত পানীয় শেমপেন তৈরি হয় ফ্রান্সের শেমপেন এলাকায়। বিশ্বের সেরা পারফিউম বা সুগন্ধি আতর যেমন চ্যানেল, ডিয়্যোর, বস ইত্যাদি ফ্রান্সের তৈরি। সিনেমা জগতের সবচেয়ে বড় উৎসব কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি, বিমান তৈরিসহ সামরিক যন্ত্রাংশ এবং দীর্ঘ পাতাল ট্রেন নির্মাণে প্রসিদ্ধ এ দেশটি। চালক বিহীন মেট্রো রেল, পাতাল ট্রেনে ঘেরা পুরো প্যারিস শহর জুড়ে। পাতাল ট্রেন নির্মাণকালের ইতিহাস ১০০ বছরের বেশি পুরোনো হবে।
আর্ক দ্যা ট্রায়োম্প
আর্ক দ্যা ট্রায়োম্প হলো প্রাচীন রোমান স্থাপত্যের ঐতিহ্যে বলা হয়। সেসময় নেপোলিয়ন জিন চালগ্রিনকে সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর গৌরবকে নিবেদিত একটি বিজয়ী স্তম্ভ নকশার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উনিশ শতকে নির্মিত এটি বিশ্বের বৃহত্তম ধরণের স্মৃতিস্তম্ভ। চিত্তাকর্ষক ভাস্কর্যগুলি এর স্তম্ভগুলিতে সজ্জিত। এছাড়াও সেখানে ৫৫৮ জেনারেলদের নাম এবং দুর্দান্ত বিজয়গুলি খুঁটিগুলোর শীর্ষে খোদাই করা আছে। আর্ক দ্যা ট্রায়োম্পের নীচে রয়েছে ফ্রান্সের অজানা সৈনিকের সমাধি।
ভার্সাই প্রাসাদের পেছন অংশ
ফ্রান্সের ভার্সাই প্রাসাদ। ফ্রান্সের সর্বাধিক বিখ্যাত দুর্গ চিটো দ্যা ভার্সাইকে ফ্রান্সের সামরিক শক্তির প্রতীক বলা হয়। ইউরোপে ফরাসী আধিপত্যের একটি নিদর্শন হিসাবে সতেরশো শতকে নির্মিত। ভার্সাই ১৬৩০ থেকে ১৭৮৯ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার আসন ছিল। এই বিশাল বিল্ডিং, বাগান এবং ছাদগুলিতে বিশাল রেনেসাঁ শিল্পীর সোনার কাজগুলির নকশা, ভার্সাই প্রাসাদের প্রাকৃতিক বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য অবশ্যই যে কোনো দর্শনার্থীকে বিমুগ্ধ করবে।
চালর্স দ্যা গুল এয়ারপোর্ট
এছাড়াও পৃথিবীর অন্যতম বড় আয়োতন এবং ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট রয়েছে, যা চালর্স দ্যা গুল নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে মানবাধিকারের দেশ হিসেবেও সুপরিচিত। দেশটিতে ভ্রমন করতে পারলে কেউবা নিজেকে ভাগ্যবানও মনে করেন।
ফ্রান্স হলো ক্যাথলিক প্রধান দেশ। আর সে কারনে দেশটিকে সাধু সন্ন্যাসদের পূণ্য ভূমিও বলা হয়ে থাকে।
লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স।
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী