তথ্য প্রযুক্তির যুগে এমন কিছু অনলাইন ক্যারিয়ার, চাকরী আাছে যা শুনলে খুব সাধারণ মনে হবে, এবং এমন কাজ দিয়েই গড়ে তোলা যায় অসাধারণ উদ্যোক্তা, জব ক্যারিয়ার। অনায়সে গড়ে তোলা যায় ব্যক্তির আর্থিক সাফল্য, আপনার জীবনে স্বাধীন একটি সম্ভাবনাময়ী ক্যারিয়ার।
আপনার একটি স্মার্ট অ্যানড্রয়েড ফোন হাতে থাকলে এক ক্লিকে পুরো দুনিয়া জুড়ে ঘুরে চলে আসা যায়। আর লম্বা ভূমিকা নয়, তো চলুন অনুবাদক ক্যারিয়ার আইডিয়ায় সরাসরি ঢুকে পড়ি। পৃথিবী এখন সবার হাতের মুঠোয় কথাটি বললে একেবারে অত্যুক্তি হবে না। আর একেই বলে গ্লোবাল ভিলেজ। তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লবের কল্যাণে পৃথিবী গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে উঠলেও এই ভিলেজের সবাই সব ভাষা জানে না। এমনকি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিও সবাই জানে না। সুতরাং অসংখ্য তথ্য অনুবাদের চাহিদা বেড়েই চলেছে ক্রমশ বিশ্বব্যাপি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিক্স হ্যান্ডবুকের ২০১৫ সালে দেওয়া তথ্যানুসারে, প্রতি বছর ৬৪ শতাংশ হারে অনুবাদকের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং অনুবাদ ক্যারিয়ার হয়ে উঠতে পারে নতুন সম্ভাবনাময় একটি ক্যারিয়ার। তথ্যটি যদি আপনি বিশ্বাস করেন এবং অনুবাদক ক্যারিয়ার গড়ে তোলতে চান তাহলে যেকোনো পত্রিকা, সাময়িকী বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কিংবা অন লাইন মুক্ত পেশা বা ফ্রীল্যান্সিং পেশায় পেশাদার অনুবাদক হিসেবে বিভিন্ন ফ্লাটফর্মে কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার কোন ধরণের নিজস্ব আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে আপনার সর্বোচ্চ দুটি ভাষা ভালোভাবে জানলেই চলবে। একাধিক ভাষা জানলে আরও ভালো।
এবার চলুন দু’য়েকটি আন লাইন মার্কেট প্লেসের কথা জেনে নেয়া যাক। যেখানে আপনি আপনার অনুবাদ বুদ্ধিবৃত্তি পেশায় কাজ করে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে আয় করা যায়। কালারলিব ডট কম এর তথ্যানুযায়ী ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে, আপ (UpWork) ওয়ার্ক, এরপর ফাইবার (Fiverr)। এ দুটো ছাড়াও আরও বহু অনলাইন মার্কেট প্লেস রয়েছে যেখানে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অন লাইনে এবং ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
এখন প্রশ্ন চলে আসতে পারে, আসলে তাঁরা কত আয় করে? তাহলে আরেকটু পুরো ধারণা নেয়া যাক, অন লাইনে একজন পেশাদার অনুবাদক কত আয় করে থাকেন। ফাইবার মার্কেট প্লেসের রেট যদি দেখুন, তাহলে দেখবেন একজন অনুবাদক ৫০ শব্দের জন্য সর্বনিম্ন ১০ মার্কিন ডলার ধার্য করে থাকেন, এর অধিকও হতে পারে এবং গ্রাহকের সঙ্গে এটি নেগোশিয়েবল করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা যায়। এবার অনুমান করুন একটি আর্ডারে বা কাজের বিপরীতে অনুবাদক (৫০ শব্দের জন্য) আয় করেন ১০ মার্কিন ডলার এবং সময় লাগে সর্বোচ্চ ধরুন এক ঘন্টা। উদাহরণটি আশা করি অনুবাদকের মাসিক গড় আয় বের করতে সহজ করবে, নয় কী!
এছাড়াও আবার কেউ চাইলে পেশাদারিত্বের মাধ্যমে অনুবাদ প্রতিষ্ঠান দিব্যি গড়ে তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাষার কয়েকজন অনুবাদককে সাথে নিয়ে গড়ে তোলা যেতে পারে আন্তর্জাতিক মানের অনুবাদ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী অসংখ্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত নানান বই প্রকাশ করে থাকেন। দিনকে দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এসব প্রকাশনীর সাথে চুক্তির ভিত্তিতে এক ভাষার বই অন্য ভাষায় অনুবাদ করা যেতে পারে। একদিকে যেমন বইয়ের ব্যাপ্তি; অন্যদিকে বাড়বে সাথে একটা অনুবাদ প্রতিষ্ঠানও । এভাবে দাঁড়িয়ে যাবে আপনার কাঙ্খিত অনুবাদ প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসে এ কাজটি করতে পারেন।
এ যুগের অনেক বিষয় আমাদের অসম্ভব, কঠিন মনে হতে পারে। অর্থাৎ কিভাবে কাজ শুরু করবেন, কে কি ভাববে এবং কোথায় গিয়ে কাজ করবো ইত্যাদি। মোদ্দা কথা, বিষয়টি কঠিন মনে হলে সেটি সহজীকরণ বা এর সঠিক সমাধান আপনি অন লাইনে খুঁজে পেতে পারেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি প্রযুক্তি যুগে একটি সাধারণ ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য আপনার সদিচ্ছার সঙ্গে নেটসহ একটি স্মার্ট ফোনই যথেষ্ট। বাকীটা আপনার ধৈর্য্য শক্তি এবং একাগ্রতা। এভাবে আপনি হতে পারেন নিজে উদ্যোক্তা এবং সফল ভাষা অনুবাদক।
লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী ।