আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: আজ ১৮ মার্চ টাঙ্গাইলের মধুপুরের গারো আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিলের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।  ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে চলেশ রিছিলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা তদন্তে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখে নি।

ঘটনার এক বিবরণে তার সফর সঙ্গী প্রতাব জাম্বিল এর ভাষ্যমতে, ২০০৭ সালে চলেশ রিছিল ময়মনসিংহের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান হতে ভাড়া করা প্রাইভেটকার যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মুক্তাগাছা থানার কালীবাড়ি বাজার বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে প্রাইভেটকারটিকে থামিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা রিছিল ও প্রতাপ জাম্বিলকে আটক করে। এদের আরও সহযাত্রীর মধ্যে পীরেন সিমসাং ও তুহিন হাদিমা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও প্রতাপ জাম্বিল ও চলেশ রিছিলকে মধুপুরের কাকরাইদে বিএডিসির খামার সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। চলেশ রিছিলকে জানালার গ্রীলে ঝুলিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য অমানবিকভাবে টর্চার করে। সেখানে দিনব্যাপী অত্যাচারে সন্ধ্যার দিকে চলেশ রিছিলের মৃত্যু হয়।

কিন্ত মধুপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেনের মাধ্যমে জানানো হয়, চলেশকে গ্রেপ্তার করতে গেলে দৌড়ে পালানোর সময় তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। হাসপাতালে আনার পর তাঁর মৃত্যু হয়। ওই রাতেই মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কামরুজ্জামান মধুপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন চলেশের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চলেশ রিছিলের মৃতদেহটি ২০ মার্চ সমাধিস্থ করে স্ত্রী সন্ধ্যারানী সিমসাং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করে মধুপুর থানায় একটি মামলা করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিলেও সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে নি।

ওই সময় বিষয়টি তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ রফিক উদ্দিনের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। কিন্তু আজও সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় নি।

এমন ঘটনার পরপরই তিনটি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) যৌথ অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানের বিষয়ে সে সময় সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানিয়েছিল, চলেশ রিছিলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও রক্তের দাগ ছিল। দুই হাতের হাড় ও সব আঙুল ভাঙা ছিল।

চলেশ রিছিলের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, এবং অন্যান্য আদিবাসী সংগঠন আজ শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়। রিছিলের মৃত্যু বার্ষিকীতে এলাকাবাসী সহ আদিবাসী সংগঠনের সুস্পষ্ট অভিযোগ, চলেশ রিছিলকে নির্যাতন করে হত্যা  করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন খুনিদের নির্দেশনা অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল। এছাড়াও রহস্যজনকভাবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয় নি। যা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশে বিচারহীন ব্যবস্থারই জ্বলন্ত উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন।