নিউজ ডেস্ক: জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও বিলাসবহুল জীবন ভুলে বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে দেশ ছেড়েছিলেন স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়। তিনি অসম্ভব কর্মদীপ্ত, কর্মোদ্দীপক, আত্মবিশ্বাসী এবং আবিমা’র আলোক বর্তিকা। প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত, অসাধারণ এবং অনন্য এক যাজক। তাঁর হস্তে অস্ত্র হিসেবে ছিল শাণিত কলম। আবিমাঞ্চলে অন্ধকারে আলোর মহানায়ক হিসেব আর্বিভূত হয়েছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। যুদ্ধের আগে এবং পরবর্তীকালে আবিমা’র খ্রীষ্টিয় সমাজ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং এক সুণিপুন কারিগর। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ আরও অনেক কাজে নিজেকে উজার এবং সর্বস্ব করে দিয়েছে। অকাতরে সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছেন জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে। তিনি হলেন, আবিমা’র বীর ধর্মযুদ্ধা আর জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে পরিচিত আমেরিকান নাগরিক রেভা ফা. ইউজিন ই. হোমরিক, সিএসসি। তিনি নিজ হাতে গড়েছেন জলছত্র এবং পীরগাছা ধর্মপল্লী। আবিমা অঞ্চলের মান্দিসহ সবার প্রাণপ্রিয় পিতৃতুল্য ধর্মগুরু। জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অতি প্রিয় মানুষ।

মানবসেবী রেভা ফা. ইউজিন ই.হোমরিকের জন্ম ১৯২৮ সালের ৮ ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান শহরের মুসকিগন নামক গ্রামে। যাজকীয় ব্রত গ্রহণ করে ১৯৫৫ সালে এবং ব্রতের এক বছর পর বাংলাদেশে আসে। আগে থেকেই বাংলা ভাষার প্রতি দুর্বল ছিল এবং তৎকালীন নটর ডেম কলেজের বাংলার অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ আবদুল হামিদের কাছে বাংলা ভাষার পাঠ নেন।

বাংলা ভাষা শিক্ষা শেষে; ১৯৫৬-১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত গোল্লা ধর্মপল্লিতে ফাদার ডমিনিক ডি রোজারিও, সিএসসি-এর সাথে সহকারী পাল পুরোহিত হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে বিড়ইডাকুনি ধর্মপল্লীতে বদলী হয়ে সেখানে নয় মাস থাকার পর ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে জলছত্র উপধর্মপ্ললীতে চলে আসেন। মান্দি জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করে গিয়ে তিনি খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করেন,দারিদ্র্যই গারো আদিবাসীদের নিত্যসঙ্গী। এর পর তিনি পিছিয়ে পড়া মান্দি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলেন ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জলছত্র এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্পোস খ্রিস্টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং পরে পীরগাছায় প্রতিষ্ঠা করেন সেন্ট পৌলস উচ্চ বিদ্যালয়।

পবিত্র ক্রুশ সংঘের ফাদারদের সুপিরিয়র ফাদার জেমস ক্রুশ সিএসসি ডিসিনিউজের এক সংবাদে বলেন,‘আমরা আজ খবর পেয়েছি ফাদার হোমরিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর বয়স এখন ৯২ বছর। তাই শরীরিকভাবে তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থানে আছেন।’ তাঁর সুস্থতা কামনা করে সকলের নিকট প্রার্থনার আহ্বান করেছেন সুপিরিয়র ফাদার জেমস ক্রুশ।

গত ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট রোজ শনিবার আবিমাঞ্চল ছেড়ে ঢাকায় যান এবং ১৮ আগস্ট তিনি নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। উল্লেখ্য বাংলাদেশের ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল অঞ্চলে ৬০ বছরেরও অধিক সময় ধরে প্রৈরিতিক কাজ করে যান ফাদার হোমরিক, সিএসসি।