আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: কয়েক দিন পরই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখে বান্দরবানের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী ‘ম্রো’ জনগোষ্ঠীর প্রথম ম্রো ভাষার ব্যাকরণ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। ম্রো ভাষায় ‘ততোং’ নামে ব্যাকরণ বইটি লিখেছেন ম্রো ভাষার লেখক ইয়াংঙান ম্রো। ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বান্দরবান জেলা শহরের উজানীপাড়ায় ম্রো ভাষার ব্যাকরণ ততোং–এর মোড়ক উন্মোচন করেন ক্রামাধর্মের প্রধান পুরোহিত লেংয়াং ম্রো।
সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের উজানীপাড়ায় লেখক ইয়াংঙান ম্রোর বাসভবনে ঘরোয়া পরিবেশে ‘ততোং’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন ম্রো গানের শিল্পী ঙানসিং ম্রো, ম্রোভাষা বিশেষজ্ঞ রেংয়ং ম্রো ও নারী অধিকারকর্মী তনপাউ ম্রো।
প্রধান অতিথি ও ক্রামাধর্মের প্রধান পুরোহিত লেংয়াং ম্রো বলেন, “ম্রো ও অন্য যেকোনো জনগোষ্ঠী ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে টিকে থাকে। এ জন্য ভাষার গুরুত্ব অনেক বেশি। আর ভাষাচর্চার জন্য দরকার ব্যাকরণ। সেই প্রেক্ষাপটে ইয়াংঙান ম্রোর ‘ততোং’ ম্রো জনগোষ্ঠীর ভাষা উন্নয়নের নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছে।”
আলোচক রেংয়ং ম্রো বলেন, “ম্রো বর্ণমালা উদ্ভাবনের পর থেকে ভাষার লিখিত রূপের চর্চাও শুরু হয়। কিন্তু ব্যাকরণ না থাকায় বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বানান, শব্দ প্রয়োগ ও ক্রিয়াপদের ব্যবহার করেন। এতে অনেক সময় একজনের লিখিত রূপ আরেকজনের জন্য বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ইয়াংঙান ম্রোর ‘ততোং’ সেই জটিলতার কিছুটা হলেও সুরাহা করবে। ভাষার পরিশীলিত চর্চায় সাহায্য করবে।” লেখক ইয়াংঙান ম্রো বলেন, “বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামারের অনুকরণে ম্রো ভাষার ‘ততোং’ লেখা হয়েছে। ক্রামাদি মেনলে ১৯৮২ সালে ম্রো ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবন করেন। কিন্তু এযাবৎ কোনো ব্যাকরণ রচনা করা হয়নি।” এ জন্য তিনি ম্রো ভাষার ব্যাকরণ রচনায় সচেষ্ট হন। প্রারম্ভিক উদ্যোগ হিসেবে ‘ততোং’-এ অনেক ভুলত্রুটি থাকতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চিম্বুক পাহাড়ের পোড়াপাড়ার বাসিন্দা ক্রামাদি মেনলে আশির দশকে ক্রামা নামে ম্রোদের জন্য নতুন একটি ধর্মেরও প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে ক্রামাদি মেনলের অন্তর্ধান হয়ে যাওয়ার পর তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। ম্রোদের বিশ্বাস, তিনি ফিরে আসবেন।