জনমনে একটি প্রশ্ন – কে বিজয়ী হবেন, কার গলায় পড়বে বিজয়ের মালা ! কে পাচ্ছেন আগামীর প্রতিনিধিত্ব, সমিতির ১৫কোটি ক্যাপিটাল কে দেখভাল করছেন ইত্যাদি। নির্বাচনে যেই জয় হোক- আমরা চাই একতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, সমিতির উন্নয়ন এবং উন্নয়ন।
আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২১ এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ খ্রীষ্টিয়ান ক্রেডিট ইউনিয়নে ভোটের উত্তাপ বাড়ছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসরত গারো আদিবাসী এবং অন্যান্য খ্রীষ্টান দ্বারা পরিচালিত বৃহৎ একটি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যার নাম ‘ময়মনসিংহ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লি:’।
সমিতির সক্রিয় এবং প্রাক্তন বোর্ড সদস্যের এক ভাষ্য মতে, বর্তমানে সমিতির ক্যাপিটাল প্রায় ১৫কোটি। আর সদস্য ও সদস্যার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫ শত। রেগুলার সদস্য রয়েছেন ৮৭৪জন। বর্তমানে সমিতির নিজস্ব ৪তলা ভবন রয়েছে। নিজস্ব ভবনে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়াও ১কোটি ১০লক্ষ টাকায় ১০ শতাংশ কেনা জমিতে ৭তলা নতুন হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নির্বাচনী বিধিনুযায়ী আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২১ সেই ক্রেডিট ইউনিয়নের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মূলত এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাঘা দুটি পুর্ণ প্যানেল। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘পলাশ-তিতুস-সুকুমার-জেমস’ এবং অন্যটি ‘ইউনুস-দুলেন-মার্টিন-মুকুট’ প্যানেল। সভাপতি পদপ্রার্থী ইউনুস সাংমা ‘চেয়ার’ এবং পলাশ রেমা ‘ছাতা’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্যানেল দুটি ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত নির্ধারিত প্রতীক ব্যবহার করে প্রচারনায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। নিজ প্যানেলের পক্ষে ভোট যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছেন। কেউ কেউ বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জয়ের আশা জাগাচ্ছেন; আবার কেউবা নতুন প্রার্থী হয়ে প্রথাগত এবং বিজয়ে নতুন কৌশল ব্যবহার করতে বদ্ধ পরিকর। ফলে উভয় প্যানেলের চোখে ঘুম নেই। তাদের দৃষ্টি এখন সদস্যদের কাছে। সদস্যদের দ্বারে দ্বারে পদ প্রার্থীরা দৌঁড়াচ্ছেন।
ফেসবুক, এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নির্বাচনসহ যেকোন বিষয় প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এই নির্বাচনের পদ প্রার্থীদের বিশেষ অঙ্গীকার এবং ফেসবুকে লিখিত স্ট্যাটাসগুলো কিছুটা দেখে নেয়া যাক, যেমন-
‘ইউনুস-দুলেন-মার্টিন-মুকুট’প্যানেলে পরিচালক পদপ্রার্থী সূর্বণা পলি দ্রং তিনি তাঁর ফেবু ওয়ালে লিখেছেন, ‘সততা আমাদের মূল্যবোধ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আমাদের বল এবং সমিতির উন্নয়নের স্বপ্ন আমাদের চালিকা শক্তি। ময়মনসিংহ খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে অগ্রগতির ধারা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারে ইউনুস-দুলেন-মার্টিন-মুকুট প্যানেল। আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে এই প্যানেলকে জয়যুক্ত করে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সামিল হোন।‘
একই প্যানেলের পারিচালক পদ প্রার্থী সেবাষ্টিন আরেং লিখেছেন, ‘দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও সততার সম্মিলনে এবং চলমান উন্নয়নের সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারে গঠিত ইউনুস-দুলেন-মার্টিন-মুকুট পরিষদ। আপনার ও আপনাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করে সমিতির সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সামিল হোন।‘
এদিকে ‘পলাশ-তিতুস-সুকুমার-জেমস’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী জনাব পলাশ রেমা তাঁর ফেবু ওয়ালে লিখেছেন, ‘ছাতা নিরাপত্তার প্রতীক। ময়মনসিংহ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে গঠিত তহবিলের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আসুন আমরা ছাতার তলে অবস্থান করি। এছাড়াও তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ একই ব্যক্তিবর্গ যখন একই দায়িত্বে অধিষ্ঠ থাকে তখন প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা, স্বচ্চতা ও সেবার বিষয়টি অবহেলিত হয়ে পড়ে এবং প্রতিষ্ঠানে বিশাল এক নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দেয়। এই সকল দিক বিবেচনায় নিয়ে-ই পলাশ-তিতুস-সুকুমার-জেমস প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছি এবং আমরা সবার কাছে আর্শীবাদ প্রর্থনা করছি।‘
এছাড়াও একই প্যানেলের পরিচালক পদপ্রার্থী জনাব জেভিয়ার চিসিম (জীবন) ফেবুতে লিখেছেন- ‘সেচ্ছাচারিতা, সদস্যদের অবমূল্যায়ন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার বিরুদ্ধে আমাদের এই গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ। আমি বিশ্বাস করি ময়মনসিংহ খ্রীষ্টান কো-আপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর সদস্য সদস্যাগণ আমাদের সাথে থাকবেন। আমরা কথা দিচ্ছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা প্রতিষ্ঠা এবং নিশ্চিত করবো।‘
এহেন আরও উল্লেখ্য, ‘পলাশ-তিতুস-সুকুমার-জেমস’ ১১ দফা এবং অন্যদিকে ‘ইউনুস-দুলেন-মার্টিন-মুকুট’ ৮দফা নির্বাচনী ইশতেহার ইতোমধ্যে জন সম্মুখে, ব্যানারে প্রকাশ করেছেন। যার ফলে বুঝা যাচ্ছে, তাঁরা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাদিহিতা নিশ্চিতসহ সমিতির কল্যাণে সকলেই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বাংলাদেশের জাতীয় কিংবা অন্য যেকোন নির্বাচন মানেই আরেকটি সামাজিক উৎসব। সচরাচর যেকোন নির্বাচন উৎসব মূখোর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়। ব্যক্তি, প্রার্থী, অথবা প্যানেল দ্বারা সাধারণ সদস্যদের মাঝে সমিতির উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি, ইশতেহার তুলে ধরেন এবং মুখোরোচক নানা অঙ্গীকার করে সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোট নিজেদের পক্ষে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাটিও করে থাকেন। এসব নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অপকৌশল প্রয়োগ করতেও দ্বিধা করে না। কেউবা আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠত হয়ে সে ক্ষমতাকে কুক্ষিতগত রাখার প্রাণপণ চেষ্টাও করে থাকেন।
এদত নির্বাচনী হালচাল বিষয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জৈনক এক সদস্য আ.বিমা টাইমসকে বলেন, ‘যতই ভোটের দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই ময়মনসিংহ শহরের অলিগলিএবং সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচারণা বাড়ছে। নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে প্রচার প্রচারনায় মাঠ গরম করে তুলছে উভয় পক্ষ। বুঝা যাচ্ছে না কোন পর্ষদ ফাইনালী য়্যূইন হবে। তিনি মনে করেন, উভয় প্যানেলে যোগ্য অযোগ্য ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যোগ্য, ক্লিন ইমেজ ব্যক্তির কারনে প্যানেলের ইমেজ বাড়ে, জয়ের পথ মসৃন করতে পারে; অন্যদিকে অযোগ্য, দুস্কৃতিকারী, অযোগ্য প্রার্থীর জন্যে প্যানেলের জয় বাঁধাগ্রস্থ হতে পারে। আমার দৃষ্টিতে ‘ইউনুস-দুলেন-মার্টিন-মুকুট’ প্যানেলটি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে এরা অভিজ্ঞ এবং অধিকাংশ প্রার্থী বর্তমান পর্ষদে রয়েছেন, সে দিক থেকে প্যানেলটি আমার মতে এগিয়েও রয়েছেন। ‘পলাশ-তিতুস-সুকুমার-জেমস’ প্যানেলটি সভাপতি প্রার্থী পলাশ রেমা নিজেই সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তাঁর প্যানেলে যারা রয়েছে তাদের প্রত্যেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে; তবে অভিজ্ঞতার দৌড়ে কিছুটা পেছনে। কিন্ত নবীণ প্রবীণ সমন্বয়ে গঠিত এবং কোষাধ্যক্ষ পদ প্রার্থী জেমস চিরান প্রফেশনাল ব্যাংকার হওয়াতে ব্যক্তি ইমেজে প্যানেলটি একেবারে কম গুরুত্বপূর্ণ তা বলা যাবে না।‘ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি ইমেজের কারনে ‘পালাশ-তিতুস-সুকুমার’ প্যানেলটির পালে হাওয়া লাগতে পারে, তবে অভিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞতার আলোকে ‘ইউনুস-দুলেন-মার্টিন’ প্যানেলটি পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পাবার সম্ভাবনাটিও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।‘ তার সর্বশেষ ভাষ্য মতে, নির্বাচনে যেই জয় হোক- আমরা চাই একতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, সমিতির উন্নয়ন এবং উন্নয়ন।
মোদ্দা কথা, নির্বাচন মানেই জয় পরাজয়ের ভেলকী বাজি খেলা। কেউবা এটিকে জনপ্রিয়তা, টাকার শ্রাদ্ধ এবং দাবা গুটির চাল খেলাও মনে করেন। নির্বাচনে মাঝে মধ্যে এমন কিছু বাস্তবে চিত্র দেখা যায়, নির্বাচনের মাঠে ভালো বল খেলেও লক্ষ্যানুযায়ী গোল পাওয়া যায় না, আবার সারা মাঠে বল না পেয়ে এবং নির্ধারিত শেষ সময়ে একটিমাত্র পায়ে বল পেয়ে দুর্দান্তভাবে গোলটি করে বসেন। বিধায় এ নির্বাচনেও জনমনে একটি প্রশ্ন রয়ে গেল- কে বিজয়ী হবেন, কার গলায় পড়বে বিজয়ের মালাটি! কে পাচ্ছেন আগামীর প্রতিনিধিত্ব, সমিতির ১৫কোটি ক্যাপিটাল কে দেখভাল করছেন ইত্যাদি।