আন্তর্জাতিক নিউজ : ব্রেক্সিট নথি মোতাবেক চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় যুক্তরাজ্যের। এর ফলে ইইউ ও যুক্তরাজ্য এখন অন্তর্বর্তী সময় পার করছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০। উভয় পক্ষের চুক্তির পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ধারণে ওই সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। ফলে দিন যতই যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এক টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যুক্তরাজ্য-ইইউ-এর-বিদায়
ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করতে আলোচনা অব্যাহত থাকবে, নাকি এর সমাপ্তি টানা হবে— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আজ রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান কমিশনের সদর দপ্তরে বরিস ও উরসুলার বৈঠকের কথা ছিল। নির্ধারিত বৈঠক সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের আলোচক ডেভিড ফ্রস্ট ইইউর আলোচক মিশেল বার্নিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা দুজনই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, চুক্তিসহ ব্রেক্সিট কার্যকরের সম্ভাবনা কম।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) আগেই চূড়ান্ত করা হলেও বিচ্ছেদ–এর পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, শেষ মুহুর্তে তা নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল দর কষাকষি চলছে। আজ রোববার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসার কথা ছিল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও ইইউর প্রধান উরসুলা ভন ডার লায়েনের। যুক্তরাজ্য-ইইউ-এর-বিদায়
এদিকে ইইউর সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই গতকাল শনিবার নাটকীয় একটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। দেশটি বলেছে, যুক্তরাজ্যের জলসীমায় মাছ শিকার থেকে ইইউর জেলেদের প্রতিহত করতে ১ জানুয়ারি থেকে সশস্ত্র টহল শুরু করবে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। জোটের বর্তমান নীতি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের জলসীমায় অবাধে মাছ শিকার করতে পারে প্রতিবেশী ইইউভুক্ত দেশগুলো।
উরসুলা ভন ডার লিয়েন সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রেক্সিট–পরবর্তী অন্তর্বর্তী সময় শেষ হওয়ার পর তাঁরা নিজেদের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাবেন। তবে আরও এও জানা যায়, নিজেদের প্রধান প্রধান নীতি বিষয়ে কোনো পক্ষই এখন ছাড় দিতে রাজি নয়।
ইইউর বর্তমান নীতি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের জলসীমায় অবাধে মাছ শিকার করতে পারে প্রতিবেশী ইইউভুক্ত দেশগুলো। ইইউ চায় এ সুবিধাগুলো বলবৎ রাখতে। অন্যথায় ইইউর বাজারে ব্রিটিশদের শুল্কমুক্ত মাছ রপ্তানির সুযোগ দিতে রাজি নয়। বাজার প্রতিযোগিতায় যুক্তরাজ্য যাতে অন্যায় সুবিধাগুলো নিতে না পারে, সে জন্য কর্মী অধিকার ও পরিবেশবিষয়ক আইনগুলো সমান রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছে ইইউ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য চুক্তির কোনো নিয়মভঙ্গ করলে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সাজা দিতে চায় ইইউ। আর উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে, তা মিটমাটের দায়িত্ব ইইউ আদালতের কাছেই ন্যস্ত রাখতে চায় তাঁরা।
উভয় পক্ষ বাণিজ্য চুক্তি ব্যতিত ব্রেক্সিট কার্যকর করা হলে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রম চালাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম মেনে চলতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ব সংস্থাটির নিয়ম মেনেই পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। দুই পক্ষকে পণ্য আমদানি–রপ্তানির জন্য নানা আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলতে হবে। ফলে উক্ত আলোচনা ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে লন্ডন ও ব্রাসেলসের মধ্যকার সম্পর্কে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সূত্র : টিএফআই