প্রত্যেকেই অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে প্রচলিত ধারণার শৃঙ্খলে সে ক্রমান্বয়ে বন্দী হয়ে পড়ে। পরিবেশ যা তাকে ভাবতে শেখায় সে তা-ই ভাবে, যা করতে বলে তা-ই করে। সে হতে পারতো ধর্মপ্রাণ মহামানব কিংবা বড় বিজ্ঞানী অথবা মহান নেতা বা অমর কথাশিল্পী, সেই অপার সম্ভাবনাময়ী মানব শিশুই ভ্রান্ত ধারনায় বন্দী হয়ে পরিণত হচ্ছে কর্মবিমুখ, হতাশ, ব্যর্থ কাপুরুষে। এ ব্যর্থতার কারণ মেধা বা সামর্থ্যের অভাব নয়, এ ব্যর্থতার কারণ বস্তুগত সীমাবদ্ধতা নয়, এ ব্যর্থতা হলো মানুষের মনের জগতের শিকল।

প্রতিটি মানব শিশু সুপ্ত মহামানবরূপে জন্মগ্রহণ করে। কিন্ত আমাদের পরিবেশের বেড়াজাল সৃষ্ট মনোজাগতিক শিকল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে তাকে পরিনত করে এক অসহায় নিরুপায় প্রাণী হিসেবে। সে মনে করে এটাই তার জগত, এটার সর্বশ্রেষ্ঠ বিরচণভূমি। এর থেকে বেশি কিছু সে জানতে পারে না, দেখতে পারে না, বুঝতে পারে না, বুঝতে চায় না। তাই দেখা যায় যে আমাদের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি পরিবারের, সমাজের পুরো জাতির ‍বিপুল সম্ভাবনা, শক্তি ও সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সংস্কার, ভ্রান্ত বিশ্বাস, শোষক ও পরাভববাদীদের আরোপিত মিথ্যে ধারণার শৃঙ্খলে আমরা নিজেদের গণ্ডীবদ্ধ ও বন্দী করে ফেলছি। দুর্দশাস্থ ও গ্লানিকর জীবনকে আমরা নিয়তি ও ভাগ্যরুপে মেনে নিচ্ছি।

মানুষের অসীম সৃষ্টিশীল শক্তি, সম্ভাবনা ও প্রতিভাকে সব সময় শৃঙ্খলিত ও পঙ্গু করে সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস। এই সংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ব্যক্তি, সমাজ এমন কি একটি জাতিকেও নি:শেষ নির্মূল করে দিতে পারে, করে দিতে পারে পুরোপুরি ধ্বংস। এমন মনোজাগতিক শিকল ছিঁড়ে ব্যক্তিসত্ত্বাকে, প্রতিভাকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। সিদ্ধান্তহীনতায় নিজেকে সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারছি না। প্রকৃতপক্ষে নিজের আত্মবিশ্বাসই মেধাকে বিকাশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখে।

এখন কথা হলো, আমরা আমাদের জীবনের বেশীরভাগ সময় আমরা কি করে কাটাই বা সময়কে কিভাবে ব্যবহার করি? অতীতের অবস্থা আমাকে কোন শিক্ষা দেয় কি না ! অতীতে বা ভবিষ্যতে বিচরণ করে আমরা বর্তমানকে কতটুকু গুরুত্ব দিই !

আসলে এসব একটু থেমে ভেবে দেখার ফুরসত আমাদের অনেকেরই নেই। আমরা অতীত এবং বর্তমানকে সমন্বয় করতে পারি না বলেই দুটির যেকোন একটিকে আপনার জীবনে অসনীয়, একঘেয়ে লাগে। নিজের প্রতি নিজের কোন আত্মবিশ্বাস থাকে না। নিরুপায় হয়ে সংস্কারকে শেষ সম্বল মনে করি। নিজে আগ বাড়িয়ে আপ্রাণ চেষ্টা থেকে বিরত থাকি। অন্ধকার কুটিরে বিশাল আকাশের তারা খুঁজিফিরি।

সাফল্যের কোন গূঢ় রহস্য নেই। কোন কাজ সুসম্পন্ন করতে হলে আগে কাজ শুরু করতে হবে একটি জ্বলন্ত আকাঙ্খা দিয়ে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, অল্প আগুন যেমন অনেক উত্তাপ দিতে পারে না; তেমনি দুর্বল ইচ্ছাশক্তি কোন মহৎসিদ্ধি লাভ করতে পারে না।

অতীতকে ভুলতে নেই। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত এই তিনটিকে সমন্বয় করতে হবে। যে ব্যক্তি এই তিনটিকে সমন্বয় করে সময়কে ব্যবহার করে, নিজের সৃষ্টিশীল মেধা ও মননকে কাজে লাগাবে সে ব্যক্তি আজ অথবা কাল সফলতা অর্জন করবে-ই।