রাত পোহালেই মার্কিন মুল্লুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কী হতে চলেছে তা নিয়েই সরগরম গোটা আমেরিকা তা নয়, গোটা বিশ্বই রীতিমতো কোমর বেঁধে সুদ কষার অংক কষতে বসেছেন। অর্থাৎ নানা বৈশ্বিক সমীকরণ, মহাসমীকরণ, সুবিধা এবং অসুবিধার কথা ভেবে কেউ বসে নেই। বড় বড় জ্যোতিষিদেরও ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। আগামী ৪ বছরের জন্য কে বিশ্ব মোড়লের চেয়ারে বসবেন। মুন্সিয়ানা কার দখলে যাবেন। মূল বিষয়টা হচ্ছে, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরবেন নাকি বাইডেন হবেন দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে শুধুমাত্র আমেরিকার সব থেকে শক্তিশালী মানুষ, এমনটা নয়৷ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি গোটা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি ৷
কাল সেই মহেন্দ্রক্ষণটি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আমেরিকায়৷ তাই বিশ্ব চোখ এখন আমেরিকার দিকে তাক করে আছে। কেউ ভাবছে, ভবিষ্যতবাণী করছে পালাবদল হবে অথবা নয়৷ এমন দোদুল্যমান প্রশ্ন, আশা দুরাশা দোলাচলে কমবেশি ভাসছি আমরা সবাই ।
মিডিয়ার ভাষ্য মতে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে সব বিষয়ে প্রথম দেখতে পছন্দ করেন। এদিকে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনও ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রথম হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগেও জনমতে পিছিয়ে থাকা ট্রাম্প, নাকি এগিয়ে থাকা বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবেন— এ নিয়ে হলফ করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ফলে ৩রা নভেম্বর ভোটের ফলের ওপর নির্ভর করতে হবে— কে হবেন প্রথম, কে হবেন প্রেসিডেন্ট। এবারের মার্কিন নির্বাচন ঠিক এমনই প্রতিদ্বন্দ্বিতার হয়ে উঠেছে।
বৈশ্বিক বিষয় বাদ দিলেও তাদের আভ্যন্তরীন বিষয় আমিও যা দেখছি, এবারের নির্বাচনে জিতলে ট্রাম্প আবারও নানা কারণে প্রথম হওয়ার সুযোগ পাবেন। তিনি যদি জিতে যান তাহলে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হবেন (রোনাল্ড রিগ্যানের চেয়ে সাত মাসের বেশি বয়সে)। পরপর দুই দফা জনপ্রিয় ভোটে পিছিয়ে থেকেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে নিজেকে প্রথম হিসেবে দাবি করতে পারবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আর নির্বাচনে যদি জো বাইডেন জয়ী হন, তাহলে তাঁর জন্যও বেশ কিছু রেকর্ড অপেক্ষা করছে। জয়ী হলে বাইডেনও সবচেয়ে বেশি বয়সের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার রেকর্ড করবেন। আগের রেকর্ডটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এবার জয়ী হলে, জো বাইডেনই হবেন ডেলোয়ার অঙ্গরাজ্য থেকে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ রাজ্য থেকে মার্কিন সিনেটে দীর্ঘতম সময়ে থাকার রেকর্ডও বাইডেনের। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে, তিনিই হবেন প্রথম কোনো সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, যিনি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে পরাজিত করে নির্বাচিত হবেন। একইভাবে বাইডেন ডেমোক্রেটিক দলের কোনো সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, যিনি অন্য দলের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরবও অর্জন করতে পারেন।
এদিকে বৈশ্বিক, ভৌগোলিক ইস্যূতে অনেক বন্ধুপ্রতীম দেশ ক্ষমতাসীনের পক্ষে, আবার ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না, তাঁর শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে একমত নয় অনেক দেশ দুজনের মধ্যে কোন পক্ষ নিচ্ছেন না। জো বাইডেনের পক্ষে জরিপ এগিয়ে থাকাতে আগাম জয়ের হাঁসি হাসছেন কেউ কেউ।
কাল যদি দিন ভালো থাকে, খেলার মাঠে গোলের দৃশ্য আমরা সবাই দেখবো, গোটা বিশ্ববাসী দেখবেন। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণা আমরা সবাই দেখেছি, কে কেমন মাঠে খেলছেন। অর্থাৎএখন বিষয় হলো- সারা মাঠ জুড়ে খেলে গোল পোস্টের বা পেনাল্টি বক্সের সামনে পায়ে যে বল পাবেন তিনিই গোল করবেন। এবং এটাই খেলার নিয়ম। আমরা মতোন সাধারণ মানুষের কথা হলো, জরিপ যাই বলুক, অথবা আমি/আপনি যাই বলি ঠান্ডা মাথায় ভাবলে ক্ষমতাসীন দল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষেই জয়ের পাল্লা ভারি হতে পারে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে এমনটাই ইঙ্গিত দেখি। তাছাড়া বিগত নির্বাচনের সমীকরণ ও নির্বাচন ফিরিস্তিও তাই বলে। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ এটি ক্ষমতাসীন দলের এক নম্বর নির্বাচনী শ্লোগান। দেশটি ‘গ্রেট’ ছিলো, আছে, ভবিষ্যতে থাকা লাগবে এটা বেশিরভাগ এবং খোদ আমেরিকান ভালোভাবে, হারে হারে টের পাচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন করোনায় আক্রান্ত হন, তখন কেউবা অট্টহাস হেসেছেন আবার অঝোরে কেঁদেছেন, তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করেছেন বিশ্ববাসী।
যা হোক, যদিও নির্বাচন মানেই হচ্ছে অনিশ্চয়তা যেকোনো নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনের কৌশল এমনভাবে নির্ধারণ করেন যেন তাঁদের বিজয়ের একাধিক পথ থাকে এবং সেটিই কাল বিশ্ববাসীর দেখার বিষয়।