আ.বিমা টাইমস নিউজ ডেস্ক: ভারত সীমান্তবর্তী জেলার জামালপুরের একমাত্র গারো আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা (৭৩) আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের দিঘলাকোনা গ্রামে নিজ বাড়িতে পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন।পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি পাকস্থলীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন এই গারো বীর মুক্তিযোদ্ধা।

জয় দাংগো গণমাধ্যমকে জানান, তাঁর বাবা এবেন্দ্র সাংমা মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। জামালপুর জেলায় তিনিই ছিলেন একমাত্র গারো আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে টানা ন’মাস যুদ্ধের রণাঙ্গণে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি প্রথমে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় এবং পরে জামালপুরের ঐতিহাসিক কামালপুরে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের জন্য অবদান রাখেন।

সামান্য কিছু জমি চাষাবাদ ও মুক্তিযোদ্ধাভাতায় তাঁদের সংসার চালানোই দায় ছিল। দীর্ঘদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। এমতাবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবর মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার পাকস্থলিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে ব্যয়বহুল চিকিৎসা শুরু করতে না পেরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। জরুরি ও উন্নত চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হল বীর এই মুক্তিযোদ্ধাকে।

বকশীগঞ্জের ইউএনও মুনমুন জাহান লিজার উপস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিঘলাকোনা গ্রামের নিজ বাড়িতে গার্ড অব অনারের পর খ্রিস্টান ধর্মীয় রীতি অনুসারে পারিবারিক সমাধিতে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবেন্দ্র সাংমা তাঁর সহধর্মিনী মিলন দাংগো ও একমাত্র ছেলে জয় দাংগোসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দরিদ্র হলেও পরোপকারী ও সাদামনের মানুষ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গারো আদিবাসীসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।