জনপ্রিয় বিনোদনের ছোট পর্দার ভিডিও মানেই যেন ইউটিউব। জনপ্রিয়তার দিক থেকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। অর্থাৎ গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন, যিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন অথচ ইউটিউব ব্যবহার করেন না। নানান বিষয় শিক্ষা, বিনোদন, খেলা, সংবাদ, প্রযুক্তি, সাজসজ্জা, রান্না ও ভ্রমণ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়। বিপুলসংখ্যক দর্শকের টানে আজ বড় বড় ভিডিও নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানও ইউটিউবকে বেছে নিচ্ছে তাদের কাজ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে। ইউটিউব যেমনি শিক্ষা-বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে পরিণত হলেও নৈতিক অবক্ষয়ের অনেকগুলো দিক রয়েছে কথাটি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তথাপিও ইউটিউব বর্তমান সময়ে অর্থ উপার্জনেরও একটি জনপ্রিয় মাধ্যম নির্দ্বিধায় বলা যায়। ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি করে আপনি যেমন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তেমনই আয়ও করতে পারেন।

সত্যিই বলতে, ২০১৯ সালে এসে ইউটিউবের কনটেন্ট নির্মাতা এবং ভালো ইউটিউবার হওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বের খ্যাতি অখ্যাতিমান নির্মাতারা এ আসরে যোগ দেন। তাহলে এবার ভাবুনতো ইউটিউব আসরটা আপনার জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে?

আজকাল বহু শ্রেণী পেশার মানুষ চাকরির পাশাপাশি ইউটিউবার হবার স্বপ্ন দেখে। কেউবা প্রথম ইউটিউব চ্যানেল গড়তে গিয়ে শুরুতেই রীতিমতো হুছুট খেয়ে যায়; ফের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে অথবা নিজে থেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। এ যাবৎ অসংখ্য ইউটিউবারদের তৈরি ভিডিও দেখার সুযোগ হয়েছে, শিখেছিও অনেক এবং শিখছি এখনো। আবার সেখানে নাম মাত্র কনটেন্ট দিয়ে ভিডিও আপলোড দিয়ে শ্রোতা দর্শকদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করছে এও কিন্তু মিথ্যে নয়। ভিডিও দেখতে গিয়ে দেখবেন ভিডিও টাইটেল ভালো, ভিডিওর থামনাইল অসাধারণ এসব দেখে দর্শকশ্রোতা যে কেউ আকৃষ্ট হয়ে ভিডিওটি এক নজর দেখতে প্লে বাটনে ক্লিক করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বেশিরভাগ ভিডিওর মূল দৃশ্যটি বা কনটেন্ট দেখে আপনি মুখ ফিরিয়ে যাবেন এতেও কোন সন্দেহ নেই।  কোনটা আবার বারংবার দেখতে ইচ্ছে করে। আমরা যতবার ইচ্ছে ভিডিওটি দেখি। এছাড়াও অন্যকে ভিডিওটি দেখতে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার, লাইক এবং নির্মাতাকে সাবস্ক্রাইব করি। এভাবে ভিডিওটি দেখার সুযোগ করে দিই। ফলে ওরা সবাই ইউটিউবার। সোসাল মিডিয়াতে ব্লগারদের লেখনিতে তাদের আমরা ইউটিউবার বলে চিনি, জানি। মোদ্দা কথা, ইউটিউবার বলে কথা। ইউটিউবে ভিডিও নির্মাণ করে মানিটাইজেশানের মাধ্যমে অর্থ উপর্জনের পাশাপাশি খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন অনেকেই। তাহলে এই জনপ্রিয় নির্মাণ শিল্পে আপনিইবা কেন পিছিয়ে পড়বেন?

নতুন ইউটিউব ক্রিয়েটর

ফটো ক্রেডিট/আনস্প্লাশ

এ প্রবন্ধে ভিন্ন কোন জাতি বা বিশেষ জাতিসত্তার ইউটিউবার শুধু তাদেরকেই বলছি না, ভবিষ্যতে যারা ইউটিউবার হবেন তাদের সকলকে উদ্দেশ্য করে দু’কলম লেখার চেষ্টা করছি। আমার মতামত, পরামর্শ আপনারা চাইলে গ্রহণ করতেও পারেন, না চাইলে ফেলেও দিতে পারেন। অন্যদিকে আপনি ভাবতে পারেন আমি আপনাদের ভিডিও কনটেন্ট না দেখেই মন্তব্যসহ পরামর্শ ছুড়ে দিচ্ছি তা নয়। আপনাদের তৈরি শিক্ষা, বিনোদনমূলক অথবা জানার নিমিত্তে ভিডিওগুলো দেখেই অকপটে প্রয়োজন মাফিক মন্তব্য করছি, যা আপনার কাজে আসতে পারে এবং ইউটিউব নির্মাতা হিসেবে আপনিও লাভবান হতে পারেন।

আপনার ভিডিওটি ভিডিও ফ্রেমে আটকিয়ে ইউটিউবে টাঙ্গিয়ে দিলেই ইউটিবার হতে পারেন, এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং চার হাজার ধার্যকৃত টাইমিং পূর্ণ করে নথিভূক্ত এবং সচল ইউটিউবার হতে পারেন। মানলাম আমাদের সেই শিক্ষা, পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তাই বলে অর্থ উপার্জন, বিনোদনের নামে শ্রোতাকে ঠকিয়ে ইউটিবার হবার সাধ কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার কাছে বোধগম্য হয় না। কিছু ইউটিউবার আছেন যাদের কনটেন্ট আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করে, আবার প্রচন্ড বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয় আমার মতোন জ্ঞান পিপাসুদের।

ইউটিউব ক্রিয়েটর ক্যারিয়ার

ফটো ক্রেডিট/আনস্প্লাশ

আগে নতুন ইউটিউবারদের জন্য ইউটিউব ভিডিও বানানো ছিল অপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু ২০১৯ সালে অনেক নিয়ম-কানুন যোগ করেছে ইউটিউব, যা পাশ কাটিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। একজন সফল ইউটিউবার হতে চাইলে সেসবের পাশাপাশি এর কলাকৌশলও ভালো জানা থাকা উচিত। আপনি যদি প্রকৃত ইউটিউবার হতেই চান এবং একজন সফল ইউটিউবার হতে চান তাহলে কী করতে হবে তা জেনে নিন—

ক) নির্মাণ কল্পে কাজের ক্ষেত্র বাছাই করা

খ) সাবলীল চিত্রনাট্য

গ) নিখূঁত সম্পাদনা

ঘ) নিজের মতো ইউটিউব স্টুডিও তৈরি

ঙ) চ্যানেল স্পর্কিত খুঁটিনাটি

চ) লাইভ স্ট্রিমিং করা

ছ) ইউটিউবের নিয়ম-কানুন রপ্ত করা

জ) মনিটাইজেশান এবং মনিটরিং

ভিডিওগুলোতে ইউটিউবের পক্ষ থেকে দেখানো বিজ্ঞাপন বসিয়ে সেখান থেকে যে অর্থ আয় করে এবং আপনাকে বুঝতে হবে সেখান থেকে কিছু অংশ সফল চ্যানেলগুলোকে ইউটিউব কিছু অর্থ দিয়ে থাকে। ফলে আপনার মানিটাইজেশানকৃত চ্যানেলে গিয়ে যাতে দর্শক শ্রোতা বঞ্চিত না হয় সেটাই মূখ্য হওয়া উচিত, অর্থ উপার্জন নয়। সেটিকে বলা হয় মনিটাইজেশন। অর্থাৎ  এক বছরের মধ্যে অন্তত চার হাজার ঘণ্টা ভিউ, এক হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হয়। তানা হলে  ইউটিউবে এখন আর মনিটাইজেশন সম্ভব নয়। তাহলে সেটিও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ নতুন ইউটিউব ক্রিয়েটরদের জন্য।

যত দিন যাচ্ছে সময়োপযোগী করে ইউটিউবের নিয়ম-নীতিও পাল্টাচ্ছে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে আমাদের, হুট করে এই ইউটিউবে সফলতা আসবে না এবং আসে না। ধারাবাহিকভাবে এতে লেগে থাকতে হবে। নিয়মিত নিজের চ্যানেলে ভালো মানের ভিডিও আপলোড করে যেতে হবে। সফল ইউটিউবার হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ও সততার পরিচয় দিতে হবে।  চ্যানেল তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গেই হাজার হাজার ভিউ ও সাবস্ক্রাইবার হয়ে যাবে অথবা হাজার হাজার টাকা আয় হবে—এটা ভাবা ঠিক নয়। সফলতার জন্য সময় ও শ্রম, সর্বপরি সঠিক মেধা প্রয়োগ করা উচিত। যাতে আপনি, ইউটিউব নির্মাণ প্রতিযোগিতায় আপনার ভিডিওর বিষয়বস্তুতে স্বতন্ত্র হতে পারেন।

লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স।

ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী