একদিকে করোনা ভাইরাস অস্থিরতা। অন্যদিকে নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদী ভাঙ্গন কান্নার দৃশ্যটি আজও মন গভীরে ভীষণ ভেসে ওঠে। এমন কান্নার দৃশ্যটি দেখে দেশ বিদেশের মনবতাবাদীসহ সাধারণ মানুষের চোখের জল পড়ে নি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া মুশকিল। সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নদী ভাঙ্গনের কান্না শুনে বিভিন্ন এলাকার মানবতাবাদী ব্যক্তি, সংগঠন, এমন কী প্রশাসন থেকে প্রতিনিধিরা সদলবলে ছুঁটে গিয়েছেন। এলাকাবাসীর স্বউদ্যোগে আপদকালীন ভাঙ্গন রোধ কর্মসূচী দেখে সরকার প্রতিনিধিরা তখন নিজ হাতে কয়েক বস্তা বালু ফেলে কাজের উদ্বোধনও করেন। যা এলাকার মানুষ সকলেই স্বাক্ষী। শুধু কাজে নয়, গলা উচিয়ে হেন্ড মাইকিং করে কোন দল বা গোষ্ঠীর হয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন জন সম্মুখে। শোনা যাচ্ছিল এ বছরের শুরুতেই কাজে হাত দিবে। দেখতে দেখতে জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারীও প্রায় শেষ। তাহলে ধরে নিব কী সোমেশ্বরীর কান্না, শঙ্কায় জর্জরিত এলাকার মানুষকে দ্রুত বাঁধ নির্মাণে যে এক গাদা আশ্বস্ত সবই বৃথা, ছিল সবই অন্ত:সার শূন্য ওয়াদা!

এছাড়াও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আপদকালীন সাহায্য প্রাপ্তি এবং বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করা বাস্তবায়ন কমিটির একটি নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে বর্তায়। কিন্ত ভাঙ্গণ কমিটির পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্তি, কাজের হালনাগাদ দেখা যায় নি। জন কল্যাণকর কাজে জবাব দিহিতা বড় প্রয়োজন। এমন মহতি উদ্যোগে জবাবদিহিতির পাশাপাশি নিজেদের বাস্তুভিটে রক্ষা, নদী ভাঙ্গণ রোধ কল্পে আরও কার্যকর প্রদক্ষেপ বেশি প্রয়োজন ছিল কী!

এলাকাবাসীর এক লোক মুখে শোনা গেছে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন রোধে দুটো কমিটি করা হয়েছে। এহেন প্রশ্ন জাগে একই এলাকার নদীর ভাঙ্গণ রোধে অযাচিতভাবে দুটো কমিটি কেন গঠিত হলো? যেখানে পরিস্থিতির কোন প্রতিকার ব্যবস্থা হচ্ছে না, প্রশাসনই ভাবলেসহীন অবস্থা, দ্রুত কোন সঠিক পদক্ষেপ নেই তাহলে কাজের চাইতে কমিটি বড় হয়ে গেল না। একই এলাকায় দুটো ভাঙ্গণরোধ কমিটির কাজ কী আলাদা? বরং এও শ্রেয় ছিল, কমিটি দুটো না করে সততার সঙ্গে থেকে সবাই জুট বেঁধে এলাকার সংঙ্কটময় মুহুর্তে একসাথে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া! ওই সরকারী অনুদানের আশায় না থেকে বর্তমান কাজকে সাধ্যানুসারে শুস্ক মৌসুমে সমুন্নত, চলমান রেখে আগামী বর্ষা মৌসুমের ভাঙ্গনরোধে প্রস্তুত থাকা!

ক্ষমতা যাবে, ক্ষমতা বদল হবে। বর্ষা যায়, আরেক বর্ষা ঘুরেফিরে আসে। এভাবে মাস পুরো বছর ঘুরে এখনো সোমেশ্বরী নদীর ভাঙ্গণরোধ প্রকল্প দেখা মেলে নি নেত্রকোনার কামারখালী, বহেরাতুলি এবং তার পার্শ্ববতী গ্রামে। কথা ছিল জানুয়ারী থেকে কাজে হাত দিবে। অদ্যবাধি প্রশাসন থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই। হয়তোবা এলাকাবাসী সহ এলাকার নেতারাও নাকে শরিষা তেল দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে।

আর যদি ধরে নিই এটা ছিল রাজনৈতিক কথার কথা, নেতাদের অহেতুক তুলকালাম কান্ড। যদি এমন অবস্থায়ই হয়, তাহলে এমন রসিকতার কী প্রয়োজন ছিল! কচ্ছপ গতির প্রশাসনিক ব্যবস্থা, নাকি রাজনৈতিক খেলা, তা অতি সাধারণ মানুষদের মাথায় ধরে না। ওদের মাথায় ধরার কথাও না। প্রচলিত আছে যে এটা বাংলাদেশের রাজনীতি, ভিলেজ পলিটিক্স বলে কথা!