যদি আপনার জীবনের লক্ষ্য হয় আপনি গাড়ী চালাবেন, তাহলে বিশ্বাস করুন আপনি গাড়ী চালিয়েই সফল হবেন। আর যদি আপনার লক্ষ্য থাকে আপনি বিমান চালাবেন হবেন; তাহলে লক্ষ্য সে রকম উঁচুতেই রাখবেন। আপনি যদি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী এগোতে পারেন, তাহলে আপনার চাইতে সফল আর কেউ হতে পারবে না।

কম-বেশী সবাই সুখী হতে চায়। সমাজে হতে চাই সফল একজন মানুষ। সংকল্প করি জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হবে। এই কথাগুলো দিনভর এবং এমন কি রাতে ঘুমোতে গেলও ভাবি। অথবা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি কিভাবে সফল হওয়া যায়, আবার সকালে বিছানা থেকে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠি একই ভাবনা নিয়ে। প্রত্যেকেই চাই জীবনে ভালো কিছু করতে, বড় হতে, সম্মান পেতে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। সে ভাগ্য কি সবার জীবনে আসে?

জীবন সাফল্য যেন এক সোনার হরিণ। অথবা আপনার বাড়ীর পাশ দিয়ে ঝিক ঝিক করে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলা রাতের শেষ রেলগাড়িটা। সবাই ছুটছে তার দিকে। মনযোগ সবার হরিণের দেখা মিলবে কবে; কিংবা রেলগাড়িটা কি ধরতে পারবো? ফলশ্রুতিতে কেউবা সাফল্যের জন্য বছরের পর বছর চেষ্টা করে যান, কেউবা মাঠে নেমেই নেঈমা মেশি কিংবা রোনাল্ডো, ম্যারাডোনার মতোন সুযোগ বুঝে পায়ের বলটি পোস্টে পাঠাতে ভুল করেন না। নিমিষে এবং চোখের পলকেই গোল করে বসেন। কেউবা আবার সাফল্যের জন্য পরিশ্রম না করে একঘেয়ে জীবনের ঘানি টানেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ; অথবা সফলতার তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ফেলেন। মার্কিন লেখক, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা জেমস অ্যালটুচ্যার কোরা ডাইজেস্টে তাঁর পোস্টে সফল হওয়ার সাতটি উপায় নিয়ে চমৎকার বলেছেন। আর সে বিষয়গুলো হলো-

১) স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন স্বাস্থ্যের সঙ্গে আমাদের অভ্যাসগুলো নিবিড়ভাবে জড়িত। খুব সহজেই বদভ্যাসে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এটা নির্ভর করছে আপনি কোনটা করছেন; বদভ্যাসে না গিয়ে সুঅভ্যাস চর্চা করতে হবে। বদঅভ্যাসের ফল কখনোই সুখকর নয়; অর্থাৎ সাফল্যের জন্য শরীরের যত্ন নেয়ার কোন বিকল্প নেই। আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়ে জোর দিয়ে সৃজনশীলতা বিকাশে নজর দিতে হবে। আপনার নেতিবাচক অভ্যাস এবং চারপাশে নেতিবাচক মানুষ ও পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে।

২) সবকিছুই আজকের বিষয় ভবিষ্যৎ কিংবা অতীত বিষয়টি আপেক্ষিক। অতীতকে ঝেড়ে ফেলে আজই আপনার ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য আপনাকে আজ কাজ করতে হবে। আজ যদি কাজ ভালো করেন; তাহলে দারুণ একটি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করবে আপনার জন্য। আর যদি আজকের দিনটিতে আপনি কোন কাজই না করেন, তাহলে কিন্তু আপনার আগামীর ভবিষ্যত এর বিপরীত কিছু অপেক্ষা করছে। অর্থাৎ চেষ্টা করুন সময়ের সৎ ব্যবহার করতে, প্রতিদিন কিছু না কিছু করতে।পাশাপাশি পরিবার ও নিজের উন্নতির দিকেও খেয়াল রেখে নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।

৩) হ্যাঁ-না বলুন ভেবেচিন্তে ‘হ্যাঁ – না’ বলুন ভেবেচিন্তে। গবেষণায় দেখা যায়, সফল ব্যক্তিরা ‘হ্যাঁ-না’ বলেন ভেবেচিন্তে। বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সৃজনশীল হলে অবশ্যই হ্যাঁ বলুন। আনন্দের পাশাপাশি নিজের মেধা মনন বিকাশ হতে পারে এমন বিষয়ে সব সময়ই হ্যাঁ বলা শিখুন।

৪) সরলভাবে ভাবুন, শিখুন সরলভাবে ভাবুন এবং সাধারণ ভাবতে শিখুন। যেমন শিশুরা সরলভাবে ভাবার চেষ্টা করে এবং সব কিছুই সরলতায়, অনায়াসে আয়ত্ত করে ফেলে সবকিছু। শিশুর মতোন ভাবার চর্চা করুন। আপনার প্রাত্যহিক জীবনে ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন; তাহলে আপনার ভাবনাশক্তি ও সৃজনশীল মনোভাব বাড়বে।

৫) বহুমাত্রিক সাফল্যের জন্য চেষ্টা করুন বিষয়ভিক্তিক জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে অনেক। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই সবকিছু জানি না। নকদর্পণে থাকে না। তাই জানা এবং পড়ার আগ্রহ থাকতে হবে। জানার জন্য অবশ্যই বই পড়তে হবে। ফিকশন, নন-ফিকশন সব ধরনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৬) ভয় বনাম জড়তা নিজেকে একটিমাত্র ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না করে, জুটসই পেশার জন্য আপনার লব্ধজ্ঞানকে পূঁজি করে বহুমাত্রিক সাফল্যের জন্য চেষ্টা করুন। অর্থাৎ একটি বিনিয়োগে ব্যর্থ হলেও অন্য জায়গায় সামনে এগোনোর সুযোগ থাকে। একটি বিষয়ে সাফল্য এলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য বিষয়ে মনঃসংযোগ করুন। এর মানে এবং বিষয়টি এমন, আপনি কর্মজীবনে সাফল্যের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অথচ উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকলেও পড়ছেন না, কিংবা আপনার লেখালেখির শখকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছেন। অথবা আপনি চাকরি করেছেন; সুযোগ থাকার পরও নিজের মেধাবৃত্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন না, আপনি পড়ে আছেন অন্ধ কুটিরে। ফলে সাফল্য আপনার জীবনে নেই, আসবে না এবং একটি মাত্র উপায়ে আসেনি কোনদিন।

৭) ভয় বনাম জড়তা মানুষের জীবনে ভয় কিংবা জড়তা থাকতে নেই। ভয় কিংবা জড়তা থাকলে সৃষ্টিশীল মানসিকতাকে স্থিমিত করে ফেলে। চলার পথ এবং গতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ভয়, জড়তায় জড়িয়ে আপনি সবার সামনে কথা বলতে ভয় পান; আবার যা বলতে চান তা ঠিকমতো বলতে পারেন না। এভাবে চলতে থাকার ফলে আপনার সকল পদক্ষেপগুলো বাধাগ্রস্থ হতে বাধ্য। আপনাকে ‘ভয়’কে কাটিয়ে ‘জয়ে’ রুপান্তর করতে হবে এবং সফল ব্যক্তিরা তাই করে নিজের জীবনে সফলতা ছিনিয়ে এঁনেছে।

উপরোল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় আমাদের জীবনে অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত। এ বিষয়গুলো বিষয়ভিত্তিকনুসারে বুঝার ক্ষমতা আপনার আমার এক নাও হতে পারে, পার্থক্য শুধু সেখানেই। ফলে বিষয়টি বুঝার জন্য ঠান্ডা মাথায় এবং সময় করে নিজেকে ঝালিয়ে নিন। জীবনে সফলতা পেতে হলে সবকিছুতে জ্যামিতিক হারে নিজে এবং নিজের মধ্যে নিচে সংক্ষিপ্তাকারে বিশ্লেষণকৃত সফলতার বীজগুলো ছড়িয়ে দিন; পাশাপাশি তাকে বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করতে হবে।

আপনি সফল হতে চান? তাহলে প্রথমেই আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে যান আজ এবং এক্ষুনি। যদি আপনার জীবনের লক্ষ্য হয় আপনি গাড়ী চালাবেন, তাহলে বিশ্বাস করুন আপনি গাড়ী চালিয়েই সফল হবেন। আর যদি আপনার লক্ষ্য থাকে আপনি বিমান চালাবেন হবেন; তাহলে লক্ষ্য সে রকম উঁচুতেই রাখবেন। আপনি যদি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী এগোতে পারেন, তাহলে আপনার চাইতে সফল আর কেউ হতে পারবে না। সবচাইতে বড় কথা- আপনি সফল এবং সুখী হবেন। আপনার চিন্তা-ভাবনাকে প্রশস্ত করুন। মনে রাখতে হবে- কোনো কাজই ছোট নয়। এবং যেকোন কাজের মধ্যেই সফলতা অর্জন করতে পারলে সম্মান এমনিতেই আসে। আজ অথবা কাল সেই আপনি হয়ে উঠবেন রাজপথে পূজার মূর্তি।

 লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভপেজ ডেভেলপার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার, ব্লগার এবং
সাহিত্য কর্মী  lchiran76@gmail.com