টাঙ্গাইল, মধুপুর প্রতিনিধি:  টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় পুলিশ প্রশাসন ও এলাকা কিছু কুচক্রি মহলের বিভিন্ন বাঁধা উপেক্ষা করেও গারো ছাত্র সংগঠন বাগাছাস, আজিয়া, গাসু, ও বাঙালি আদিবাসী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ এবং স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে মধুপুর উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। কর্মসূচিটি আজ মঙ্গলবার সকালে জলছত্র ২৫ মাইলের মহাসড়কে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছাত্র সংগঠন ও এলাকাবাসীসহ প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মী প্রতিবাদে সামিল হয়।

বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন আজিয়ার মহাসচিব শ্যামল মানখিন এবং সভাপতিত্ব করেন আজিয়ার আহ্বায়ক মিঠুন হাগিদক। এতে সংহতি বক্তব্য রাখেন, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদ সভাপতি লিঙ্কন ডিব্রা, মধুপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সানি মারাক, মধুপুর উপজেলা গাসুর সভাপতি ইব্রীয় মানখিন, মধুপুর উপজেলা শাখা বাগাছাসের সাবেক সভাপতি বিজয় হাজং, এবং ভিক্টিম বা পরিবারের পক্ষ থেকে সংহতি বক্তব্য রাখেন চন্দনা মাংসাং প্রমূখ। সমাবেশে স্মারকলিপি পাঠ করে শুনান আজিয়ার মহাসচিব শ্যামল মানখিন।

সংহতি বক্তেব্যে গারো ছাত্র নেতা লিংকন ডিব্রা বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় কিছু গোষ্ঠী বাঙ্গালী ও আদিবাসীদের সহাবস্থানকে বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির নীল নকশা করে চলেছে, পায়তারা করছে।‘ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘এ সমাবেশকে বানচাল করার জন্যে হুমকি-ধামকি এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে, যা দু :খজনক।‘

পরিবারের পক্ষে চন্দনা মাংসাং দাবি করেন, এডুওয়ার্ড প্রিন্স একজন নিরাপরাধ। সত্য কথা বলে বা লিখে এটাই কি তার অপরাধ ? গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়, আমরাই তাদের নির্বাচন করি। কিন্ত সে ব্যক্তিগত আক্রোশে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার প্রতি এ ব্যবস্থা নিয়েছে। চেয়ারম্যান নিজে নিজ এলাকার ভাই, মা বোনদের মান সম্মান রক্ষা করতে জানেন না, তিনি কি জনসেবা দিবে ? তিনি আসলে একজন ডাকাত, তা না হলে প্রিন্সের মরটর সাইকেল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় কেন বলে তিনি তার সংহতি বক্তব্যে অভিযোগ করেন।

ঐ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আদিবাসী, জনবান্ধব নয়। ফলে ইউপি চেয়ারম্যান (৯ নং অরণখোলা) ও আওয়ামী লীগ নেতা রহিম আহমেদ এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্ত করে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণসহ গণমাধ্যম কর্মী নিরাপধ এডুওয়ার্ড মাংসাং এর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার এবং অন্যান্যদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। এদত বিষয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ছাত্র নেতারা।

উল্লেখ্য গত ১৮ আগস্ট ২০০২১, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নে প্রিন্স এডওয়ার্ড নামে এক আদিবাসী গণমাধ্যমকর্মীকে গাছে বেঁধে মারপিট করে; এবং এরপর ১৯ আগস্ট ২০২১ তার বিরুদ্ধে মিথ্যো মামলা (সূত্র : মামলা নং ১৯, মধুপুর থানা, মামলা রুজুর তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২১) করে জেল হাজতে পাঠায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (৯ নং অরণখোলা) ও আওয়ামী লীগ নেতা রহিম আহমেদ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান, ছবি: শ্যামল মানখিন

বিভিন্ন সূত্র হতে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যানের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জের ধরে গত রোববার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মধুপুর উপজেলা প্রতিনিধি প্রিন্স এডুওয়ার্ড বিল এলাকায় গেলে তাকে আটকে রেখে মারপিট করা। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, প্রিন্স এডুওয়ার্ড সংবাদ সংগ্রহের জন্য সকালে বিল এলাকায় এলে তাকে রহিম চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্য ও তার বাহিনী মিলে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে। এরপর মধুপুর থানা অফিসার ইনচার্জ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ অমানবিক ঘটনায় সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিরা রহিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান। বেপরোয়া রহিম চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর শাস্তি কামনা করেছেন।

শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।