বিজ্ঞান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকভাবে একজন সুস্থ মানুষের তিন জোড়া বড় ও অসংখ্য ছোট লালা গ্রন্থি থেকে দিনে গড়ে প্রায় ১ লিটার লাল নিঃসরণ হয়। যার ফলে ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় কেউবা ঘরে অথবা যেখানে-সেখানে থুথু ফেলার অভ্যাস গড়ে তোলে।
অভ্যাসে পরিনত করার ফলে এটি শুধু সামাজিক অপরাধ, অভদ্রতার বহিঃপ্রকাশই নয়, এখান থেকে অনেক সংক্রমিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে।
এই থুথু ফেলা, এবং আপনার মুখের নিঃসৃত লালা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। লালার মধ্যে ৯৮ ভাগ পানি থাকলো বাকি ২ ভাগের মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এনজাইম, মিনারেল ও জীবাণু ধ্বংসকারী বা এ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান, যা পরিক্ষীত এবং অত্যন্ত কার্যকরী।
থুথু বা লালার উল্লেখযোগ্য ৬টি উপকারি গুন
১) থুথু বা লালা পৃথিবীর সব থেকে ভালো ঔষধ। এটিতে ঔষধি গুণ প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। শরীরে যেকোনো জায়গায় কেটে গেলে বা আঘাত লাগলে সেই যায়গায় মুখের থুথু বা লালা লাগানো হলে আঘাত খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যায়, এবং রক্তপাত বন্ধ হবে।
২) মানুষের শরীরে ঘা হলে সেটি অনেক ঔষধ সেবন করার পরও ভালো হয় না। আপনি যদি সেই যায়গায় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই আপনার বাসি মুখের লালা লাগাতে পারেন তাহলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে ঘা ঠিক হতে থাকবে এবং তিন মাসের মধ্যে সেই ঘা পুরোপুরিভাবে ভালো হয়ে যাবে। প্রাণীরা তাদের ঘা এই ভাবেই চেটে চেটে শুধুমাত্র লালার সাহায্যেই ভালো করে তোলে।
৩) সকালের লালা চোখে নিয়মিত লাগালে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং যেকোনো ধরনের চশমা দূর হয়ে যায়। চোখ লাল হয়ে যাওয়ার রোগে সকালের লালা লাগানো হলে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই রোগটি ভালো হয়ে যায়। চোখের যাবতীয় সমস্যার একটি ঔষধ সকালে বাসি মুখের লালা। আপনি যদি নিয়মিত সকালের বাসি মুখের লালা লাগাতে থাকেন তাহলে আপনার চোখের সাথে রোগ জীবনে কখনো সৃষ্টি হবে না।
৪) চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার জন্য নিয়মিত বাসি মুখের লালা ব্যবহার করতে থাকুন। সকালে ঘুম থেকে উঠার ৪৮ মিনিট পরে মুখের লালার ক্ষারকীয়তা কম হতে থাকে। এইজন্য ঘুম থেকে উঠেই আগে মুখের লালা এর ব্যবহার করে চোখের নিচের কালো দাগগুলো সাড়াতে পারেন।
৫) আপনার শারীরিক যৌন সঙ্গমের আগে মুখের লালা বা থুথু যৌনিমুখে, পুরুষ লিঙ্গে মাখিয়ে যৌনসঙ্গমে মিলিত হলে মুখের লালা এ্যান্টিসেপ্টিক বা এ্যান্টি ফাঙ্গালরোধক হিসেবে কাজ করে।
৬) প্রতিদিন সকালে ১/২ গ্লাস পানি বাসি মুখের লালাসহ নিয়মিত পান করা স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত উপকারী।
এক চুমুর লালাতে কি পরিমাণ অপকার, ক্ষতিকারক ব্যাক্টোরিয়া থাকে?
চুমু ছাড়া ভালোবাসা হয় না। কিন্ত সে চুমু দিতে গিয়ে চুমুর মধ্যে দিয়ে ব্যাক্টোরিয়ার আদানপ্রদান হয়, কি পরিমাণ ব্যাক্টোরিয়া শরীরে প্রবেশ করে সে ধারণা অনেকের জানা নেই। এক গবেষণায় বলছে মাত্র ১০ সেকেন্ডের গভীর চুমুতে ৮ কোটি ব্যাক্টোরিয়া একজনের লালার সঙ্গে অন্যজনের মুখে প্রবেশ করে। যে যুগল দিনে যতবার বেশি চুমু খায় তাদের মুখের মধ্যের মাইক্রোব্যাকটেরিয়ার তত বেশি মিল থাকে।
নেদারল্যান্ডের অরগানাইগেশন ফর অ্যাপলায়েড সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষক রেমকো কোর্ট আমস্টারডামের মাইক্রোপিয়া (পৃথিবীর প্রথম মাইক্রোবসদের মিউজিয়াম)-এর সঙ্গে যৌথভাবে ২১ জনের যুগলের উপর একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে চুমু খাওয়ার সময় তাদের আচরণ, কত ঘন ঘন তারা চুমু খান এই সব প্রশ্ন সহ একটি তালিকা পূরণ করতে দেওয়া হয়েছিল এই ৪২জনকে।
এরপর প্রতি যুগলের যে কোনও একজনকে বেছে নিয়ে বিশেষ একধরণের ব্যাকটেরিয়া ভর্তি প্রোবায়োটিক পানীয় খেতে দেওয়া হয়েছিল।
এরপর তাদের সঙ্গি বা সঙ্গিনীকে ঘন চুমু খেতে বলা হয়। একবারের ঘন চুমুর পর দেখা গেছে যিনি ওই পানীয় খাননি তার মুখের লালার মধ্যে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার (ক্ষতিকারক নয় এমন ব্যাকটেরিয়া) সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হিসাব করে দেখা গেছে মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে একজনের মুখ থেকে অন্যজনের মুখে কমবেশি ৮ কোটি ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করেছে।
কোর্ট জানিয়েছেন তাঁদের এই পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে যে যুগল যত ঘন ঘন নিবিড় চুমু খান তাদের লালার মাইক্রোবায়োটা (ব্যাকটেরিয়া বসতি) একই রকম হয়।গড়ে দিনে অন্তত ৯ বার চুমু খেলে মুখের মাইক্রোবায়োটা একই রকম হয়ে যায়।
জেনে রাখুন- থুথু বা লালা পৃথিবীর সব থেকে ভালো ঔষধ। সকালে ঘুম থেকে উঠার সময়ে মুখের লালা সব থেকে উপকারী হয়; অন্য সময়ের তুলনায়। এইজন্য সকালের লালা শরীরের ভিতরে প্রবেশ করা স্বাস্থ্যর জন্য প্রয়োজন। মানুষের শরীরে গড়ে ১০০ ট্রিলিয়ন উপকারী মাইক্রোঅরগানিসম থাকে। এই মাইক্রোঅরগানিসম খাবারের পাচন, পুষ্টি সংশ্লেষ ও রোগপ্রতিরোধে অপরিহার্য। মুখের মধ্যে কমবেশী ৭০০ ধরণের ব্যাক্টোরিয় থাকে।
লালা নিঃসরণ কমে গেলে মুখসহ সমস্ত শরীরেই অস্বস্তি লাগতে পারে। মুখে জ্বালা-পোড়া করে। ঘন ঘন পানি পিপাসা লাগে। এর জন্য দিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান, চিনিমুক্ত চুইংগাম চিবানো, লালা গ্রন্থির ব্যায়াম, কৃত্রিম লালা (বাজারে পাওয়া যায়) ব্যবহার করা, নিয়ম ও নিয়মিত দাঁত ও মুখ পরিষ্কার রাখা। প্রয়োজন হলে ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নেয়া অতি জরুরি।