জীবনে ভালো কিছু অর্জন করতে হলে সকলকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। নয়তো নিজের ইচ্ছাগুলো, সম্ভাবনাময় স্বপ্নগুলো উদ্যোগের অভাবে মাঝপথে মৃত্যু ঘটবে। সবার সুন্দর স্বপ্ন, ইচ্ছাগুলো বেঁচে থাকুক অনন্তকাল। শিল্পমনা গারো তরুণ তরুণীদের এমন কিছু ইচ্ছাগুলোর যেকোনভাবে প্রতিফলন ঘটুক, প্রস্ফুটিত হোক তাঁদের প্রকৃত প্রতিভা।
এ সময়ের জনপ্রিয় ছোট পর্দার বিনোদন মানে-ই ইউটিউব। মজার ব্যাপার হলো, কেউবা এই বিনোদন থেকেই বিনোদিত হয়ে অভিনয় ক্যারিয়ারে পা রাখছেন। উৎসাহিত হচ্ছেন বিভিন্ন কভার মিউজিক ভিডিও কিংবা বিজ্ঞাপনে মডেল হতে। আবার কেউবা গুটি গুটি পায়ে এগুচ্ছেন ভিডিও প্রোডাক্টশান, প্রোডিউসার অথবা ডাইরেক্টর লেভেলে। স্বপ্রনোদিত হয়ে সিনেমেটিক ভিডিও তৈরির যন্ত্রাংশ, কলাকৌশল সম্পর্কে আয়ত্ব করছেন। স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে এ ইভেন্টে বিনিয়োগ করতে আগ্রহবোধ করছেন এমন লোকও দেখা মিলছে।
ভিডিও জগতে গারোদের পদাচরণ নতুন। নতুনত্বের বিচারে ঢালাওভাবে কিছু বলা কিংবা লেখা না গেলেও এসব কাজে হাত দিয়েছে। সে পথে হাটতে শুরু করেছে। এবং ভবিষ্যতে সে পথে অনেক দুর হাটবে সেটা বললে একেবারে অত্যুক্তি হবে না। সে কথা না বললে বরং ইনজাস্টিজ হতে পারে।
বর্তমান সময়ে ছোট পর্দায় ‘রোজ মিকি’ একটি ভাইরাল নাম। পুরো নাম রোজ মিকি রাংসা। সে মূলত ২০২১ ফেব্রুয়ারীতে ‘Chame Nang.ko Ka.sara’ কভার ভিডিও গানটিতে মডেল হিসেবে প্রথম আত্ম প্রকাশ করে। একটি মাত্র ভিডিওতেই ঝড় তোলে। দেশ ও দেশের বাইরেও সাড়া ফেলে দেয় এই গারো রোমান্টিক কভার মিউজিক ভিডিওটি। রাতারাতি মন জয় করে নেয় মিলিয়ন দর্শকের। মিলিয়ন দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া গারো তরুণীটি ন্যাশাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে। তিনি মিরপুর আইএসটিটি’তে বিবিএ ফার্স্ট ইয়ারের শিক্ষার্থী।
কিছু দর্শক শ্রোতার অনুরোধে এই গারো তরুণ মডেল কন্যার জার্নি এবং পেশাদারিত্ব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। আর যে কথা সেই কাজ। ভার্চুয়্যালি সরাসরি কথা বলেন আ.বিমা টাইমসের সম্পাদক এবং প্রবাসী সাংস্কৃতিক কর্মী লুই সাংমা। বেড়িয়ে এলো মডেল হওয়ার পেছনে তার লুকিয়ে থাকা কিছু সংক্ষিপ্ত গল্প। গল্পে অল্প নয় বরং গল্প বাড়ে। তবে গল্প আর নয়, বলছিলাম গারো মডেল কন্যা মিকির কথা- ‘একটি ভিডিওতেই কীভাবে পেলে মিলিয়নেরও বেশি ভিউস ?’
শ্যূটিংয়ের চিত্র : গারোহাব মিউজিক ভিডিও ২০২২
এ প্রশ্নের জবাবে সে বলে, ‘প্রথমে অভিনয় বা মডেলে আগ্রহ ছিল না। এক বন্ধুর উৎসাহতে প্রথম ভিডিওতে মডেল হিসেবে কাজ করি। সে ভিডিও ও দর্শকশ্রোতার ফিডব্যাক বা সাফল্য এ কাজ করতে আরও আমাকে উৎসাহিত করছে।‘ এরপর কোন ভিডিও নিয়ে কাজ করেছো ? উত্তরে সে বলে, ‘এরপর একটি হাজং গানে মডেল হিসেবে একই ইউটিউব চ্যানেলে কাজ করেছি; কিন্ত সে ভিডিওতে তেমন সফল হতে পারে নি। কারণ হাজং জনগোষ্ঠীর গানে দর্শকশ্রোতাও কম।‘
মিকির কথা আমাকে আরও গভীরে যেতে বাধ্য করলো। সেখানে দেখলাম, মানুষের ছোট ছোট আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবে যখন এক এক করে রুপ নেয়, এ যেন পরম পাওয়া এবং বাকী পথ এগিয়ে যাওয়া অজস্র প্রেরণা দেয়। শুরু হয় শিল্পী রথের যাত্রী হিসেবে। আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় মানবরূপি দেবতা। এরপর জানতে চাইলাম, ‘তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা আরও কি ?’ সে বলে, ‘আমি পড়াশুনার পাশাপাশি এ ধরণের মডেল, অভিনয় করতে চাই। গারো জাতিসত্তার জন্যে আরও প্রাণ ভরে কাজ করতে চাই, ভালো কিছু দিতে চাই।‘ তার এ কথাগুলো গারো জাতিসত্তার যে কারোর মনে দাগ কাটবে। এ যুগে এমন উত্তর কম পাওয়া যায়। তার নিজ মুখে গারো জাতিসত্তার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার সুর বোধকরি কারোর ঠাহর করতে একটুও অসুবিধা হবে না। ‘গারোহাব পরিবারের নতুন মিউজিক ভিডিওতে কাজ করতে কেমন লেগেছে ?’ এক কথায় উত্তর ‘ভালোই’। অর্থাৎ ‘পরিকল্পিত স্ক্রীপ্ট, সাবলীল পরিচালনা, সহযোগিদের সহযোগিতা সব মিলিয়ে অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল।‘ ‘মডেলে কোন বিষয়টি বেশি প্রধান্য দাও ?’ এর উত্তরে বলে, ‘এক্সপ্রেশান, মেকআপ, এবং কোস্টিউম প্রাধান্য দিয়ে থাকি, যা দর্শক শ্রোতাদের দ্রুত আকৃষ্ট করবে।‘
দর্শকদের চাওয়া মাথায় রেখে পারফেক্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারলে দর্শক শ্রোতাদের মন জয় করা যায় এবং শিল্পী সত্তার জরুরি একটি বিষয়। মিকির এবারের মিউজিক ভিডিওতে জুটিতে রয়েছে নতুন গারো তরুণ শিল্পী। তো তোমার ‘নতুন জুটি জেমস এম মারাক- এর সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগছে ?’ সে বলে ‘অসাধারণ এক জুটি হিসেবে পেয়েছি। একেওপরকে অল্প সময়ে বোঝাপড়া করে নিতে সহজ ছিল। সে খুব বন্ধুসুলভ এবং তার কাছে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।‘ মিকির কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ একা গড়ে না, অনেকে মিলে গড়তে পারলে বা কাজগুলো সমন্বয় করলে ভালো আউটপুট আসে। কথাটি দ্বিমতের কোনই সুযোগ নেই।
এরপর শেষের আগের এক প্রশ্ন, ‘গারোহাবের নতুন ভিডিওটিতে দর্শক শ্রোতা, বিনোদনে বাড়তি আকর্ষণ কি হতে পারে ?’ প্রত্যুত্তরে সে বলে ‘কোরিওগ্রাফি, শ্যূটিং সেটআপ, মেকআপ, শ্যূটিংয়ের স্থান নির্বাচন এবং ব্যতিক্রম ডিরেকশানসহ ভিডিও রেকর্ডিং আধুনিক সরঞ্জাম অসাধারণ সমন্বয় ঘটবে, যা দর্শক শ্রোতা, সংগীত প্রেমিদের আকৃষ্ট করবে।‘ এরপর তোমার কাছে সর্বশেষ আরেক প্রশ্ন ‘নতুন গারো প্রজন্মদের জন্য কিছু বল ?’ সবার উদ্দেশ্যে বলে, ‘সবার সাপোর্ট আর সাপোর্ট, যাতে সামনে আরও ভালো কাজ করতে পারি। গারো জাতিসত্তার ভিডিও তৈরি এবং ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।‘
জীবনে ভালো কিছু অর্জন করতে হলে সকলকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। নয়তো নিজের ইচ্ছাগুলো, সম্ভাবনাময় স্বপ্নগুলো উদ্যোগের অভাবে মাঝপথে মৃত্যু ঘটবে। সবার সুন্দর স্বপ্ন, ইচ্ছাগুলো বেঁচে থাকুক অনন্তকাল। শিল্পমনা গারো তরুণ তরুণীদের এমন কিছু ইচ্ছাগুলোর যেকোনভাবে প্রতিফলন ঘটুক, প্রস্ফুটিত হোক তাঁদের প্রকৃত প্রতিভা; যাতে একটি দলিল আমরা পেতে পারি।