আড্ডা শব্দটি বন্ধুমহলে প্রিয় একটি শব্দ। আড্ডা কার না ভালো লাগে ! আ.বিমা টাইমস পরিবারে জম্পেশ আড্ডা বলে কথা। শুধু আড্ডা নয়। আজকের আলাপচারিতায় বেরিয়ে এলো জানা অজানা পেছনের কথা, গহীনের ভাবনা। বেরিয়ে এলো গারো জাতিসত্তার দিন বদলের কথা। বদলে যাবার ইতিবাচক ইঙ্গিত। সময় স্বল্পতায় আড্ডা যেন ফুরোতেই চায় না। জম্পেশ আড্ডা কখনো ফুরোয় না। আজকের ভার্চ্যুয়াল আড্ডাবাজ আ.বিমা টাইমস নিউজ২৪ ডট কম- এর সিনিয়র অ্যথর জনাব লুই সাংমা (ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী) এবং আমাদের সম্মানীত বন্ধুবর স্নেহভাজন অতিথি জনাব কার্তিক ঘাগ্রা (দাকবেওয়াল প্রকাশনী)।
আ.বিমা টাইমস২৪: হ্যালো, আপনি কেমন আছেন?
কার্তিক ঘাগ্রা: মোটামুটি।
আ.বিমা টাইমস২৪: কোভিড-১৯ সময়কে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কার্তিক ঘাগ্রা: শুরুর দিকে লোকেরা গসিপ করছিল, সরকার কোভিড-১৯ বিষয়কে গোপন করছে। ভেতরের তথ্য সত্য জনগণকে জানতে দেওয়া হচ্ছে না। যেকোন মূল্যে মুজিব বর্ষ সফল করতে চেয়েছে। আমি তখন কলমাকান্দায়। গীতিকার সুরকার ফরিদ জাম্বিল ও চাকলা হাগিদক নিজেদের সুরে গারো ভাষার নতুন গান গেয়েছে। এরই ফাঁকে ফাঁকে আলাপচারিতাও জম্পেশ হয়েছে। তবলা বাদক সুজন জেংচাম (তবলার তাল লয়ে ঢের ঋদ্ধ একজন) তিনিও তাঁর অভিজ্ঞতার ভান্ডার মেলে দিয়েছে। সাথে তর্পণ ঘাগ্রা, যিনি গারোদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে সাতাশ-আটাশ বছর ধরে কাজ করছেন। তখন একজন ফোন করে জানালো, সারাদেশের যান চলাচল বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দেওয়া হবে। মিল কারখানা ও গার্মেন্টস সেক্টর বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুনে আমি যারপরনাই শঙ্কিত। সিদ্ধান্ত নিই, রাতেই গাজীপুর ফিরব। চারিদিকে তখন আতঙ্ক। আমি সারাক্ষণ টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে। বাইরে প্রশাসনের লোক মাইকে কোভিড-১৯ সম্পর্কে এলাকাবাসীদের সাবধান করছে। সবমিলিয়ে সময়টাকে মনে হচ্ছিল জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে। গার্মেন্টস মিল ফ্যাক্টরি বন্ধ। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যতিরেকে সব দোকান-পাট বন্ধ। যান চলাচল বন্ধ। চলাফেরায় বিধি-নিষেধ আরোপ। তিন মাসের অধিক সময় ধরে আমি বাসায়। কোথাও যাই না, বেরোই না। এর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও নানা সংকটের সম্ভাবনা। ঢাকায় গারোদের অবস্থার অবনতি। অনেকেরই চাকরি নাই। কাজ শূন্য। বিউটি পার্লারগুলোতে যে মেয়েরা কাজ করত তাদের পরিণতি আরও ভয়াবহ। এর মধ্যে অনেকেই কপর্দকশূন্য। আমরা যে একটা অথর্ব জীবনযাপন করছিলাম এতদিন এতকাল ধরে, করোনা যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে টের পাইয়ে দিচ্ছিল। দেশ, সমাজ ও আমরা যে কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি এই বোধ-বাস্তবতা আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়িত করছিল। এরকম একটা সময় এই জেনারেশন বা আমরা আগে দেখি নি, রাতের অন্ধকারে মাল-সামানা নিয়ে অগণিত মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে।
আ.বিমা টাইমস২৪: করোনা ভাইরাসে দিনকাল, লেখালেখি এবং আপনার প্রকাশনা কেমন যাচ্ছে?
কার্তিক ঘাগ্রা: শুরুর ক’টা মাস আমি বাসাতেই থেকেছি। আর ভেবেছি, করোনা সংকট হয়ত ক’মাসেই কেটে যাবে। ওই সময়টাতে আমি ছোট ছোট ইনকাম সোর্স কিভাবে বের করা যায় এ নিয়ে ভেবেছি। আর সুযোগ যদি চলেই আসে তর্পণ ঘাগ্রার ‘ডিককি বানডি’ ও একটি প্রবন্ধের বই পাবলিশের জন্য রেডি করে রেখেছি। আর লেখালেখি অর্থে আমি আসলে ওইভাবে লিখি না, ছোট ছোট নোটের মতো নানা বিষয়ে টুকিটাকি লিখে রেখেছি।
আ.বিমা টাইমস২৪: একটা সময় আপনি কবিতা লিখতেন, কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে; তো এখন লিখেন না কেন?
কার্তিক ঘাগ্রা: আমার কবি বন্ধুদের আমি প্রায়ই বলতে শুনতাম, লেখালেখিতে কেউ কেউ টিকে, কেউ কেউ টিকে না; কেউ কেউ একেবারে হারিয়ে যায়। আমার বেলাতেও এটা হয়েছে।
আ.বিমা টাইমস২৪: আপনার দাকবেওয়াল প্রকাশনা গড়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলুন এবং এ পর্যন্ত কতটা, কাদের লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে?
কার্তিক ঘাগ্রা: বাস্তবে এ নিয়ে উল্লেখ করার মতো কোন উদ্দেশ্য নেই। বেশ ক’জন গারো লেখকদের সাথে আমার সু-সম্পর্ক ছিল, দীর্ঘদিন আমি দেখে আসছিলাম তাঁরা লিখছেন কিন্তু কোন গ্রন্থ নেই। এ বিষয়ে তাঁদের মনোযোগ আকর্ষণ করলে তাঁরা বলতেন বই বের করার সামর্থ্য তাঁদের নেই। পৃষ্টপোষকতাও নেই। আমি ভাবলাম, বছরে দু’একটি গ্রন্থ পাবলিশ করলে কি এমন যায় আসে! এভাবেই থমাস স্নাল অনূদিত জবাং ডি মারাকের ‘গারো আইন’ ও তাপস্রাং সরোজ ম্রং-এর ‘সোনারাম আর সাংমা সাগিনি কাৎথারাং’ বই দু’টি পাবলিশ শুরু করি। এখন অব্দি ছয়টি গ্রন্থ পাবলিশ করেছি। শুরুর দু’টি ছাড়া হেমার্সন হাদিমার চেঙো মিজাও, বিভা ম্রং-এর গারোদের উৎসবাদি ও জীবনবোধ, মনীন্দ্রনাথ মারাকের গারো সংস্কৃতি ও তর্পণ ঘাগ্রার গিৎচাম কাৎথা।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারোদের মধ্যে দাকবেওয়াল প্রকাশনী, আ.বিমা প্রকাশনী (কিছু গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়) এবং থকবিরিমসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশানার নাম শোনা যায়, অন্যদের তুলনায় দাকবেওয়াল প্রকাশনার বিশেষত বা ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্যগুলো কি?
কার্তিক ঘাগ্রা: এরকম তুলনা বা বৈশিষ্ট্যের ভাবনা আমার মধ্যে নাই। আমার ভাবনাগুলো খুবই সাধারণ অথবা ওগুলো ভাবনা অর্থে কোন ভাবনায় না। অথবা এ বিষয়গুলো আমি ঠিক বুঝিই না। কেউ কেউ বলেন, আপনি মোড়ক উন্মোচন করেন না! অন্তত পরিচিতিটা বাড়ত। খেয়াল করে দেখলাম, এ ধরনের আড়ম্বরতা, বা, আরও স্পষ্ট করে বললে স্ট্যান্ডবাজিতা আমাকে তাড়িত করে না। আর আমি নিজেকে প্রকাশক বা এরকম কিছু ভাবতেও রাজি না। আমার যেটা মনে হয়, ব্যক্তি হিসেবে আমার সমাজের প্রতি, জাতির প্রতি একটা রেসপন্সসিবিলিটি থাকা চাই, সেই রেসপন্সসিবিলিটিটুকু আমি ছোট ছোট পরিসরে নিজের মতো করে সেরে নেওয়ার চেষ্টা করি।
আ.বিমা টাইমস২৪: প্রকাশনায় প্রধানত কোন কোন দিকটা বেশি প্রাধান্য দিতে হয় বলে আপনার মনে হয়, এবং আপনার অভিজ্ঞতা কি বলে?
কার্তিক ঘাগ্রা: কখনো কখনো আমার মন আমাকে জোর সায় দিয়েছে গারোদের বই পাবলিশ করে দিই। আর এটা হচ্ছিলও না। যেগুলো হচ্ছিল ওগুলোতে আমাদের খোরাক তৈরি হচ্ছিল না। মনে হতো, এগুলো কী হচ্ছে? যাদের লেখা পাবলিশ হওয়া জরুরি তাদেরটা তো হচ্ছে না! এখন এটাই করছি, যাদের লেখা পাবলিশ হওয়া জরুরি, যাদের লেখা গারো জাতিসত্তার লোকদের জন্যে আগে জরুরি।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারো প্রকাশনী গড়ার নামে আর্থিক অনিয়ম, বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে আর্থিক বকেয়া, প্রকাশিত গ্রন্থের মান এবং পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আপনি একজন এ প্রজন্মের প্রকাশক হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
কার্তিক ঘাগ্রা: সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে খবর রটেছিল, তখন অনেকেই আমার মত জানতে চেয়েছিল, আমি তাদের বলেছিলাম, এ বিষয়ে কথা বলার রুচি আমার নাই। আপনি নিজেও একবার বলেছিলেন, ক্লেমেন্ট রিছিল অনূদিত সি ডি বলডুইনের ‘গারো আইন’বই পাবলিশ করার জন্য ষাট হাজার টাকার হিসেব দিয়েছে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক )। আমি আপনাকে বলেছিলাম, জবাং সাহেবের সাড়ে চার ফর্মার বই আমি ৩৭ হাজার টাকায় ছাপিয়েছি। সি ডি বলডুইনের বই তিন ফর্মার। এটা কিভাবে সম্ভব? আর প্রকাশ সংখ্যাও নিশ্চয়ই সে আমার চেয়ে বেশি করে নি। যে বিষয়টা বলতেছিলেন, জনজাতির কণ্ঠ এ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ করেছিল। পরে এটাকে কেন্দ্র করে পরাগ রিছিল জনজাতির কণ্ঠ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এটা ছিল আরও বেশি অপ্রত্যাশিত। পরাগ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি অবিচার করেছে। নৈতিকতাকে সামনে এগিয়ে না নিয়ে সে উল্টো সরে গেছে। সত্যি কথা হলো, অনেকেই ব্যক্তির লেবাস চেনে, কিন্তু আসল ব্যক্তিকে চেনে না। মিরপুরের আইজেবি প্রিন্টার্সের একাউন্টেন্ট একবার আমাকে বলে বসল, দাদা, আপনাদের গারোদেরকে মনে করেছিলাম ভাল, এখন মনে হচ্ছে অত ভাল না। আমি বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, একথা বললেন কেন? উনি বললেন, পরাগ রিছিল ও সুমনা চিসিমের বই করার বিপরীতে প্রকাশনীর কাছে তারা বেশ ভাল অংকের টাকা পান। কয়েক বছর হয়ে গেল সে টাকা পরিশোধ করছে না, যোগযোগ করার চেষ্টা করলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকাশক নাকি তাদের জানিয়েছিল, বই করার জন্য সুমনা চিসিম ও পরাগ রিছিলের টাকা দেওয়ার কথা ছিল তারা টাকা দেয় নি। না দিলে সে কোত্থেকে দেবে! লেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই পাবলিশ করার এই বাটপারিটা দিনশেষে প্রকাশকদের কেন করতে হবে?
আ.বিমা টাইমস২৪: দাকবেওয়াল প্রকাশনীর উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যগুলো কি কি? প্রকাশনীর ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?
কার্তিক ঘাগ্রা: আমার ভেতরে এরকম ফর্দ বা তালিকা নেই। বেসিক্যালি আমি চাই যে আমরা আমাদেরকে, নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও পৌরাণিক কথা-কাহিনীগুলোকে যেন জানি, নিজেদেরকে যেন বিকশিত করি, মেলে ধরি, আর এ জন্য সবচেয়ে ভাল ও উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো বই। এ জাতীয় গ্রন্থই আমি ভবিষ্যতেও পাবলিশ করে যেতে চাই।
আ.বিমা টাইমস২৪: যেকোন প্রকাশনা বা লেখকের ক্ষেত্রে কোনটা জরুরী, বই সংখ্যা; নাকি বইয়ের মান?
কার্তিক ঘাগ্রা: মান, মান এবং মান।
আ.বিমা টাইমস২৪: দাকবেওয়াল প্রকাশনীর পাঠক ও খু.রাং পত্রিকার গ্রাহক সাড়া আমার কাছে গারোদের গড়া অন্যান্য প্রকাশনী, পত্রিকার চেয়ে ঢের বেশি, এর কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?
কার্তিক ঘাগ্রা: সর্বদা আমরা চাই যে পাঠকদের কাছে, সমাজের অভ্যন্তরে কিছু বার্তা দিই। পাঠক নতুন কিছু পড়ুক, নিজেদেরকে আবিষ্কার করুক, নিজেদেরকে জানুক।
আ.বিমা টাইমস২৪: দেশে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় প্রতি বছর গারোদের বই প্রকাশ, মান আপনার কাছে কি বলে মনে হয়?
কার্তিক ঘাগ্রা: খুশির কথা যে এখন ফি-বছরই বই প্রকাশ হচ্ছে। সেসব যদিও আমার হাতে সব পৌঁছোয় না। আর মান নিয়ে আমরা বোধহয় অত ভাবি না। একবার থিওফিল নকরেকের বই কেউ একজন আমাকে পড়তে দিয়েছে, আমি পৃষ্টা উল্টে উল্টে কিছু কিছু পড়েছি। পরে তাকে বললাম, এ বই পড়া আমার উচিত না। পৃষ্টায় পৃষ্টায় বাক্য গঠনে ও বানানে অসংখ্য ভুল। আর এটা খারাপ সম্পাদনার কারণে হয়।
আ.বিমা টাইমস২৪: মন গড়া নয়; গারোদের সঠিক ইতিহাস রক্ষায় একটি মান সম্পন্ন, নিরপেক্ষ প্রকাশনী, এবং পত্রিকা থাকা জরুরী, যা গারোদের দলিল হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে; এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি ?
কার্তিক ঘাগ্রা: আপনার এ কথা বা প্রশ্নের সাথে আমি একমত।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারো প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোন কোন মৌলিক বিষয়গুলো থাকা জরুরী?
কার্তিক ঘাগ্রা: প্রথমত পাণ্ডুলিপি নির্বাচন। তারপর গারো প্রকাশনাগুলোতে যেটা চোখে পড়ার মতো সম্পাদনার দুর্বলতা ও মার্কেটিং। এ তিনটি বিষয়ে মনোযোগী হওয়া চায়।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারো প্রবীণ এবং বর্তমান গারো লেখকদের লেখালেখির মান; ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে কিছু বলুন?
কার্তিক ঘাগ্রা: এ বিষয়ে আমি বলতে চাই না। আমার মতে ভেতরে লেখকসত্তা থাকলে সে আপনিই ঠিক হয়ে যায়। আর মান- সে তো প্রথমেই নিজের কাছে ধরা দেয়, যে লেখে তার কাছে।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারোদের মধ্যে হাতেগুনা কয়েকজন লেখালেখি করলেও খোদ গারো ভাষায় লেখালেখি করেন মাত্র দু’য়েকজন, অর্থাৎ বেশিরভাগ লেখক বাংলা হরফে, বাংলায় লেখেন। এছাড়াও বেশিরভাগ লেখকদের দেখা যায় নিজ মাতৃভাষা গারো ভাষায় লিখতে এবং কথা বলতেও ঠিক মতোন পারেন না, এ বিষয় আপনার বক্তব্য কি?
কার্তিক ঘাগ্রা: দু’একজন আছেন, যাদের সাথে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। তারা আচিক ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছেন, লিখেছেন, কিন্তু পাঠকদের কাছে সেসব লেখা গ্রহণযোগ্যাতা পায় নি। আমার মনে হয় পাঠকদের সেই গ্রহণক্ষমতা নেই। তারা এখন বাংলায় লিখছেন, গারোদেরকে গারোদের বিষয়ে জানাতে পারছেন। অন্যদিকে একজন লেখক, সে গারো হলেও, তাকে গারো ভাষাতেই লিখতে হবে এই বলাটা সুবিবেচনা প্রসূত না, অন্তত লেখালেখির ক্ষেত্রে না। তবে গারো ভাষায় হলে গারো ভাষা সমৃদ্ধ হতো। আর গারো হয়ে গারো ভাষা না জানাটা অবশ্যই দোষের।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারো লিখিয়েদের লেখালেখি দেখে ভালো লাগে, আবার পক্ষান্তরে মানহীন বই প্রকাশ এবং শুধুই প্রতিযোগিতা বলে মনে হয়, আপনার মতামত কি?
কার্তিক ঘাগ্রা: প্রতিযোগিতা আছে বলে আমার মনে হয় না। হলে এতদিনে গারো লিখিয়েদের নিজস্ব স্বর ও ঘরানা তৈরি হতো।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারো প্রকাশনীর পাশাপাশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, লেখালেখির ব্লগের সংখ্যাও দিনকে দিন বাড়ছে, বিষয়টি আপনার কাছে কেমন লাগে?
কার্তিক ঘাগ্রা: যদিও এটা ইতিবাচক এবং আমারও সমর্থন থাকা উচিত কিন্তু বাস্তবে দু’একটা পড়ার আমি চেষ্টা করি, পরে আর পড়ি না। মনে হয়, ভাল করার চেষ্টা বা রেসপন্সসিবিলিটি আমাদের মধ্যে থাকে না। কিংবা ভাল করার গুণ আমাদের মধ্যে নাই।
আ.বিমা টাইমস২৪: গারোদের সঠিক ইতিহাস রক্ষার্থে গারো লেখক, পাঠকদের করণীয় কি বলে মনে করেন?
কার্তিক ঘাগ্রা: আমাদের সবকিছুই (ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রথা এক্ট) মুখে মুখে বা অলিখিতভাবে চর্চিত ছিল। আর বাৎসরিক মাহারি মিটিং-এ এসব নিয়ে আলোচনা হতো, শেখানো হতো, ভুল সংশোধন করে দেওয়া হতো। সেই ধারা বা চল এখন নেই। এখন এসব লিপিবদ্ধ করে রাখার সময়। আর লোকেও এখন গারোদের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতেও প্রথমেই গ্রন্থের দ্বারস্থ হয়।
আ.বিমা টাইমস২৪: বর্তমানে গারো লেখকদের মধ্যে সমন্বয় কিংবা সমমনা নেই, আপনি কি বলেন?
কার্তিক ঘাগ্রা: আমার কাছে সমন্বয় সমমনা থাকাটা জরুরি নয়, যেটা জরুরি সেটা হলো পরিপূর্ণ লেখক হওয়া। গারো সমাজে গারো লেখক কবিদের চিন্তার কোন প্রতিফলন নেই।
আ.বিমা টাইমস২৪: সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা যায় বেশি সংখ্যক গারোরা কোন তথ্যবহুল আর্টিক্যাল না পড়ে; অপ্রয়োজনীয় তথ্য, সমাজে অকল্যাণকর বিষয়গুলো আত্মস্থ, আগ্রহ এবং গণহারে শেয়ার করে, আপনার মতামত বলুন?
কার্তিক ঘাগ্রা: এটা পশ্চাৎপদ ও পিছিয়ে থাকা সমাজের লক্ষণ। সমাজ যে এগোচ্ছে না, সমাজের মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও মননের জায়গা যে ফাঁকা এটা তারই লক্ষণ।
আ.বিমা টাইমস২৪: সর্বশেষ প্রশ্ন, লেখালেখি এবং সঠিক জ্ঞানার্জনে কোনটা আগে জানা জরুরী, গারোদের ইতিহাস; নাকি অন্য- গারো তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে কিছু বলুন?
কার্তিক ঘাগ্রা: ইতিহাসের সাথে অবশ্যই প্রথা ঐতিহ্য মিথ বা লোকবিশ্বাসে দখল থাকা চায়। আমার মনে হয় যে, আমাদের প্রথা ঐতিহ্য ও লোকবিশ্বাসগুলো আমাদের শিষ্টাচার শেখায়, সত্যবাদী ও বিনয়ী হতে শেখায়, সর্বোপরি একজন প্রকৃত ও সমৃদ্ধ মানুষ হতে দীক্ষা দেয়। আজকের তরুণরা যেন এ সুযোগ ও আধার থেকে নিজেদের বঞ্চিত না করে।
আ.বিমা টাইমস২৪: আপনার মূল্যবান তথ্য এবং সময়ের জন্য আ.বিমা টাইমস পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিরাপদে এবং ভালো থাকুন।
কার্তিক ঘাগ্রা: আপনাকেও, আ.বিমা টাইমস২৪ পরিবার দীর্ঘজীবী হোক।