আধুনিক সমাজে ব্লগ পেইজ এবং ওয়েবসাইট আমরা কমবেশি ব্যবহার করি। আজকাল এসব ছাড়া একেবারেই চলে না, আপনার জীবন পুরো অচল। কিন্ত আমরা কেউ ব্লগ এবং ওয়েবসাইট কি, এবং এর দুটোর পার্থক্য খুঁজার চেষ্টা করিনি, হয়তোবা হয়ে উঠে না। অথচ এ যুগে আমরা দিনের পর দিন তা ব্যবহার করি, চোখ রাখি এসব পেইজগুলোতে। কেউবা কৌতূহল বসত জ্ঞান আহরণের জন্য; আবার কেউবা নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু, পোশাক-আশাক কেনাকাটার জন্য। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই, তা সহজে অনুমেয়। কিছুটা ধারণা থাকলেও দুটো বিষয়কে একেবারে গুলিয়ে ফেলি।

তথ্য প্রযুক্তির তথা ইন্টারনেটের যুগে ওয়েবসাইট, ওয়েবপেজ, ব্লগ এবং ব্লগিং পৃথিবীর জ্ঞান পিপাষুদের চাহিদার অনেকাংশ তথ্য যোগান দেয়। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে আপনার ব্যবহৃত স্মার্টফোন, কম্পিউটার, আইপ্যাড দিয়ে বিভিন্ন তথ্যগুলো পেতে পারেন। গতানুগতিক লাইব্রেরীতে না গিয়ে আপনি ঘরে বসেই আপনার জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারেন নি:সন্দেহে।

উপরোল্লেখিত তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দুটো বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেও অনেক সময় স্বজ্ঞানে এড়িয়ে যাই। আসলে ব্লগ পেইজ এবং ওয়েভ সাইট এর মধ্যে পার্থক্য কি- দুটোর ফিচার দেখতে প্রায় একই হলেও বেসিক কাষ্টমাইজ এবং কাজের বৈশিষ্টের দিক থেকে এ পার্থক্য যথেষ্ট লক্ষ্য করা যায়; যা আমার এই ব্লগ পোস্টে আপনার দেখতে পাবেন এবং বোধ করি বিষয়টি বুঝতে সহায়ক হবে।

প্রথমেই এ দুটোর মূল যে বিষয় আর সেটি হলো ব্লগ পেইজ এবং ওয়েভস সাইট তৈরির জন্য ডোমেইন এবং হোস্টিং এর প্রয়োজন হয়, পার্থক্য শুধু উদ্দেশ্য এবং ব্যবহারে।

ব্লগ পেইজগুলোও এক ধরণের ওয়েবসাইট। ব্লগ এবং অন্যান্য ধরণের ওয়েবসাইটের মধ্যে একমাত্র আসল পার্থক্য হলো ব্লগগুলি নিয়মিতভাবে নতুন বিষয় আপডেট হয়, যা বিপরীত কালানুক্রমিকনুসারে প্রদর্শিত হয় অর্থাৎ নতুন পোস্টগুলি প্রথম সারিতে শো করে থাকে।

সাধারণ ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো সচরাচর স্থির থাকে; যেখানে ড্যাটা এবং নিবন্ধ পৃষ্ঠাগুলিতে প্রায়শই আপডেট হয় না। যদিও কোনও ব্লগ প্রচুর গতিশীল থাকে এবং ঘন ঘন আপডেট হয়। কিছু ব্লগার দিনে এক বা একাধিক নতুন নিবন্ধ প্রকাশ করে।

ব্লগগুলিও একটি বৃহত্তর ওয়েবসাইটের অংশ হতে পারে। এছাড়াও প্রায়শই কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্লগ বিভাগ থাকে, যেখানে তারা নিয়মিতভাবে তাদের গ্রাহকদের অবহিত এবং ব্যবহারের জন্য পণ্য সামগ্রী তৈরি করে।

একটি ওয়েবসাইট এবং ব্লগ উভয়ই তৈরি করতে কোডিং অথবা ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে থাকেন। ব্যবসায়িক, কর্পোরেট সাইট এবং ব্যক্তিগত ব্লগিং এর জন্য ছোট, বড় ওয়েবসাইট তৈরি করতেও এটি ব্যবহার করে থাকে।

মোদ্দা কথা, সমস্ত ব্লগ একটি ওয়েবসাইট বা কোনও ওয়েবসাইটের অংশ হতে পারে। তবে সমস্ত ওয়েবসাইটকে ব্লগ বলা যায় না।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, কিছু কিছু ব্লগ এবং একটি ওয়েবসাইটও বটে। এসব ওয়েবসাইটগুলোতে বিভিন্ন বিষয়বস্তু রয়েছে এবং যোগাযোগের পৃষ্ঠাগুলির মতো সার্চের অংশ থাকে যা একটি অ-ব্লগ ফর্ম্যাটে প্রকাশিত হয়। এবার দেখুন একটি উদাহরণটি, এবং দুর্দান্ত ওয়েবসাইট নামে পরিচিত। এটি একটি ব্যবসায়ের ওয়েবসাইট, যেমন www.squarespace.com, www.siteground.com ইত্যাদি।

একটি ব্লগ বা অনুক্রমিকভাবে প্রকাশিত হয়। একটি ব্যবসায়ের বিষয়ে তথ্য সংগঠিত এবং উপস্থাপন করতে পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করে এবং একটি পরিচিতি ফর্ম যুক্ত করে ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করে থাকে।

আপনি এটিও বলতে পারেন যে ব্লগগুলিতে বিভাগ এবং ট্যাগগুলি ব্যবহার করে সংগঠিত করা নিবন্ধগুলিও থাকে। অন্যদিকে, ওয়েবসাইটগুলি সামগ্রীগুলি সংগঠিত ও প্রদর্শন করতে পৃষ্ঠাগুলি ব্যবহার করেন।

সাধারণত ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ব্যবহৃত হয়। আর ব্লগ সাধারণত ব্যক্তি এবং সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকে। এর উদ্দেশ্য হল একজন ব্যক্তি নিজের মতো করে, খেয়াল খুশি মতো যখন তখন নতুন নিবন্ধ পোস্ট বা শেয়ার করতে পারে। ওয়েবসাইটে এমনটা করা যায় না। এছাড়াও হালকা ব্যাপার ওয়েবসাইটে আলোচনা বা পোষ্ট করলেও বিষয়টি দৃষ্টিকটু লাগে।

নিবন্ধনটি পড়ার পর আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন ব্লগ পেইজ এবং ওয়েবসাইট এ দুটোর মূল পার্থক্য, এমনকি এর সুবিধা অসুবিধাগুলো। আজকাল ব্লগ এবং ওয়েবসাইটগুলো অতি সহজে, দ্রুত সময়ে দৃষ্টি নন্দন করে তৈরি করা সম্ভব। ফলে এগুলো তৈরি করতে কোডিং এর বিশেষ কোন জ্ঞান প্রয়োজন হয় না। ওয়ার্ডপ্রেস এবং ওয়ার্ডপ্রেস সাপোর্ট করে এমন থিম এবং প্লাগিন ব্যবহার করে ব্লগ এবং ওয়েব সাইট তৈরি করা যায়। একটি প্রফেলশনাল ব্লগ এবং ওয়েবপেইজ তৈরি করতে কোডিং এবং ওয়েব পেইজ থিম, প্লাগিন কাস্টমাইজেশান, ইন্টিগ্রেশান সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি।

লুই সাংমা, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার এবং সাংস্কৃতিক কর্মী