শুধু মধুপুরে নয়। গোটা বাংলাদেশে ব্যক্তি অক্রোশ, সামাজিক, রাজনৈতিক বেড়াজালে আটকা। মধুপুরের বিষয়টি বোধয় আরও একটু আলাদা করে ভাবতে হবে। ভাবার অবকাশ রাখে। কারণ মধুপুরে রাজনীতি করার অনেক বিষয় রয়েছে। দেশে এবং কিছু অঞ্চলে কিছু দুরভিসন্ধি নেতা এলাকায় বন নিয়ে রাজনীতি, রাজনীতি নিয়ে বিলাসী রাজনীতি, সামাজিক, আদিবাসীদের ভূমি তথা অধিকার নিয়ে রাজনীতি এসব বিষয়তো ডালভাত, তাদের রুটিরুজির বিষয় মনে করে। চাকরির পরিবর্তে দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করে দিব্যি সংসার চালায়, এমন পরিস্থিতি জেনেও অবাক হবার মতোন বিষয় নয় আজকাল!

মাঝে মধ্যে আমি সময় পেলে এই কথাগুলোই দিনভর এবং এমন কি রাতে ঘুমোতে গেলও ভাবি। অথবা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি যে, এটা কিভাবে সম্ভব ! একজন চাকরিজীবি প্রতিদিন আট দশঘন্টা ডিউটি করে মাস শেষে যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার ঠিকমতোন চলে না। মাস শেষে তাকে ধার কর্জ করে চলতে হয়। টানাটানি সংসারে দিনাতিপাত করে দিনের পর দিন। অথচ দেশে কিছু মানুষ শুধুমাত্র ভিলেজ পলিটিক্স করে, রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি হয়ে সংসার চালায়। অঢেল সহায় সম্পত্তি করে। রাতারাতি কোটিপতি বনে যায়। এরপর এর পাশাপাশি যদি রাজনীতির কোন দল, গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাতে পদ ও পদবী পাওয়া যায় তাহলে আর তাকে ঠেকায় কে এমন অবস্থা! এমন চাক্ষুষ প্রমাণ আমাদের সমাজে আছে। আমাদের চারপাশেই  আছে। এসব লোকেরা পলিটিক্স, ভিলেজ পলিটিক্স নিয়ে রাতে ঘুমুতে যায়, আবার সকালে বিছানা থেকে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠে একই ভাবনা নিয়ে ওঠে।

রাজনীতি করা, ভিলেজ পলিটিক্স, সামাজিক নেতা, ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক উন্নতি করা ভালো। কিন্ত সেখানে যদি সুষ্ঠু রাজনীতি না থাকে তাহলে প্রত্যেকেরই কাছে সে আচরণ সমাজে তার প্রভাব অনুভব করবে। ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এমন নোংরা রাজনীতির প্রভাবে সাধারণ জনগণ, এমন কী গণমাধ্যম কর্মীরাও আজকাল বাদ পড়ে না।

গণমাধ্যম কর্মীরা সমাজে ঘটনার অন্তরালের খবর দেয়, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দুস্কৃতিকারীকে দেখিয়ে দেয় সেটাই হলো তাদের বড় অপরাধ। কলম চালানোই তার মহা অপরাধ। অথচ সমাজে রাজনীতির ছত্র ছায়ায়, নেতা, জন প্রতিনিধি হয়ে যে বড় বড় অপরাধ অপকর্মগুলো করে বেড়ায় সেটা অপরাধ নয়। সমস্যা সমাধানের নামে মোটা দাগের উৎকোচ নেয়, সমাধানের নামে অর্থ নিয়ে সমস্যাটি সমধান না করে বরং তা জিইরে রেখে কাউকে সেই একই  ফ্যাসাদে ফেলানোর অপেক্ষায় থাকে সেটি সমাজে কোন অপরাধ নয়। মোদ্দা কথা দেশের নেতা, জন প্রতিনিধিরা কোন অপরাধ করে না, করতে পারে না। যত অপরাধ অপকর্ম করে সাধারণ জনগণ, সমাজ সেবক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা!

দেশে নানা সমস্যা উপেক্ষা করেও গণমাধ্যম কর্মীরা আছে বলেই বিষয়গুলো জানতে পারেন, পড়তে পারেন। সাহসের সহিত বিষয়গুলো জনসম্মুখে উপস্থাপন করেন। স্যোশাল মিডিয়াতে বিষয়গুলো সুবিস্তারিত লিখেন। গণমাধ্যম কর্মীরা যে কাজগুলো করে সেগুলো কোন ব্যক্তি স্বার্থে নয়, বরং তা জনকল্যাণেই আসে। দেশের নেতা, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিরা আরও কত অন্যায়, অপরাধ, অপকর্ম সমাজে রয়েছে, গণমাধ্যম কর্মীর গোচরে আসে নি তা আল্লা মাবুদই ভালো জানেন !

মধুপুরে চলমান ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে দেশের নেতারা, জনপ্রতিনিধিরা রাজনীতি করে না, করবে না তা কি কেউ বুঝে ! আর কেউ না বুঝক; যারা বুঝে তারা ঠিকই বুঝে। রাজনীতি না করলেও রাজনীতি কি, রাজনীতির পানি, ভিলেজ পলিটিক্সের কোথাকার জল, কোথায় গিয়ে গড়ায়। আপনি জনপ্রতিনিধি হতে পারেন, নেতা হতে পারেন জনগণকে বাদ দিয়ে নয়। আপনার অপকর্মের পাল্লা যদি ভারি হলে ওজন মাপার বাটখারা ঠিক থাকবে না সেটা আপনিও ভালো বুঝেন।

জনসাধারণ অন্যায় করতে পারে। হাজারবার অন্যায় করতে পারে। কিন্ত দেশের, সমাজের জনপ্রতিনিধিরা অন্যায় করবে যা অনভিপ্রেত। মধুপুরে একজন ইউপি চেয়ারম্যান গণমাধ্যম ও মানবতাবাদী কর্মীকে অন্যায়ভাবে জন সম্মুখে বেদম প্রহার করে, মারপিটের ছবি আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে, মিথ্যে মামলা ঠুকে জেলে ভরে দিল, ফলে সহসায় প্রগতিশীল জনমনে প্রশ্ন জাগে- সেখানকার আদিবাসী সংগঠন নিচ্ছুপ কেন ? প্রতিবাদের আওয়াজ নেই কেন? তাহলে ধরে নিবো মধুপুরে জাতিগত অধিকার আদায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ আন্দোলন সংগ্রাম রেওয়াজ কি থেমে গেছে ? বোধ করি আদিবাসীদের সংগঠনে সংগঠনে ভিভেদ বিভাজন দায়ভার এড়াতে পারবে না। এমন যদি চলতে থাকে তাহলে আগামীতে কিছু আদিবাসী নেতারা, গণমাধ্যম কর্মীরা, সমাজ সেবকরা রাজনীতির রোষানলে পড়বে না কে এই নিশ্চয়তা দিবে ?

 লুই সাংমা, প্যারিস, ফ্রান্স
ওয়েভপেজ ডেভেলপার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার, ব্লগার এবং
সাহিত্য কর্মী  lchiran76@gmail.com