তথ্য প্রযুক্তি দিনকে দিন উন্নত হচ্ছে। প্রযুক্তিবিদ তকমা নিতে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা অ্যাপস তৈরির প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি উদ্যোগেও এসব অ্যাপস তৈরি হচ্ছে। অ্যাপসগুলোতে দিচ্ছে অসাধারণ সুবিধা এবং তৈরি করছে অ্যাপস ডেভেলপাররা। আর এই নান্দনিক অ্যাপসগুলো মোবাইল ভোক্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস কম্পানিগুলো। এদের মধ্যে জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাপস, যেমন- বিগো লাইভ, টিকটক, লাইকি ইত্যাদি। আমার দৃষ্টিতে, মোবাইল ফোনে অ্যাপসটি বিশ্বের সকল সমাজকে বিনোদিত করলেও, অধিকাংশ যুব সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে আ্যাপসটি। গোটা সামাজকে অপসংস্কৃতির আখড়ায় পরিনত করেছে। অ্যাপস ব্যবহারে তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে বিপথগামী হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত নৈতিকতা, সামাজিক, পারিবারিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। তরুণ বা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে যেকোন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। যুব সমাজ সহিংস, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায় এবং নিজেকে জনপ্রিয় তারকা ভাবতে শুরু করে। সস্তা উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে। রাতারাতি সেলিব্রেটি বনে যেতে চায় অনেকে।
মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সহজে তরুণ ও যুবকদের টার্গেট করে লাইভে আসে, চ্যাট করা, বিভিন্ন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরি করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া। কখনোবা তারা সরাসরি লাইভে এসে কুপ্রস্তাব দিয়ে এবং যৌনতার ফাঁদে ফেলে কৌশলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পড়াশুনা, ন্যায় নীতি ভুলে অ্যাপসটির প্রতি অসক্ত হতে থাকে দেশের যুব সমাজ। অ্যাপসটি গ্রাস করে ফেলছে মানুষের জাগ্রত নৈতিক মূল্যবোধগুলোকে।
অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে নান্দনিক উপায়ে নিজের মেধা বিকাশের সুযোগ থাকলেও; অধিকাংশ যুব সমাজ বিশেষ করে বয়সে কিশোর-তরুণ, অথবা মধ্য বয়সীরা উদ্ভটভাবে নিজেকে রাঙিয়ে দেয়। নিজের লুকায়িত যৌলুশ সহভাগিতা করে। ভিনদেশি অপসংস্কৃতিকে অনুসরণ করে পর্ণো টাইপের ভিডিও তৈরি করছেন বিপদগামী কিছু তরুণ। এদিকে স্বল্প বসনা তরুণীরা টিকটকে অশ্লীল ভিডিওতে নাচ, গান ও অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেরা নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে, এমন কি অসামাজিক পাপাচারের নানা ভিডিওগুলো আপলোড করছেন। মাঝেমধ্যে পরিবারে এসব ভিডিও অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা মেলে। চোখের পলকে সোস্যাল মিডিয়ায় এসব ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হচ্ছে।
এর জন্য শুধু বিগো লাইভ, টিকটক, লাইকি অ্যাপস এরাই দায়ী নয়; এর জন্যে ফেইসবুক, বিভিন্ন পর্ণো সাইটও কম দায়ী নয়। ফেইসবুকে ফেইক আইডি খুলে নানা ধরণের অশ্লীল ভিডিও আপলোড করে বিপদগামী করে তুলছে যুব সমাজকে। শুধু তরুণ সমাজ নয়, সমাজের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, ধর্ম যাজক, সন্ন্যাস, ব্রতধারী সকলকে ভিডিওগুলো কমবেশি অসামাজিক কার্যকলাপে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছে। কিছু সোস্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিংয়ের নামে বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও শো অথবা লাইভের মাধ্যমে সরাসরি অফার করছে। এর ফলে দেশে ধর্ষণ, খুন, পরকীয়া এবং বিভিন্ন জঘন্য অসামাজিক কার্যকলাপ ভাইরাসের মতোন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে।
এরই মধ্যে কিছু দেশে যেমন ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ার এসব অ্যাপস ব্যবহার পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অ্যাপগুলোর মধ্যে এক ধরনের শো-অফের বিষয় থাকে, যা তরুণ সমাজকে সহজে ব্লাক মেইল করতে সহায়তা করে। আমাদের বাংলাদেশেও এসব অ্যাপস বন্ধের পাশাপাশি কঠোর আইন প্রণয়ন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। আশার কথা হলো, ইতোমধ্যে বিগো লাইভ, টিকটক, লাইকি অ্যাপসটি বন্ধ/নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী যা প্রশংসার দাবী রাখে (তথ্যসূত্র:বাংলা নিউজ ডট ২৪ কম)। আমিও ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি বিশেষ গুরত্ব দিচ্ছি, ভাবছি; বোধ করি আপনিও একমত হবেন।