গারোদের কাছে বন-জঙ্গল মায়ের মতো। গারোরা ভাতের বিকল্প হিসেবে বন-জঙ্গল থেকে শুধু বন আলু-ই পেয়ে থাকে, তা নয়। বরং বিভিন্ন পুষ্টি ও স্বাদের অনেক শাকসব্জিও পেয়ে থাকে। জঙ্গল থেকে যেগুলো শাক-সব্জি হিসাবে খাওয়া হয় তারমধ্যে- খুমকা/খিমকা, কাকরোল, আপ্পলকা, আগাছি বিথি, আগেনদ্রাক, ফাসিম, বলব্রেত, সেরেংখি, মিসি নাছিল, বেংবং জাসি, সামগল্লক, গোবইরা শাক, কুইড়াকাটা, আদুরাক, খাক্কু বিজাক, সামগলদাক, চংমুরু, চঙ্গিবিরেত, স্থেংখাম্বি, সাম জা.ল্লিক, দো.খুমি, আলত, জিংজত, সমুচ্চেং, দদমী জা.ফা, দাকদিগদি, সামবিথি, দো.জংমা, বলনাগিল/বলনাচিল, দাম্বং ইত্যাদি।
ফলে গারোরা অতি প্রাচীন কাল থেকে তিত বেগুন সব্জি হিসেবে খেতে অভ্যস্ত। গারো ভাষায় তিত বেগুনকে ‘খুমকা’/ ‘খিমকা’ বলে। এ বনজ সব্জি গারোদের কাছে খুবই প্রিয় ও মজাদার সব্জি শুধু তা নয়, এটি বিভিন্ন ভেষজগুণেও ভরপুর।
তিত বেগুন বা খিমকা বাংলাদেশে সর্বত্র এবং বাড়ীর অনাচে কানাচে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। এটিকে চাষাবাদ, বিশেষ কোন পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাছে এর ব্যবহার না থাকলেও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে বেশ চাহিদা রয়েছে। খুবই জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। একে ইংরেজিতে Bitter Eggplant, এবং যার বৈজ্ঞানিক নাম Solanum aethiopicum. সোলানেসি গোত্রে তিত বেগুন ১৩টি প্রজাতির রয়েছে। এর মধ্যে Solanum aethiopicum তিত বেগুনই গারোদের কাছে অতি প্রিয় সব্জি।
এই তিত বেগুন বা খিমকা সব্জি গারোরা বিশেষ করে মুখে রুচি আনা, পেটে বদহজম দূর করা, মানুষের দেহে উচ্চ রক্ত চাপ কমানো, সুগারের মাত্রা ঠিক রাখা ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করে থাকে। খিমকা পাতা, ফল অনেক ক্ষেত্রে ভেষজ ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার হয়। গারোরা খিমকা সব্জিকে মাছ, মাংস ও শুঁটকির সাথে বাঁশের চোঙ্গা বা কলাপাতায় মোড়িয়ে বা সাধারণ রান্নায় হরেক রকমের মুখরোচক রেসিপি তৈরী করে দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে খায়। গারোরা মনে করে এটি রোগপ্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য অতি উত্তম সবজি।
বাংলাদেশে খিমকা/খিমকা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় না। এটি সাধারণত বনে-জঙ্গলে, রাস্তার পাশে ও নদী ঝর্ণার ধারে অযত্নেই হয়ে থাকে। কিন্তু ভারতসহ দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বহুল ব্যবহারের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের খিমকা বা তিত বেগুন চাষ হয়। বৈজ্ঞানিকদের মতে খিমকা বা তিত বেগুনে যেসমস্ত ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে, যেমন–
১) ভিটামিনস এবং মিনারেলগুলির একটি বড় উৎস, ২) পেটের বদহজম দূর করে, ৩) মানুষের দেহে হৃদরোগের উন্নতি করে, ৪) ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে, ৫) মানব দেহের অস্থি, ও স্বাস্থ্য সুস্থ রাখে, ৬) দেহের রক্তশূণ্যতা দূর করে; এবং ৭) মানুষের মস্তিষ্কের ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
আধুনিক বিশ্বায়নের ফলে সকল দেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর জীবন প্রণালী এবং তাদের খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এসেছে। গারোরাও ভিন জাতিগোষ্ঠীর খাবারের সঙ্গেও এখন বেশ পরিচিত। নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশের অঞ্চল ও আবহাওয়াভেদে উপযোগী সব শাকসবজি গারোরা চাষ করে নিজেদের প্রয়োজন মিটায়।
লুই সাংমা, ফ্রান্স
ওয়েভ ডেভেলপার, ব্লগার, আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সার এবং
সাংস্কৃতিক কর্মী।
Ang’aban kimka cha’na gasunika dada ❤️❤️
Oe’ba, iya kimka, apolka aroba a’chikrangni mamantiranko bring-sambring’niko manni cha’ani cha’ade blongen beanna namaha, anga’ban blongen gasunika, mtla jong.